‘অসংসদীয়’ শব্দে লাগাম, সংসদে নিষিদ্ধ ‘অসত্য’, ‘জুমলেবাজি’, ‘শকুনি’, ‘গদ্দার’ ‘Corrupt’, ‘Coward’

শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির প্রশ্ন, “আমাদের সব শব্দরাশির উৎস সরস্বতী। খারপ, ভাল সব শব্দই তাঁর দুগ্ধরাশি থেকে আগত। সব শব্দই তাঁর। কার অধিকার আছে লাগাম টানার?”

‘অসংসদীয়’ শব্দে লাগাম, সংসদে নিষিদ্ধ ‘অসত্য’, ‘জুমলেবাজি’, ‘শকুনি’, ‘গদ্দার’ ‘Corrupt’, ‘Coward’
TV9 বাংলা গ্রাফিক্স
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 15, 2022 | 11:35 AM

নয়া দিল্লি: অশোক স্তম্ভ বিতর্কের মধ্যেই এবার রাজনৈতিক তরজার নতুন রসদ সংসদ প্রকাশিত শব্দ নির্দেশিকা। সংসদে শব্দে লাগাম! বক্তব্য থেকে বাদ ‘অসংসসদীয়’ শব্দ। ১৮ জুলাই বাদল অধিবেশন শুরুর আগে পুস্তিকা প্রকাশ করে শব্দের তালিকা দিয়ে কেন্দ্র জানিয়ে দিল, ‘গণতন্ত্রের মন্দিরে’ ‘আপত্তিকর’ এবং ‘অসংসদীয়’ শব্দ নিষিদ্ধ। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত পুস্তিকায় অসংসদীয় শব্দের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে, সেখানে রয়েছে হিন্দিসহ একাধিক ইংরেজি শব্দও। বক্তব্য রাখার সময় ব্যবহার করা যাবে না ‘জুমলেবাজি’, ‘বাল বুদ্ধি’, ‘শকুনি’, ‘তানাশাহি’, ‘বিনাশ পুরুষ’, ‘গদ্দার’, ‘দালাল’, ‘বহেরি (কালা, কানে শুনতে পায় না) সরকার’, ‘কালা দিনের’ মতো শব্দ। এমনকি  ‘অসত্য’ — এর মতো প্রচলিত শব্দেও লাগাম টেনেছে কেন্দ্র। ইংরেজি শব্দের নিষিদ্ধ তালিকায় রয়েছে, ‘Ashamed’, ‘Abused’ ‘Corrupt’, ‘Coward’, ‘Criminal’, ‘Crocodile Tears’, ‘Donkey’, ‘Drama’ —  শব্দ। সব মিলিয়ে নিষিদ্ধ নির্দেশিকায় শব্দসংখ্যা প্রায় ৫০।

প্রসঙ্গত, সংসদীয় অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে অতীতে এমন অনেক পুস্তিকাই প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে ক্ষমতাসীন সরকার নানা সময়ে পুস্তিকার মাধ্যমে সংসদীয় এবং অসংসদীয় শব্দমালার সংকলন প্রকাশ করেছে। তবে আসন্ন বাদল অধিবেশনের আগে মোদী সরকার দ্বারা প্রকাশিত পুস্তিকায় নিষিদ্ধ শব্দমালায় রয়েছে চমক। যেমন ‘CORRUPT’, যার আভিধানিক বাংলা দুর্নীতি। বিরোধী আসনে থাকাকালীন এই বিজেপিই  2G কেলেঙ্কারি, কয়লা কেলেঙ্কারি, আদর্শ স্ক্যাম সহ একাধিক ইস্যুতে কংগ্রেসকে দুর্নীতির অভিযোগে বিদ্ধ করে কাঠগড়ায় তুলেছে। সংসদের মহাফেজখানায় যা আজও নথিবদ্ধ। অসত্যের মতো সাধারণ শব্দেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরোধিতার সুর সপ্তমে নিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে টুইট করেছেন  রাহুল গান্ধী। ‘নতুন ভারতের নতুন অভিধান’, কটাক্ষ রাহুলের।

 

“বক্তৃতা দেওয়ার সময় লজ্জাজনক, বিশ্বাসঘাতকতা, দুর্নীতিবাজের মতো শব্দ ব্যবহার করা যাবে না। অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধী সাংসদদের উপর কালা আইন বলবৎ করা হল”, টুইট তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের। কেন্দ্র বিরোধী আক্রমণের ধার কমাতেই কেন্দ্রের এই প্রয়াস, অভিযোগ বিরোধীদের।

পাল্টা বাংলার বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের যুক্তি, “যাদের শুদ্ধ বলার মতো শব্দভাণ্ডার নেই তারাই অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এটা আবারও করতে হচ্ছে। অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করে সংসদীয় গড়িমা বিনষ্ট করা যাবে না। অসংসদীয় শব্দ বললে পাবলিক মিটিংয়ে হাততালি পড়ে, কিন্তু সেটা সংসদের জন্য নয়। অতীতে অসংসদীয় কথা বলে অনেকে সাসপেন্ড হয়েছেন। এমন অপ্রীতিকর ঘটনা যেন আর না হয়, তাই এমনটা করা হয়েছে।”

যদিও বিতর্ক শুরু হতেই আসরে নামেন খোদ লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা। সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, “কোনও শব্দেই কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। সংসদ সদস্যরা স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত জানাতে পারেন। তবে সংসদীয় পরম্পরা মেনেই বক্তব্য রাখা বাঞ্ছনীয়।”

সংসদের ভাষা নির্দেশিকা নিয়ে ভাষাবিদ পবিত্র সরকারের প্রতিক্রিয়া, “বিরোধীদের সরকারের সমালোচনা করার অধিকার গণতন্ত্রে স্বীকৃত। সমালোচনার ভাষার মধ্যে ব্যঙ্গ থাকবে, আক্রমণ থাকবে। শুধুমাত্র থাকবে না নিম্ন রুচি।  কোনটা শোভন, কোনটা অশোভন, কোনটা সংসদীয় আর কোনটা অসংসদীয় এটা স্থির করে দিক আদালত।”  উক্ত বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ দাবি করছেন পবিত্রবাবু।

শিক্ষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ির প্রশ্ন, “আমার তো বাক স্বাধীনতা রয়েছে। শব্দগুলো হঠাৎ করে কী দোষ করে ফেলল? আমাদের সব শব্দরাশির উৎস সরস্বতী। খারাপ, ভাল সব শব্দই তাঁর দুগ্ধরাশি থেকে আগত।  সব শব্দই তাঁর। কার অধিকার আছে লাগাম টানার?”