করোনা আক্রান্ত একাধিক মন্ত্রী, সংক্রমণে রাশ টানতে ‘লকডাউন’ জারি মহারাষ্ট্রের তিন জেলায়
বৃহন্মুম্বই পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, প্রকাশ্যে মাস্ক ছাড়া কেউ ধরা পড়লেই তাঁকে ২০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। এছাড়া একই বাড়ি বা আবাসনে পাঁচজনের বেশি করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিললে তা সিল করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
মুম্বই: রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়তেই সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে (Uddhav Thackeray)। রাজ্যের বাসিন্দাদের বলেছিলেন, “আপনারা লকডাউন চান নাকি নিয়মবিধি মেনে স্বাধীনভাবে ঘুরতে চান, সেই সিদ্ধান্ত আপনাদের উপরই।” মহারাষ্ট্রবাসী তাতে সতর্ক হয়েছিলেন কিনা সন্দেহ, শুক্রবার মোট আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ হাজারের গণ্ডি পার করতেই তিনটি জেলায় কার্যত “লকডাউন” (Lockdown) জারি করল রাজ্য প্রশাসন। অমরাবতী, যাভতমল ও আকোলা জেলাকে কনটেইনমেন্ট জ়োন (Containment Zone) হিসাবে ঘোষণা করা হল। জারি হল লকডাউনের যাবতীয় নিয়মবিধি।
গতবছর করোনা সংক্রমণের শুরুতে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মহারাষ্ট্র (Maharashtra)। প্রতিনিয়ত রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লাখের গণ্ডি পার করছিল। মৃতের সংখ্যাও হাজার পার করছিল। দেশজুড়ে করোনা সংক্রমণ হ্রাস পেতেই কিছুটা স্বস্তি পেয়েছিল মহারাষ্ট্র। কিন্তু চলতি মাসের শুরু থেকেই ফের করোনার সূচক উর্ধ্বমুখী হয়। এক সপ্তাহ ধরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা চার হাজারের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় সে রাজ্যে মোট ৫৪২৭ জন করোনা আক্রান্ত হতেই আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে ও উপমুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার। এরপরই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে তিন জেলায় লকডাউন ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেন রাজ্য প্রশাসন।
যাভতমলে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সর্বাধিক হওয়ায় সেখানে আগামী দশ দিনের জন্য “লকডাউন” জারি থাকবে। আগামী ২৮ তারিখ অবধি সেখানে সমস্ত স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, বিয়ের অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিতের সংখ্যা ফের কমিয়ে ৫০ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, শনিবার রাত আটটা থেকে সোমবার সকাল সাতটা অবধি লকডাউন জারি থাকবে অমরাবতী জেলায়। ভিড় এড়াতে বন্ধ থাকবে সমস্ত বাজারও। আকোলা জেলাতেও একইভাবে জনসমাগমে রাশ টানা হয়েছে। তিন জেলাতেই কেবল জরুরি পরিষেবায় ছাড় দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীর সমাবর্তন: যুবশক্তির হাতেই দেশের অখণ্ডতা রক্ষার দায়িত্ব সঁপলেন নমো
কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী, কোনও রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করতে হলে প্রথমে কেন্দ্রের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি না নেওয়ায় নির্দেশিকায় লকডাউন শব্দটি কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। তিনটি জেলাকেই কনটেইনমেন্ট জ়োন হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে, তবে জারি রাখা হয়েছে লকডাউনের নিয়মগুলিই।
লকডাউন ছাড়াও বৃহন্মুম্বই পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, প্রকাশ্যে মাস্ক ছাড়া কেউ ধরা পড়লেই তাঁকে ২০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। যেকোনও গণপরিবহন থেকে শুরু করে কর্মস্থল, সবজায়গাতেই মাস্ক পড়া বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে বলেছিলেন, “ভিড় এড়াতে রেস্তরাঁ-ক্লাবগুলির সময়সীমা বাড়ালেও নিয়মবিধি মানা হচ্ছে না।” নজরদারি চালাতে পুরসভার আধিকারিকদের রেস্তরাঁ, ক্লাব ও বিয়েবাড়িগুলিতে আচমকা হানা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর সেই নির্দেশ মেনেই প্রায়সই নানা জায়গায় হানা দেওয়া হতে পারে। এছাড়া একই বাড়ি বা আবাসনে পাঁচজনের বেশি করোনা আক্রান্তের খোঁজ মিললে তা সিল করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
এদিকে, করোনা আক্রান্ত হয়েছেন মহারাষ্ট্রের একাধিক মন্ত্রী-বিধায়ক। গতকালই রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপে (Rajesh Tope) টুইট করে জানান, তিনি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এরপরই জয়ন্ত পাটিল, রক্ষা খাড়সে, একনাথ খাড়সে, ওমপ্রকাশ বাবারাও কাদু ও রাজেন্দ্র শিংগলেও জানান তাঁরা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।
রাজ্যমন্ত্রী ওমপ্রকাশ বাবারাও কাদু (Omprakash Babarao Kadu) ওরফে বাচ্চু কাদু আগেও একবার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। গতকাল তিনি টুইট করে জানান, ফের করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। বিগত কয়েকদিনে যাঁরা তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন, তাঁরা যেন পরীক্ষা নিজেদের করোনা পরীক্ষা করান। ক্যাবিনেট মন্ত্রী জয়ন্ত পাটিল (Jayant R Patil)-ও জানান, করোনা আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। তবে আপাতত সুস্থই রয়েছেন এবং যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছেন। নেগেটিভ রিপোর্ট না পাওয়া অবধি তিনি ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমেই কাজ করবেন বলে জানিয়েছেন।
I have tested COVID positive.
Whilst I am doing fine, I am taking appropriate medical advice and hope to recover soon. I shall be undertaking my duties via video-conference.
I request those who have come in contact with me recently to be observant and self-isolate.?
— Jayant Patil (@Jayant_R_Patil) February 18, 2021
এনসিপি নেতা একনাথ খাড়সে (Eknath Khadse) এবং তাঁর পুত্রবধূ তথা বিজেপি সাংসদ রক্ষা খাড়সে (Raksha Khadse)-ও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রাজেন্দ্র শিংগলে (Rajendra Shingne)-ও টুইট করে নিজের করোনা আক্রান্ত হওয়ার কথা জানান।
Please note that it would not be possible for me to be present at NCP Office, Mumbai tomorrow for the ‘Janata Darbar’ which is scheduled for every Thursday as I have tested positive for #COVID19. Citizens kindly take a note of the same.
— Dr.Rajendra Shingne (@DrShingnespeaks) February 17, 2021
আরও পড়ুন: প্যাংগংয়ে সেনা প্রত্যাহার সম্পূর্ণ, পুরনো অবস্থানে ফিরল ভারত-চিনের সেনাবাহিনী