এক্সক্লুসিভ- অভিজ্ঞতা ও নতুন মুখ একই সঙ্গে সমান অংশে থাকতে পারে না: এসএফআই সভাপতি ভিপি সানু

কেরলে জয় থেকে বাংলায় হার, নতুন মন্ত্রিসভা থেকে তারুণ্যের জোয়ার সব প্রশ্নে অকপট ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সভাপতি।

এক্সক্লুসিভ- অভিজ্ঞতা ও নতুন মুখ একই সঙ্গে সমান অংশে থাকতে পারে না: এসএফআই সভাপতি ভিপি সানু
গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: May 19, 2021 | 10:40 AM

সুমন মহাপাত্র: ৪ রাজ্য ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে বিজেপিকে শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে স্রেফ কেরলে (Kerala)। সেখানে কোথাও দেখা যায়নি জয়ের গেরুয়া ধ্বজা। শুধু তাই নয় সরকার বদলের রীতি ভেঙে কেরলে প্রত্যাবর্তন হয়েছে বাম সরকারের। ২০ মে দ্বিতীয় বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে চলেছেন পিনারাই বিজয়ন (Pinarayi Vijayan)। প্রস্তুত তাঁর মন্ত্রিসভা। কিন্তু এই ল্যান্ডস্লাইড জয়ের পরেও কেরলের বাম মন্ত্রিসভা সারা দেশকে ভাবাচ্ছে। পিনারাই বিজয়নের দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় নেই সিপিএম-সিপিআইয়ের কোনও পুরনো মন্ত্রী। সব নতুন মুখ। কার্যত একা প্রাক্তন ক্যাপ্টেন, বাকি টিম একেবারে নিউ অর্ডার। বিরল দৃশ্য কেরলে। তবে সারা দেশের নজর কেড়েছে পিনারাইর ক্যাবিনেটে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী কেকে শৈলজার অনুপস্থিতি। কোভিড মোকাবিলায় ‘রকস্টার’ তকমা পেয়েছিলেন শৈলজা। তাঁকে সম্মান জানিয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। তারপরও কেন দ্বিতীয় ক্যাবিনেটে নেই ‘শৈলজা টিচার।’ কেরল সিপিএম অবশ্য এর উত্তরে জানাচ্ছে নতুন মুখকে সামনে নিয়ে আসাই দলের লক্ষ্য। তাই এই সিদ্ধান্ত। কেরল সিপিএমের মন বুঝতে এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা বাম নেতা ভিপি সানুর (VP Sanu) সঙ্গে যোগাযোগ করে টিভি নাইন বাংলা। যেখানে কেরলে জয় থেকে বাংলায় হার, নতুন মন্ত্রিসভা থেকে তারুণ্যের জোয়ার সব প্রশ্নে অকপট ভারতের ছাত্র ফেডারেশনের সর্বভারতীয় সভাপতি।

প্রসঙ্গ কেকে শৈলজা: কেকে শৈলজা কেন মন্ত্রিসভায় নেই? এই প্রশ্নের উত্তরে ভিপি সানুর সাফ কথা, “গত বারের অর্থমন্ত্রী কমরেড টিএম থমাস আইজ্যাক তিনিও বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশংসিত হয়েছেন তবু ক্যাবিনেটে নেই। প্রাক্তন পিডব্লিউ মন্ত্রী জি সুধাকরণ তো প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য টিকিটও পাননি। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সি রবীন্দ্রনাথও ভোটে লড়েননি। শুধু কেকে শৈলজা নয় এরকম অনেক প্রাক্তন মন্ত্রী আছেন যাঁরা বিধায়ক হয়েছেন তবু মন্ত্রী হচ্ছেন না। শুধু শৈলজা তো নয়।” প্রাক্তন মন্ত্রীদের মধ্যে মোট ৬ জন টিকিট পাননি। তাঁর দাবি, একই সময় মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ ও অভিজ্ঞতাকে সমান জায়গা করে দেওয়া সম্ভব নয়। সিপিএম থেকে এমন কেউ টিকিট পাননি যাঁরা তৃতীয় বার বিধায়ক হওয়ার জন্য লড়ছেন। কিন্তু মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্তের কারণ কী? সে বিষয়ে ভিপি সানু জানান, শুধুমাত্র নতুন মুখকে জায়গা করে দেওয়ার জন্যই দলের এই সিদ্ধান্ত। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, রাজনৈতিক জীবনের একটা বড় অংশ কেরলে সিপিএমের সংগঠন সামলেছেন বিজয়ন। ১৯৯৮ সালে বিদ্যুমন্ত্রী থাকার পর দীর্ঘ ১৮ বছর দলের হয়ে কাজ করেছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী। তাই ভিপি সানু বলেন, “প্রত্যেকে উভয় ক্ষেত্রে কাজ করতে হবে, সংগঠনেও আবার সংসদীয় রাজনীতিতেও। এটাই হয়েছে। প্রত্যেকেই উভয় ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ হয়ে উঠবে।”

মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ: এ বিষয়ে ভিপি সানু জানান, ইতিমধ্যেই অনেক ছাত্র-নেতা তথা প্রাক্তন ছাত্র নেতা বিধায়ক হয়েছেন। সানু বলেন, “তরুণ মুখ পিএ মহম্মদ রিয়াজ মন্ত্রী হচ্ছেন। মন্ত্রী হচ্ছেন বীনা জর্জও। বিধানসভায় স্পিকার হচ্ছেন এমবি রাজেশও।” মুখ্যমন্ত্রীকে বাদ দিয়ে সিপিএমের ১১ জন মন্ত্রী ও সিপিআইয়ের ৪ জন নতুন। গত বারের ক্যাবিনেটের কেউই থাকছেন না।

বাম শূন্য বাংলা: বিধানসভা নির্বাচনে কেরলের ফলে সিপিএম খুশি হলেও বাংলায় এই প্রথম বামশূন্য বিধানসভা। কেন এমন হল? এই প্রশ্নের উত্তরে সেই পুরনো উত্তরই দিলেন এসএফআই সর্বভারতীয় সভাপতি ভিপি সানু। তিনি বলেন, “বাংলায় দু’ধরনের ভোট হয়েছে। একটা বিজেপিকে ক্ষমতায় আনতে, দ্বিতীয় বিজেপি যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারে তার জন্য। মানুষ ভেবেছে বিজেপিকে রুখতে পারবে তৃণমূল। তাই অধিকাংশ ধর্মনিরপেক্ষ ভোট গিয়েছে তৃণমূলের ঝুলিতে।” তবে বঙ্গে সিপিএমের ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আশাবাদী ভিপি সানু।

বঙ্গযুদ্ধে ফিকে তারুণ্য: সিপিএম এক ঝাঁক তরুণ-তরুণীকে টিকিট দিয়েছিল বিধানসভায়। ঐশী ঘোষ, দীপ্সিতা ধর থেকে শুরু করে সৃজন ভট্টাচার্য কিংবা প্রতীক উর রহমান। হেরেছেন সকলেই। এসএফআই নেতাদের এই পরাজয় কীভাবে দেখছেন সর্বভারতীয় সভাপতি? এ প্রসঙ্গে ভিপি সানু জানান, বিজেপিকে রুখতে মানুষ ভোট দিয়েছেন তৃণমূলকে। তবে এটা বেশিদিন চলবে না বলেও দাবি তাঁর। সানু বলেন, “রাস্তায় তাঁদের লড়াই চলবে।” কিন্তু কেন বিজেপিকে রুখতে বিকল্প হচ্ছে না সিপিএম? এ প্রশ্নের উত্তরে সানু প্রসঙ্গ টানেন লোকসভা নির্বাচনে কেরলের ফলাফল। যেখানে স্রেফ ১টি আসন পেয়েছিল বামেরা। বাকি সবই গিয়েছিল কংগ্রেস জোটের ঝুলিতে। মানুষ লোকসভায় সিপিএমের তরুণ মুখকে ভালবেসেও ভোট দেননি কারণ তাঁরা বুঝেছেন এই কয়েকটি আসন নিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে সরকার গড়া সম্ভব নয়। তাই কংগ্রেসকে জিতিয়েছেন। সানু বলেন, “এমনও উদাহরণ রয়েছে যেখানে লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়া প্রার্থীই কেরলে সেই লোকসভার অন্তর্গত বিধানসভায় জিতেছেন। তাই বাংলায়ও দীপ্সিতা, ঐশী, প্রতীক উররা মানুষের সঙ্গে দাঁড়িয়ে রাস্তায় লড়বে।”

প্রসঙ্গ রেড ভলান্টিয়ার: বাংলার রেড ভলান্টিয়ারদের একেবারে কাছ থেকে দেখছেন বলে জানান এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সভাপতি ভিপি সানু। তিনি বলেন, “এটাই আমাদের রাজনীতি মানুষ আমাদের ভোট দিতে পারেন, প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, আমরা মানুষের সঙ্গে থাকব।”

আরও পড়ুন: একা প্রাক্তন বিজয়ন, কেরলের মন্ত্রিসভায় নূতনের জয়গান