‘আফগানিস্তানের হাল দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত’, মুফতির মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক, সমালোচনা কং-বিজেপির

দলীয় অনুষ্ঠানে মুফতি রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানান, যে কোনও পরিস্থিতিতেই  তারা যেন হাতে অস্ত্র না তুলে নেন। কারণ বন্দুক বা পাথর ছুঁড়ে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। 

'আফগানিস্তানের হাল দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত', মুফতির মন্তব্যে তুমুল বিতর্ক, সমালোচনা কং-বিজেপির
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 22, 2021 | 1:31 PM

জম্মু: আফগানিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গেই জম্মু-কাশ্মীরের তুলনা টানলেন পিডিপি প্রেসিডেন্ট মেহবুবা মুফতি। কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে বললেন, “আফগানিস্তানের হাল দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত, যেখানে তালিবানরা গোটা দেশের ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে এবং আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশকেও পালাতে বাধ্য করেছে।” মুফতির এই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক, সমালোচনায় সরব হয়েছে বিজেপি থেকে কংগ্রেস।

২০১৯ সালে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেওয়ার প্রসঙ্গেই ফের একবার সরব হয়েছেন কাশ্মীরী নেত্রী। আফগানিস্তানে তালিবানি দখল নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের এভাবে পরীক্ষা নিলে কেন্দ্রেরই বিপদ। প্রতিবেশী দেশে কী হচ্ছে, তা দেখে শিক্ষা নেওয়া উচিত সরকারের। আমেরিকার মতো শক্তিশালী দেশকেও নিজেদের ব্য়াগ গুজিয়ে আফগানিস্তান ছেড়ে পালাতে হয়েছে। আপনাদের কাছে এখনও সুযোগ রয়েছে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে আলোচনা শুরু করার। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী আলোচনার মাধ্যমে নিজের ভুল শুধরে নিয়েছিলেন, আপনারাও বেআইনিভাবে জম্মু-কাশ্মীরের পরিচিতি যেভাবে কেড়ে নিয়েছেন এবং জম্মু-কাশ্মীরকে দুইভাগে ভাগ করে দিয়েছেন, তা শুধরে নিন। নাহলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।”

দক্ষিণ কাশ্মীরের কুলগাম জেলায় একটি দলীয় অনুষ্ঠানে মুফতি রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কাছে অনুরোধ জানান, যে কোনও পরিস্থিতিতেই  তারা যেন হাতে অস্ত্র না তুলে নেন। কারণ বন্দুক বা পাথর ছুঁড়ে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না।  এই প্রসঙ্গেও আফগানিস্তানের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নিলেও ওরাও এখন বলছে অস্ত্রের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। গোটা বিশ্বের নজর এখন আফগানিস্তান ও তালিবানের উপর। তারা কীরকম ব্যবহার করছে, আগের মতোই কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে নাকি সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার, তা গোটা বিশ্ব দেখছে।”

একই ভাবে জম্মু-কাশ্মীরের উপরও সকলের নজর থাকে বলে উল্লেখ করেন পিডিপি নেত্রী। নিজেদের অধিকার বা দাবি পূরণ করার জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়া বা নিজেদের প্রাণ ত্যাগ করা কোনও সমাধান নয় বলেই মনে করেন তিনি। এ দিকে, বিজেপির বিরুদ্ধে দেশভাগের অভিযোগ এনে কংগ্রেস সরকারই ভাল ছিল বলেও দাবি করেন মুফতি। তিনি বলেন, “ভারত বিভিন্ন ধর্ম, জাতি ও সম্প্রদায়ের দেশ। কংগ্রেস দেশকে একজোট করে রেখে রক্ষা করেছিল। কিন্তু বিগত পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে বিজেপি যা করছে, তা দেশভাগের চেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়। ধর্মের নামে সাধারণ মানুষকে ভাগ করার চেষ্টা করছে বিজেপি। বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার শর্তেই ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিল জম্মু-কাশ্মীর। যদি ওই সময় বিজেপি ক্ষমতায় থাকত, তবে কখনওই ভারতের অংশ হত না জম্মু-কাশ্মীর।”

এদিকে, পিডিপি নেত্রীর এই মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বিজেপি সভাপতি রবীন্দর রাইনা। তিনি বলেন, “উনি ভুল ধারণায় বিশ্বাস করে রয়েছেন। ভারত শক্তিশালী দেশ এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতো নন, যিনি সেনা প্রত্যহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তালিবানই হোক বা আল কায়েদা, লস্কর-ই-তৈবা কিংবা হিজবুল, যারাই দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করবে, তাদেরই খতম করে দেওয়া হবে।”

জম্মু-কাশ্মীরের মানুষদের ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন মেহবুবা মুফতি, এই অভিযোগ এনে তিনি বলেন, “জম্মু-কাশ্মীরের মানুষেরাও দেশপ্রেমী এবং দেশের জাতীয় পতাকাকে সবসময় শীর্ষে রেখেছেন তাঁরা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে তারা পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনীকেও সহায়তা করে এসেছে।” কাশ্মীরের মানুষের কাছ থেকে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েই মুফতি এই ধরনের কথা বলছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অন্যদিকে কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়বীর শেরগিলও পিডিপি নেত্রীর মন্তব্যের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “মেহবুবা মুফতির মন্তব্য যথেষ্ট উসকানিমূলক। শান্তি কামনার বদলে যদি শাসকদের সমালোচনা করার জন্য় আপনাকে দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হুমকি দিতে হয় এবং হিংসার ভয় দেখাতে হয়, তবে আপনি নিশ্চিতভাবে ভুল পথে হাঁটছেন, যা অত্যন্ত দুঃখ ও লজ্জাজনক।” আরও পড়ুন: ‘২০ বছরের সবকিছু’ ফেলে এসেছেন দেশে, ভারতে পৌঁছে চোখের জল বাধ মানছে না আফগান নেতার