President Election 2022: কেন বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা? পিছনে রয়েছে জটিল রাজনৈতিক অঙ্ক

President Election 2022: কোন রাজনৈতিক অঙ্কে যশবন্ত সিনহাকে ঐক্যমত্য রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মনোনীত করল বিরোধীরা?

President Election 2022: কেন বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহা? পিছনে রয়েছে জটিল রাজনৈতিক অঙ্ক
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 21, 2022 | 8:14 PM

নয়া দিল্লি: মঙ্গলবার (২১ জুন), আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ঐক্যমত্য প্রার্থী হিসাবে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিনহার নাম ঘোষণা করেছে বিরোধীরা। এদিন শরদ পওয়ারের বাসভবনে বিরোধী দলগুলির এক বৈঠকের পর কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে যশবন্তের নাম ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে বিরোধী প্রার্থী হিসাবে শরদ পওয়ারের নাম শোনা যাচ্ছিল। পরে, ফারুক আবদুল্লা, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর নামও উঠে এসেছিল। তবে, শেষ পর্যন্ত সিলমোহর পড়েছে যশবন্ত সিনহার নামেই। কিন্তু কেন যশবন্তকে প্রার্থী করা হল? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর পিছনে বেশ কিছু রাজনৈতিক কারণ রয়েছে।

প্রথমত, জাতীয় রাজনীতিতে যশবন্ত সিনহা অন্যতম বড় নাম। প্রশাসনিক চাকরি ছেড়ে ১৯৮৪ সালে রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি। ১৯৮৮তেই সংসদে প্রথমবার পা পড়েছিল তাঁর। ১৯৯০-৯১ সালে তিনি প্রথমবার ভারতের অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছিলেন। এরপর বাজপেয়ী সরকারের সময়ও অর্থমন্ত্রক এবং বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ফলে নয়া দিল্লির রাজনীতিতে তিনি অত্যন্ত পরিচিত মুখ।

দ্বিতীয়ত, তাঁকে বকলমে বিজেপিরই মুখ বলা যায়। ১৯৯৬ সালে জনতা দল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বিজেপি প্রার্থী হিসাবে ১৯৯৮, ৯৯, ২০০৯ – তিনবার হাজারিবাগ লোকসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিজেপির সহ-সভাপতিও ছিলেন তিনি। তবে, ২০০৯ সালে দলের শীর্ষনেতাদের সঙ্গে বিরোধের এবং সংগঠনের মধ্যে ঝামেলার কারণে সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন তিনি। তবে তারপরও দলের গেরুয়া দলের সদস্যই ছিলেন তিনি।

তবে, দলে মোদী-শাহ জুটির উত্থান মেনে নিতে পারেননি তিনি। দলের মধ্যে থেকেই মোদী-শাহর তীব্র সমালোচনা করা শুরু করেছিলেন। মোদীর আমলে ‘ভারতের গণতন্ত্র আক্রান্ত’ বলে দাবি করেন তিনি। এরপর, ২০১৮ সালে তিনি দলও ছেড়ে দেন। তারপর থেকে তাঁর মোদী-শাহ জুটির বিরোধিতা আরও তীব্র হয়। ২০১৯ সালে মোদী সরকারের অর্থনৈতিক নীতির তীব্র বিরোধিতা করে ‘ইন্ডিয়া আনমেড’ নামে একটি গ্রন্থও লিখেছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই যে কোনও বিরোধী নেতার বদলে, ‘বিজেপির ঘরের লোক’ যশবন্তের মুখে, মোদী সরকারের সমালোচনার গুরুত্ব অনেক বেশি।

তৃতীয়ত, নরেন্দ্র মোদী এখন বিজেপির একচ্ছত্র নেতা হলেও, দলের মধ্যে সকলেই তাঁর খাস লোক নয়। বস্তুত, মোদীর আমলে বাজপেয়ি-আদবানী যুগের নেতারা বিশেষ পাত্তা পান না, এমন একটি আখ্যান চালু রয়েছে। বিরোধী দলের নেতারাও এই অস্বস্তিকর জায়গাটি বার বারই খুঁচিয়ে দিতে চায়। দল ছাড়ার পরও কিন্তু, নিতিন গড়করি, উমা ভারতীদের মতো বাজপেয়ী আমলের বিজেপি নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে ভালই যোগাযোগ আছে যশবন্তের। সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ হলেও, যশবন্তকে প্রার্থী করে বিজেপির এই অংশের সমর্থন আশা করছে বিরোধীরা।

চতুর্থত, বয়স ৮৪ বছর হলেও যশবন্ত সিনহা এখনও রাজনীতিতে যথেষ্ট সক্রিয়। ২০১৮ সালে বিজেপি দল ছেড়ে দেওয়ার পর, কয়েকটা বছর সক্রিয় রাজনীতিতে ছিলেন না প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী। তবে, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে, তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়ে ফের মূল ধারার রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন তিনি। বাজপেয়ী সরকারে মন্ত্রী থাকার সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল। সম্প্রতি আসানসোল লোকসভা উপনির্বাচনে শত্রুঘ্ন সিনহাকে তৃণমূল প্রার্থী করার পিছনেও সবথেকে বড় ভূমিকা ছিল তাঁরই।

পঞ্চমত, রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসাবে বিরোধীদের প্রথম পছন্দ ছিল শরদ পওয়ার। এনসিপি প্রধান সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার পর, বিরোধীদের প্রথম বৈঠকে নাম উঠেছিল ফারুক আবদুল্লার। তিনিও প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। এরপর নাম বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে ছিল আরও দুটি নাম গোপালকৃষ্ণ গান্ধী এবং গুলাম নবি আজাদের। কিন্তু, সমস্যা হল গুলাম নবি আজাদ একেবারেই কংগ্রেসের ঘরের লোক। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী সরাসরি রাজনীতিতে না থাকলেও, তিনিও আদ্যন্ত কংগ্রেসম্যান হিসাবেই পরিচিত। এদিকে কংগ্রেসের সঙ্গে গা ঘেসাঘেসি করতে অস্বস্তি রয়েছে টিআরএস, আম আদমি পার্টির মতো দলগুলির। যশবন্ত সিনহার ক্ষেত্রে এই অস্বস্তি না থাকায়, বিরোধী ভোটকে এককাট্টা রাখা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।