Yaswant Sinha: যশবন্ত সিনহার প্রার্থীপদ পাওয়া কি আসলে মমতারই জয়? জাতীয় রাজনীতিতে কতটা এগোলেন তিনি?

Yaswant Sinha: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের সর্বসম্মত প্রার্থী হলেন যশবন্ত সিনহা। এতে জাতীয় রাজনীতিতে অনেকটাই এগিয়ে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Yaswant Sinha: যশবন্ত সিনহার প্রার্থীপদ পাওয়া কি আসলে মমতারই জয়? জাতীয় রাজনীতিতে কতটা এগোলেন তিনি?
গত বছরই তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন যশবন্ত সিনহা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 22, 2022 | 11:56 AM

নয়া দিল্লি: আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী দলগুলির সর্বসম্মত প্রার্থী হচ্ছেন যশবন্ত সিনহা। গত কয়েকদিন ধরে শরদ পওয়ার, ফারুক আবদুল্লা, গোপালকৃষ্ণ গান্ধীদের নাম উঠে এলেও, শেষ পর্যন্ত সিলমোহর পড়েছে যশবন্ত সিনহার নামেই। তবে, যশবন্ত সিনহার এই মনোনয়ন প্রাপ্তি আদতে বিরোধী রাজনীতির ক্ষেত্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই জয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এদিনের পর, ২০২৪ সালে বিজেপির বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলির নেতৃত্বদানের প্রশ্নে, মমতা অনেকটাই এগিয়ে গেলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

যশবন্ত সিনহার প্রথম পরিচয় অবশ্যই বিজেপি নেতার। তবে, দলে মোদী-শাহের কর্তৃত্ব বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দলের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছিল তাঁর। প্রকাশ্যেই মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করা শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর ২০১৮ সালে বিজেপি ছাড়েন। ২০২১ সালে তিনি যোগ দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে যখন রাজ্যের একের পর এক তৃণমূল নেতা বিজেপিতে পাড়ি দিচ্ছিলেন, সেই সময়ই তৃণমূল দলে যোগ দেন যশবন্ত।

এদিন তৃণমূল কংগ্রেসের সহ-সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দিয়েই রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হলেন তিনি। কাজেই এই প্রথম কোনও তৃণমূল নেতা দেশের রাষ্ট্রপতি পদ প্রার্থী হলেন। এর আগে, তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও নেতাই এতবড় জাতীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হননি। এমনকী, খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও নন। আর এই ঘটনা তৃণমূল সুপ্রিমোকে তাঁর জাতীয় উচ্চাকাঙ্খা পূরণের দিকে আরও এক কদম এগিয়ে দিল বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশেষ করে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী ঐক্য গঠনের উদ্যোগ প্রথম নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। ২২টি বিরোধী দলের নেতাদের চিঠি দিয়ে বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রার্থী স্থির করার জন্য নয়া দিল্লির সংবিধান ক্লাবে, মমতার নেতৃত্বে মিলিত হয়েছিলেন ১৭টি দলের নেতারা। সূত্রের খবর, প্রাথমিকভাবে মমতার এই উদ্যোগে বিরক্তই হয়েছিলেন বেশ কয়েকটি দলের নেতারা। সিপিআই(এম)-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি তো প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, মমতার এক তরফা আহ্বানে বিরোধী ঐক্যের ফাটলই বাড়বে।

তবে, শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। সূত্রের খবর, তৃণমূল কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকেও যশবন্ত সিনহার নাম প্রস্তাব করা হয়নি। অন্যান্য তিন-চারটি দলের পক্ষ থেকেই প্রথমে এই বিষয়ে প্রস্তাব রাখা হয় যশবন্ত সিনহার কাছে। তারপর ফোন গিয়েছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কাছে। তিনি সম্মতি জানাতেই, এরপ্রকার সিলমোহর পড়ে গিয়েছিল যশবন্ত সিনহার নামে। কাজেই, যশবন্ত সিনহার এই মনোনয়ন, অন্যান্য বিরোধী দলের কাছে তৃণমূল কংগ্রেস দলের গ্রহণযোগ্যতারও পরিচয় বলে মনে করা হচ্ছে।

যশবন্ত সিনহার এই সর্বসম্মত বিরোধী প্রার্থী হওয়াকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তাঁর জাতীয় উচ্চাকাঙ্খা পূরণেরক কাজে লাগাবেন, তার ইঙ্গিত মিলেছে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বক্তব্যেও। এদিনের বৈঠকে তৃণমূলের প্রতিনিধি হয়ে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। বৈঠকের পর সংস্থা এএনআই-কে তৃণমূল কংগ্রেসের ধারণ সম্পাদক সংবাদ বলেছেন, ‘যশবন্ত সিনহাকে ঐক্যবদ্ধভাবে বিরোধীরা মনোনীত করায় আমরা সম্মানিত। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’ অর্থাৎ, যশবন্ত সিনহাকে তাদের লোক হিসাবেই দেখাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস।

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন আর বেশি দূরে নেই। গত দুই লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে রক্তক্ষরণ হয়েই চলেছে কংগ্রেসের। ফলে বিজেপি বিরোধী রাজনীতিতে একটা ফাঁকা জমি তৈরি হয়েছে। যে জমি দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। এর মধ্যে জোর প্রতিযোগিতা চলছে আপ এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। দিল্লির পর পঞ্জাবেও সরকার গঠন করেছে আপ। অন্যান্য বেশ কয়েকটি রাজ্যেও তারা শক্তি বৃদ্ধি করেছে। তবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কেজরীবালের দলও সমর্থন করছে ‘তৃণমূল নেতা’ যশবন্তকেই। এই নির্বাচন হয়তো শেষ কথা বলবে না, তবে মমতা কিন্তু দেখিয়ে দিলেন বিরোধীদের এক মঞ্চে আনার ক্ষমতা তাঁর রয়েছে।