Narendra Modi: এইভাবেই ভারতের অপ্রতিরোধ্য উত্থান, এক দশকের কারনামা শোনালেন মোদী
Narendra Modi: ভোটের মুখে নিউজ়উইকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এল মোদী জমানার বিগত এক দশকের সাফল্যের কথা। উঠে এল রাম মন্দিরের কথা, দেশের গণতন্ত্র ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কথা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবেশ, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে বিল্পবের কথা, অর্থনীতির বিকাশের কথা, দেশের মহিলাদের জীবনযাত্রার মানের কথা থেকে আরও অনেক প্রসঙ্গ। পাকিস্তান ও চিনের প্রসঙ্গে মোদীর ভাবনার কথাও উঠে এল নিউজ়উইককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে।
নয়া দিল্লি: লোকসভা ভোটের মুখে সুপার কনফিডেন্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তৃতীয় বার সরকার গঠনের জন্য আত্মবিশ্বাসী বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এবারের ভোট আরও বেশি আসনে, আরও বড় ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করতে চাইছে বিজেপি। টার্গেট ৪০০ পার করার। এবার ভোটের মুখে নিউজ়উইকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এল মোদী জমানার বিগত এক দশকের সাফল্যের কথা। উঠে এল রাম মন্দিরের কথা, দেশের গণতন্ত্র ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার কথা, পরিকাঠামোগত উন্নয়ন, পরিবেশ, ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমে বিল্পবের কথা, অর্থনীতির বিকাশের কথা, দেশের মহিলাদের জীবনযাত্রার মানের কথা থেকে আরও অনেক প্রসঙ্গ। পাকিস্তান ও চিনের প্রসঙ্গে মোদীর ভাবনার কথাও উঠে এল নিউজ়উইককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে।
আসন্ন লোকসভা ভোট প্রসঙ্গে
প্রায় ৯০ মিনিটের আলাপচারিতায় উঠে এল মোদী সরকারের মূল মন্ত্র ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস’-এর কথা। মোদীর কথায়, গত এক দশকে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতি পূরণের এক দুর্দান্ত ট্র্যাক রেকর্ড তৈরি হয়েছে। তাঁর মতে, এটা দেশবাসীর কাছে একটি বড় বিষয়। কারণ, এর আগে দেশের আমজনতা এভাবে প্রতিশ্রুতি পূরণ দেখতে অভ্যস্ত ছিল না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের মনে এই বিশ্বাসটা তৈরি হয়েছে, যদি কোনও কর্মসূচির সুফল অন্য কেউ পায়, তবে সেই সুফল তাঁরাও পাবেন। দেশবাসী দেখেছে কীভাবে ভারত বিশ্বের একাদশতম অর্থনীতির দেশ থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। এখন গোটা দেশবাসীর বিশ্বাস ও লক্ষ্য, ভারত খুব তাড়াতাড়ি তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে।’ গোটা বিশ্বের রাজনৈতিক ইতিহাসের কথা তুলে ধরে মোদী বলেন, ‘দ্বিতীয় টার্মের শেষের দিকে থাকে, জনপ্রিয় সরকারও সমর্থন হারাতে শুরু করে। বিশ্বব্য়াপী গত কয়েক বছরে একাধিক দেশে সরকারের প্রতি অসন্তোষ বেড়েছে। কিন্তু ভারত এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী, এখানে আমাদের সরকারের প্রতি জনসমর্থন ক্রমেই বেড়ে চলছে।’
গণতন্ত্র ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে
ভারত হল বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের দেশ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, ‘শুধুমাত্র সংবিধানে আছে বলেই গণতন্ত্র নয়, এই গণতন্ত্র আমাদের ভারতীয়দের জিনে রয়েছে। ভারত হল গণতন্ত্রের জননী।’ কথা প্রসঙ্গে উঠে আসে ভারতের সুপ্রাচীন ইতিহাসে বর্ণিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথাও। উদাহরণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী তামিলনাড়ুর উত্তরমেরুর কথা বলেন। যেখানে ১১০০-১২০০ বছর আগে ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় পাওয়া যায়। উঠে আসা বিভিন্ন বইয়ের কথা, যেখানে রাজনৈতিক কাজকর্ম চলত এক উদারমনস্ক পরামর্শমণ্ডলীর মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ হিসেবে ২০১৯ সালের ভোটে অংশ নিয়েছিলেন ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ। আগামী কিছুদিনের মধ্যে ৯৭ কোটিরও বেশি ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। গোটা দেশে ১০ লাখেরও বেশি ভোটকেন্দ্র করা হবে।’ নির্বাচনে ভোটারদের ক্রমবর্ধমান এই অংশগ্রহণই গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের বিশ্বাসের সবথেকে বড় সার্টিফিকেট বলে মনে করছেন মোদী।
পাশাপাশি উঠে আসে দেশের সংবাদমাধ্যমের ভূমিকার কথাও। মোদীর কথায়, ‘গণতন্ত্রকে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য দরকার প্রতিক্রিয়া। আর সেক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশের সংবাদমাধ্যম। ভারতে প্রায় দেড় লাখ রেজিস্টার্ড সংবাদপত্র ও শ’য়ে শ’য়ে খবরের চ্যানেল রয়েছে।’ একইসঙ্গে মোদী এও জানান যে দেশের মধ্যে এবং পশ্চিমি দেশগুলিতে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা দেশবাসীর ভাবনার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন। মোদীর কথায়, ‘এই ব্যক্তিরা নিজেদের ইকো চেম্বারে বসে এক ভিন্ন ধারণা নিয়ে রয়েছেন। তাঁরা দাবি করেন দেশে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে, কিন্তু এসব বলে মানুষের সঙ্গে নিজেদের বিচ্ছিন্নতাতে আরও বেশি করে তুলে ধরেন এঁরা।’
পরিকাঠামোগত উন্নয়ন ও পরিবেশ প্রসঙ্গে
নিউজ়উইককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মোদী তুলে ধরেন গত এক দশকে কীভাবে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে দেশের পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে। জাতীয় সড়ক সংযোগ ৬০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ২০১৪ সালে ছিল ৯১ হাজার ২৮৭ কিলোমিটার। সেখান থেকে বেড়ে ২০২৩ সালে হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১৪৫ কিলোমিটার। বিমানবন্দরের সঙ্গে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে ৭৪টা বিমানবন্দর ছিল, সেখান থেকে বেড়ে ২০২৪ সালে ১৫০টি হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ বন্দে ভারত ট্রেন চালু করা হয়েছে। দেশবাসীর বিমান পরিষেবায় আরও স্বাচ্ছন্দ্য আনতে উড়ান প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এসব তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি মোদী বলেন, ‘শহরাঞ্চলে পরিবহণ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত ও আরামদায়ক করতে মেট্রো লাইনের সম্প্রসারণের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। মালগাড়ির জন্য ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোর তৈরি করা হয়েছে। দেশের উড়ান সংস্থাগুলির সম্প্রতি এক হাজারেরও বেশি বিমানের বরাত দিয়েছে। এর থেকেই বোঝা যায় বিমান পরিষেবার ক্ষেত্রে পরিকাঠামোগত কতটা উন্নয়ন হয়েছে।’
এই বিশাল কর্মযজ্ঞ চলতেও একইভাবে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলাতেও ভারত দারুণ কাজ করেছে, সেকথাও তুলে ধরেন মোদী। উদাহরণ হিসেবে, রুফটপ সোলার প্রোগ্রামের মাধ্যমে দেশের ১ কোটি মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, কৃষকদের চাষের জমির জন্য সোলার পাম্প, এনার্জি এফিশিয়েন্সি বাল্ব… ইত্যাদি বিভিন্ন যুগান্তকারী পদক্ষেপের কথা উঠে আসে মোদীর বক্তব্যে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, ‘২০১৪ সাল থেকে ভারত পুনর্নবীকরণ শক্তিতে ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করছে। ২০১৪ সালে দেশে সৌর শক্তি ছিল মাত্র ২ হাজার ৮২০ মেগাওয়াট। সেখান থেকে বেড়ে এখন হয়েছে ৭২ হাজার মেগাওয়াট।’ দেশজুড়ে বৈদ্যুতিন গাড়ির বহুল প্রচলনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।
চিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রশ্নে
প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, ভারত হল গণতান্ত্রিক রাজনীতির দেশ এবং গোটা বিশ্বের কাছে আর্থিক বিকাশের এক ইঞ্জিন। স্বাভাবিকভাবেই ভারত চাইছে সাপ্লাই চেনে বৈচিত্র আনতে। মোদী বলেন, আমরা এক রূপান্তরমুখী অর্থনৈতিক সংস্কার করেছি।’ উদাহরণ হিসেবে, কর্পোরেট ট্যাক্স কমানো, জিএসটি, দেউলিয়া বিধি, শ্রম আইনের সংস্কার ও এফডিআই নিয়মে শিথিল করার কথাও বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘এর ফলে দেশে ব্যবসায়িক ক্ষেত্র অনেক সহজ হয়েছে এবং উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে।’
ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম ও ইউপিআই পরিষেবা
ইউপিআই সিস্টেম থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ও শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। প্রথমত, প্রযুক্তি সবার জন্য় উন্মুক্ত ও নিরাপদ হওয়া দরকার। দ্বিতীয়ত, প্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণ প্রয়োজন। তৃতীয়ত, প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষ যে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারবে, সেটা অনুধাবন করা। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, ‘ইউপিআই পরিষেবা হল ভারতীয় উদ্ভাবনী ভাবনার শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আমার কাছে ইউপিআই হল এমন একটি প্রযুক্তি, য়া আর্থিক বাধা থেকে শুরু করে ভৌগোলিক দূরত্ব… এমন অনেক প্রতিবন্ধকতাকে কাটিয়ে উঠতে পারে।’
ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, শিখ, জৈন… এমনকী পার্সিদের মতো ক্ষুদ্র-সংখ্যালঘুরাও ভারতে সুখে-শান্তিতে বাস করছেন। ভারতে প্রথমবারের মতো, আমাদের সরকারের আমলেই প্রত্যেকের জন্য সরকারি প্রকল্পের ক্ষেত্রে কাজ করেছে। এখন প্রকল্পগুলি আর কোনও একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা ভৌগোলিক জায়গার মধ্যে সীমিত নেই। এখন প্রকল্পগুলি সবার কথা ভেবে বানানো হয়েছে, যাতে কোথাও কোনও বৈষম্য না থাকে। বাড়ি, টয়লেট, পানীয় জলের সংযোগ বা রান্নার গ্যাসের মতো সুযোগ-সুবিধা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিমা… প্রতিটি পরিষেবা কোনও ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে প্রত্যেকের কাছে পৌঁছে গিয়েছে।’
দেশে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রসঙ্গে
মোদী জমানায় এক দুর্দান্ত সাফল্য দেখা গিয়েছে নারী ক্ষমতায়নে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘মহিলারা আজ ভারতের উন্নয়নগাঁথার একেবারে সামনের সারিতে। আমরা দেশের সংসদ ভবনে ও রাজ্য বিধানসভাগুলিতে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে আইন পাশ করেছি। আসন্ন নির্বাচনে দেশে নতুন ভোটারদের ১৫ শতাংশেরও বেশি মহিলা। মাতৃত্বকালীন মৃত্যুর হার ২০১৪ সালে ছিল ১৩০। ২০২০ সালে তা ৯৭-এ নেমে এসেছে। মহিলাদের পুষ্টিতেও অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে।’ বিশ্বের মধ্যে সবথেকে প্রগতিশীল মাতৃত্বকালীন সুবিধার আইন এই দেশে রয়েছে বলেও জানান মোদী। যেখানে ২৬ সপ্তাহের পূর্ণ বেতন ছুটি রয়েছে, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দেশের সশস্ত্র বাহিনীতেও যে মহিলাদের যোগদান আগের তুলনায় বেড়েছে সেকথাও তুলে ধরেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উঠে আসে দেশের গরিব মহিলাদের জন্য ঋণের সুবিধার কথাও।
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘নমো ড্রোন দিদি স্কিমের মতো উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলির কারণে লক্ষ লক্ষ মহিলা উপকৃত হচ্ছেন। এর মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় মহিলারা ড্রোন অপারেটর হয়ে উঠবেন। পাশাপাশি লাখপতি দিদি প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির প্রায় ৩ কোটি মহিলা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন।’ শুধু তাই নয়, দেশের পাইলটদের মধ্যে যে ১৫ শতাংশ মহিলা এবং এই পরিসংখ্যান যে গোটা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ, সেই কথাও জানান তিনি।
রাম মন্দিরের প্রসঙ্গ
চলতি বছরের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হাত ধরে উদ্বোধন হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত অযোধ্যা রাম মন্দিরের। গোটা দেশজুড়ে পালিত হয়েছে অকাল দীপাবলি। সেই প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘গোটা দেশের চেতনার মধ্যে ভগবান রাম রয়েছেন। তাঁর জীবন ও চিন্তা থেকে আমরা মূল্যবোধের শিক্ষা পাই। রামলালার অযোধ্য়ায় ফেরা গোটা দেশের ঐক্যের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল। যখন আমাকে এই প্রাণ প্রতিষ্ঠায় অংশ নিতে বলা হয়েছিল, আমি মনে মনে জানতাম যে আমি গোটা দেশবাসীর প্রতিনিধিত্ব করব। যাঁরা রামলালার ফেরা দেখার জন্য বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষায় ছিলেন।’ সঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান গোটা দেশকে একত্রিত করেছিল, অকাল দীপাবলির মতো। রাম জ্যোতির আলোয় আলোকিত হয়েছিল প্রতিটি বাড়ি।’
জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহার প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরে গেলেই বোঝা যাবে, সেখানে কী ব্য়াপক ইতিবাচক বদল এসেছে। আমি গত মাসে জম্মু ও কাশ্মীর গিয়েছিলাম। এই প্রথমবারের মতো, সেখানকার আমজনতা একটি নতুন আশা দেখতে শুরু করেছেন। উন্নয়ন, সুশাসন ও সাধারণ মানুষের ক্ষমতায়নকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।’ পরিসংখ্যান তুলে ধরে মোদী জানান, ২০২৩ সালে ২ কোটি ১০ লাখেরও বেশি পর্যটক জম্মু ও কাশ্মীরে গিয়েছেন। সেখানে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। বনধ, পাথর ছোঁড়ার ঘটনা… য এককালে স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করেছিল, সেসব এখন অতীত হয়েছে কাশ্মীরে। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরের তরুণ প্রজন্ম খেলাধুলোর প্রতি আগ্রহী হচ্ছে, সেটাকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিচ্ছে। অনুচ্ছেদ ৩৭০ প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরে জি-২০র বৈঠক, ফর্মুলা ৪ রেসিং ইভেন্ট, মিস ওয়ার্ল্ডের মতো বড় ইভেন্ট হয়েছে, সেকথাও জানালেন মোদী।
চিন ও কোয়াড প্রসঙ্গে
পাঁচটি দেশের আন্তর্জাতিক একটি মঞ্চ হল কোয়াড। ভারত, আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও চিন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, ‘কোয়াড কোনও দেশের বিরুদ্ধে লক্ষ্য নয়। SCO, BRICS এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির মতো কোয়াডও একটি মঞ্চ। যেখানে একটি ইতিবাচক এজেন্ডা নিয়ে কাজ হয়। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলটি হল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বিকাশের একটি কেন্দ্র। তাই এই অঞ্চলের নিরাপত্তা শুধু এই অঞ্চলটির জন্য নয় গোটা বিশ্বের জন্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
ভারত-চিন সীমান্ত বিরোধ প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথায়, ‘ভারতের দিক থেকে চিনের সঙ্গে সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, সীমান্তে এই দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতির দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার, যাতে দ্বিপাক্ষিক অস্বাভাবিক দিকগুলিতে আমরা পিছনে ফেলে দিতে পারি। ভারত ও চিনের মধ্যে একটি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক শুধু এই দুই দেশের জন্যই নয়, গোটা অঞ্চল ও বিশ্বের জন্যই ভীষণ দরকার। আমি মনে করি, কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে ইতিবাচক ও গঠনমূলক দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সীমান্তে শান্তি ফেরানো যাবে।’
পাকিস্তান প্রসঙ্গে
নিউজ়উইককে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে মোদী বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্বে আসার পর আমি অভিনন্দন জানিয়েছি। ভারত সবসময় সন্ত্রাস ও হিংসা মুক্ত পরিবেশের কথা বলে। দেশের শান্তি, নিরাপত্তা ও বিকাশ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে।’ তবে ইমরান খানের জেলের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করেননি প্রধানমন্ত্রী মোদী।
ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশ
প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতের মহাকাশ গবেষণা, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, গ্রিন এনার্জি, সেমিকন্ডাক্টর-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। ভারতীয় স্টার্টআপগুলি যে অভাবনীয় সাফল্য পাচ্ছে, সেকথাও জানান মোদী। তিনি বলেন,২০১৪ সালে যেখানে প্রায় একশো স্টার্টআপল ছিল, এখন দেশে ১ লাখ ২৫ হাজারেও বেশি স্টার্টআপ রেজিস্টার্ড হয়েছে।’ প্রধানমন্ত্রীর আরও সংযোজন, ‘দেশের দ্রুত আর্থিক বিকাশের লক্ষ্য হল দরিদ্রদের ক্ষমতায়ন ও সমাজে গতি আনা। গত দশ বছরে ভারতের দ্রুত বৃদ্ধিতে সবথেকে বেশি সুবিধা হয়েছে দরিদ্রদের।’
মোদীর লিগ্যাসি প্রসঙ্গে
নিউজউইকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লিগ্য়াসির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তাঁর স্পষ্ট কথা, আমাকে কীভাবে মনে রাখা হবে, সেটা ভাবা আমার কাজ নয়। এটা আমাকে একেবারেই ভাবায় না। আমাকে যেটা ভাবায় সেটা হল, কীভাবে আমি প্রতিটি দেশবাসীর জীবনে প্রভাব ফেলতে পারি। গোটা দেশবাসীকে আমি নিজের পরিবার বলে মনে করি। যদি তাঁর একটি মর্যাদাপূর্ণ জীবন কাটাতে পারেন, তাঁদের স্বপ্ন যদি পূরণ হয়, তাহলেই আমার কাজ শেষ বলে আমি মনে করব। ততদিন পর্যন্ত অক্লান্ত কাজ করে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্ব প্রসঙ্গে
প্রধানমন্ত্রী মোদীর কথা, নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি বড় গুণ হল সবার কথা শোনা। তিনি বলেন, ‘এই গুণটি আমাকে ঈশ্বর দান করেছেন এবং আমি সবসময় এটা বজায় রাখি। আমার আরও একটি গুণ হল, আমি সবসময় মুহূর্তের মধ্য়ে থাকায় বিশ্বাস করি। কোনও ফোন কল, কোনও বার্তায় আমি কখনও বিভ্রান্ত হই না। যখন যে কাজটা করি, তখন সেটায় নিজের ১০০ শতাংশ দিই।’