‘৪ কৃষক নেতাকে খুন, ২৬ তারিখে ট্রাক্টর মিছিলে গুলি’, কৃষক আন্দোলন বানচাল করার পরিকল্পনা ফাঁস চক্রীর
ধৃত ওই যুবক বলেন, "আমাদের পরিকল্পনা ছিল ২৬ জানুয়ারি ট্রাক্টর মিছিল শুরু হলে দিল্লি পুলিস যখন বাধা দিতে আসবে, সেই সময় মিছিলের একদম প্রথম সারি থেকে গুলি চালানো হবে। তখন পুলিসও আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালাবে।"
নয়া দিল্লি: সোজা পথে নয়, এবার ঘুরপথেই কৃষক আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টা করছে একদল, এমনটাই দাবি সিংঘু সীমান্তে আন্দোলনকারী কৃষকদের। ২৬ জানুয়ারির ট্রাক্টর মিছিলে গুলি, চার কৃষক নেতাকে খুন-এসবই ছিল পরিকল্পনার অন্তর্গত। শুক্রবার রাতে তাঁরা সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে আটক করে, সেই ব্যক্তির বয়ানেই উঠে এল শান্তিপূর্ণ আন্দোলন পণ্ড করার জন্য চাঞ্চল্যকর নানা পরিকল্পনার তথ্য।
গতকাল সন্ধেবেলায় আন্দোলনকারী কৃষকরা এক সন্দেহজনক যুবককে সিংঘু সীমান্তেই আটক করে। চেপে ধরতেই সে যাবতীয় পরিকল্পনা ফাঁস করে দেয়। ওই যুবক জানায়, ২৬ জানুয়ারি কৃষকদের ট্রাক্টর মিছিলে (Tractor Rally) বিঘ্ন ঘটানোর জন্যই ১০ জনের একটি দলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তিনি ওই দলেরই একজন সদস্য। তাঁর আরও দাবি, এক পুলিসকর্তাই তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। সাংবাদিক বৈঠকে আন্দোলন অশান্তি সৃষ্টি করার পরিকল্পনার বিবরণ দেওয়ার পর তাঁকে হরিয়ানা পুলিস (Haryana Police)-র হাতে তুলে দেন কৃষক নেতারা।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে ধৃত ওই যুবক বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা ছিল ২৬ জানুয়ারি ট্রাক্টর মিছিল শুরু হলে দিল্লি পুলিস যখন বাধা দিতে আসবে, সেই সময় মিছিলের একদম প্রথম সারি থেকে গুলি চালানো হবে। তখন পুলিসও আন্দোলনকারীদের উপর গুলি চালাবে। আমাদের আট-দশজনের যে দল রয়েছে, তাঁরা পিছন থেকে গুলি চালাবে, ফলে পুলিস ভাববে যে কৃষকরাই গুলি চালিয়েছে। যাতে ধরা না পড়ে, সেই কারণে আমাদের দলের অর্ধেক সদস্যরা দিল্লি পুলিসের পোষাকে থাকবে।”
#WATCH | Delhi: Farmers at Singhu border present a person who alleges a plot to shoot four farmer leaders and cause disruption; says there were plans to cause disruption during farmers’ tractor march on Jan 26. pic.twitter.com/FJzikKw2Va
— ANI (@ANI) January 22, 2021
আরও পড়ুন: ‘নিজেকে ধন্য মনে করছি’, সুভাষের মাটিতে পা রাখার আগে বাংলায় টুইট মোদীর
মূল চক্রীর কথা উল্লেখ করে তিনি আরও যোগ করে বলেন, “২৬ তারিখে মিছিলে অশান্তি সৃষ্টি করার আগে ২৪ তারিখ চার কৃষক নেতাকে হত্যা করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে ওই চার নেতার ছবি দেওয়া হয়েছে। রাই থানার স্টেশন ইনচার্জ প্রদীপ সিং আমাদের প্রশিক্ষণ দিতেন। আমরা ওনার মুখ কখনও দেখিনি কারণ আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসার সময় তিনি সবসময় মাস্ক পরে থাকতেন।”
সাংবাদিক বৈঠকে ধৃত যুবকের পাশেই বসে ছিলেন রাকেশ তিকাইত সহ অন্যান্য কৃষক সংগঠনের নেতারা। এক কৃষক নেতা বলেন, “ধৃত যুবক যে চারজন কৃষক নেতাকে খুন করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তাঁদের ছবি দেখে চিনতে পেরেছে। ২৩ জানুয়ারির পর যেকোনও সময়ে এই হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল।”
সোনিপত পুলিসের হাতে তুলে দেওয়ার আগে ওই যুবক আরও জানায়, তাঁদের যে দশজনের দল রয়েছে, তারমধ্যে দু’জন মহিলাও রয়েছে। মূলত ২৬ জানুয়ারির ট্রাক্টর মিছিলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্যই তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল। বাকি সদস্যদের নাম তিনি জানেন না।
যদিও পরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাই পুলিস স্টেশনে স্টেশন ইনচার্জের নাম বিবেক মালিক এবং ওই থানায় প্রদীপ সিং নামক কোনও পুলিসকর্মীও নেই। বিবেক মালিক জানান, তিনি বিগত সাতমাস ধরে এই থানার দায়িত্বে রয়েছেন। গতকাল রাতে ওই যুবকের বিবৃতি শুনে তিনিও চমকে যান।
প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর মিছিল হবে কিনা, তা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে কৃষকদের বিরোধ লেগেই রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লি পুলিসও আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে বিকল্প রাস্তার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কৃষকেরা সেই প্রস্তাব খারিজ করে জানান, তাঁরা দিল্লির আউটার রিং রোডেই ট্রাক্টর মিছিল করবেন। শান্তিপূর্ণ এই মিছিলের কারণে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে কোনও প্রভাব পড়বে না।
এই টানাপোড়েনের মাঝেই ধৃত যুবকের বিস্ফোরক দাবি ও প্রধান চ্ক্রীর খোঁজ না মেলায় মিছিলের ভবিষ্যৎ ঘিরে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে। একইসঙ্গে আন্দোলনকারী কৃষকদের নিরাপত্তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন: আবারও নিষ্ফলা! কেন্দ্র এ বার বল ঠেলল চাষিদের কোর্টে