বিশ্বভারতীর সমাবর্তন: যুবশক্তির হাতেই দেশের অখণ্ডতা রক্ষার দায়িত্ব সঁপলেন নমো

রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেই "আলো আমার আলো ওগো, আলোয় ভুবন ভরা"- দুই কলি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। আত্মনির্ভর ভারত গড়তে শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, একথাও জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

বিশ্বভারতীর সমাবর্তন: যুবশক্তির হাতেই দেশের অখণ্ডতা রক্ষার দায়িত্ব সঁপলেন নমো
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী। ছবি:ANI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 19, 2021 | 2:22 PM

শান্তিনিকেতন: বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে যুবশক্তির হাতেই দেশের অখণ্ডতা রক্ষার দায়িত্বভার সঁপে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুক্রবার বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Visva Bharati University)-র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আচার্য নরেন্দ্র মোদী। তবে সশরীরে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পেরে তিনি দুঃখিত বলেও জানান।

চলতি বছরে করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠানসূচিতে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছিল। এই প্রথমবার পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছাড়াই সমাবর্তন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। পড়ুয়াদের মতো প্রধানমন্ত্রীও ভার্চুয়াল মাধ্যমেই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের ভাষণের পরই বক্তব্য রাখেন তিনি। প্রথমেই তিনি বলেন, “রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে বিশ্বভারতী গড়ে তুলেছেন, তার অংশ হতে পেরে আমি অত্যন্ত খুশি ও গর্বিত। সশরীরে যোগ দিতে পারলে আরও খুশি হতাম। পড়ুয়াদের বলি, আপনাদের জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে সকলকে শুভকামনা জানাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আজ শিবাজির জন্মদিন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও শিবাজির বীরত্বকে উৎসর্গ করে একটি কবিতা লিখেছিলেন।” পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের অখণ্ডতাকে বজায় রাখতে হবে। বিশ্বভারতী কেবল সাধারণ একটি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এখানের পড়ুয়ারা গোটা বিশ্বেরই অংশ। রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন এখানে যাঁরা পড়তে আসবেন, তাঁরা গোটা দুনিয়ার কাছে ভারতের মূল্যবোধকে তুলে ধরবে। এটা কেবল জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার স্থান নয়, আপনারা যখন প্রতি বুধবার ক্যাম্পাসে উপাসনার জন্য একত্রিত হন, তখন নিজেদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পান। কবিগুরুর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যখন অংশ নেন, তখনও নিজেদের সঙ্গে একাত্ব হওয়ার সুযোগ পান। রবীন্দ্রনাথ দেশকে একত্রিত করার যে ভাবনা ভেবেছিলেন, সেই অখণ্ডতার মন্ত্র মেনেই আমাদের চলতে হবে।”

আরও পড়ুন: প্যাংগংয়ে সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ, পুরনো অবস্থানে ফিরল ভারত-চিনের সেনাবাহিনী

রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করেই “আলো আমার আলো ওগো, আলোয় ভুবন ভরা”-র দুই কলি উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। “বাংলার মাটি বাংলার জল”, “হে মোর চিত্ত, পূণ্যতীর্থে” কবিতার দু’লাইনও আওড়ালেন তিনি। রবীন্দ্রনাথের কথা ধরেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গুরুদেব সমাজের সকল শ্রেণির মানুষকে মিলিত হয়ে সমাজ গঠনের বার্তা দিয়েছিলেন। বাংলাকে বিশ্বশিক্ষার প্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলার লক্ষ্যেই বিশ্বভারতী তৈরি করেছিলেন তিনি। বিশ্বভারতী জ্ঞানের উন্মুক্ত সমুদ্র।”

পড়ুয়াদের দায়িত্ববান হওয়ার বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, শেখার কোনও শেষ নেই। তবে জ্ঞান ও ক্ষমতার সঙ্গে দায়িত্বও জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের রবীন্দ্র দর্শন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে, সেই পরম্পরাকে বজায় রাখতে হবে। এর জন্য সংযমী ও ধৈর্যশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পড়ুয়াদের বলেন, ‘নেশন ফার্স্ট’ ধারণা নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে। যদি আপনার উদ্দেশ্যে ভাল হয়, তবে সাফল্য মিলবেই। জীবনে সাফল্যের উপরই সবকিছু নির্ভর করে না। ভারতের যুবশক্তির উপর আমার সম্পূর্ণ ভরসা রয়েছে। ভারতের যুবদের উপর আমার ভরসা রয়েছে। তাঁদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার সম্পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে, তাই আমি যুবশক্তিদের নিয়ে চিন্তা করছি না। তবে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি সবসময় তাঁদের পাশে থাকব।

আত্মনির্ভর ভারত গড়তে শিক্ষাব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, একথাও জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জানান, উদ্ভাবনী শক্তির উপর জোর দিতে এইবছর বাজেটেও গবেষণার জন্য ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করার কথা বলা হয়েছে। ক্লাস ৬ থেকেই ছাত্রীদের জন্য কোডিং সহ এমন নানা কারিগরী শিক্ষার সুযোগের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা আগে মহিলাদের শিখতে দেওয়া হত না। লিঙ্গ নিরপেক্ষ শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। বাংলার শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতির প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলা এক সময় শিক্ষাব্যবস্থার পীঠস্থান ছিল। আধুনিক ভারতও বাংলার দিকে তাকিয়ে থাকে। ২০০ বছর আগে ইংরেজরা জোর করে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়। তার আগেও ভারতের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত ছিল। ১৮৩০ সালে কেবল বাংলাতেই এক লক্ষেরও বেশি গ্রামীণ বিদ্যালয় ছিল। রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর মাধ্যমে ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আত্মনির্ভর বানিয়েছিলেন।”

আরও পড়ুন: তুষার ঝড়ে বিপর্যস্ত পর্যটকদের গাড়ি, ত্রাতার ভূমিকায় ভারতীয় সেনা