বিরোধী ঐক্য যেন ‘সোনার পাথরবাটি’, কংগ্রেস নামক ‘বোঝা’ বইতে নারাজ সপা-বসপা

ভোট একবার মিটে গেলে কী হবে সেটা ভবিষ্যতই বলবে। তবে আপতত বিরোধী ঐক্য যেন 'সোনার পাথরবাটির' মতোই শোনাচ্ছে।

বিরোধী ঐক্য যেন 'সোনার পাথরবাটি', কংগ্রেস নামক 'বোঝা' বইতে নারাজ সপা-বসপা
অলংকরণ-অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Aug 20, 2021 | 8:39 PM

নয়া দিল্লি: বিরোধী ঐক্য প্রদর্শনের দিনই তাতে দেখা গেল বিরাট ফাটলে ছবি। সোনিয়া, মমতা, শরদরা যত চেষ্টাই করুন না কেন, বিরোধীদের মোদী-বিরোধী মহাজোট হয়তো অধরাই থাকবে। ১৯ টি দলকে নিয়ে কংগ্রেস চেয়ারপার্সনের বৈঠকেই এই সম্ভাবনা উস্কে গেল। এর কারণ, আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ভারতের বৃহত্তম রাজ্যের দুই বিরোধী দলের অনুপস্থিতি। সমাজবাদী ও বহুজন সমাজবাদী পার্টি। এর নেপথ্যে অবশ্য একটা বড় কারণ পরের বছর উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন। সেই ভোট একবার মিটে গেলে কী হবে সেটা ভবিষ্যতই বলবে। তবে আপতত বিরোধী ঐক্য যেন ‘সোনার পাথরবাটির’ মতোই শোনাচ্ছে।

শুক্রবারের ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘গণতন্ত্র বাঁচানোর’ জন্য সবাইকে এককাট্টা হওয়ার ডাক দিয়েছেন সোনিয়া। যা খানিকটা প্রত্যাশিতই ছিল। কিন্তু যে রাজ্যের উপর ভারতের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ করে, সেই রাজ্যে বিজেপি বিরোধীদের ফাটলের ছবি যে বাকি দলগুলিকেও স্বস্তি দেবে না, তা হলফ করেই বলা যায়। এ দিনের বৈঠকে তৃণমূল ও সিপিএমের মতো ইউপিএ বহির্ভুত বিপরীত মেরুর দল হাজির থাকলেও নিজেকে সরিয়ে রাখেন অখিলেশ যাবদ এবং মায়াবতীরা। যা উত্তর প্রদেশের আসন্ন বিধানসভা ভোটের রণনীতি বলেই একপ্রকার নিশ্চিত রাজনীতির কারবারিরা। সোজা কথায়, যা পরোক্ষে বুঝিয়ে দেওয়া যে ইউপি বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আর সমঝোতা করতে রাজি নয় কোনও দল।

এক বৈঠকে থাকা মানেই আলোচনার দরজা খোলা রাখা, এবং কোথাও গিয়ে জোটের সম্ভাবনা জিইয়ে রাখা, এমন বার্তা পৌঁছয়। সেই বার্তাটাই দিতে চাইছে না যোগী রাজ্যের অন্যতম দুই বিরোধী শক্তি। বসপার দাবি, কংগ্রেস তাদের সদস্যদের ভাঙিয়ে নিজের ঘর সাজাচ্ছে। অন্যদিকে, সপা অতীতেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে দেখে নিয়েছে। লাভের লাভ কিছুই হয়নি। বরং ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সাইকেল পার্টি। ফলে কংগ্রেসকে একপ্রকার ‘বোঝা’ বলেই মনে করছে সপা।

পক্ষান্তরে, ২০২২ সালে উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচন কংগ্রেসের জন্য অ্যাসিড টেস্ট হতে চলেছে। এর প্রধানত দু’টো কারণ। প্রথমত, রাজ্যে কংগ্রেসের সাংগঠনিক দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী। ফলে তাঁর নেতৃত্বে দল কেমন ফলাফল করে সেদিকে গোটা দেশের রাজনৈতিক মহলের নজর থাকবে। দ্বিতীয়ত, টানা রক্তপাতের মধ্যে আগামী লোকসভা ভোটের আগে ঘুরে দাঁড়ানো কংগ্রেসের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। উত্তর প্রদেশে যদি আশাব্যঞ্জক ফল তারা করতে পারে, তবে লোকসভাতেও সেই প্রভাব পড়তে বাধ্য। তাই উত্তর প্রদেশ বিধানসভাকে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ হিসেবেই দেখছে কংগ্রেস।

যখন তিনটি দলই একে অপরের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভাল ফল করতে মরিয়া, তখন জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে তারা বিরোধিতা ভুলে কাছে আসবে, এমনটা প্রত্যাশা করা বোকামির সমান। বাস্তবেও তাই হয়েছে। কেউই কাছাকাছি আসার চেষ্টা করেনি। কারণ তিন দলেরই রাজনৈতিক ভবিষ্যত কী হবে, তা আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের উপর নির্ভর করছে। আর যেখানে সওয়াল নিজের দলের রাজনৈতিক ভবিতব্যের, সেখানে বিরোধী জোটের বাঁধন মজবুত করার কথা পরেও ভাবা যাবে। আগে নিজেকে বাঁচতে এবং দলকে বাঁচাতে হবে। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, তিন দলেরই এহেন ভাবনাই এ দিন একটা বড় ফাটল ধরিয়ে দিল বিরোধী ঐক্যে।

সূত্রের খবর, মায়াবতীকে এ দিনের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোই হয়নি। জানানো হলেও তিনি আসতেন কি না, সেটাও বড় প্রশ্ন। কিন্তু অখিলেশ এ দিনের বৈঠকে না থেকে ইঙ্গিত দিলেন, অন্তত উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি কংগ্রেসের হাত ধরে চলতে আগ্রহী নন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের আগে সপা এবং বসপা কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা অনেকাংশেই নির্ভর করবে ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর। আরও পড়ুন: ‘লক্ষ্য ২০২৪, একজোট হয়ে পরিকল্পিত ভাবে এগোতে হবে’, মমতা, শরদ, উদ্ধবদের বার্তা সোনিয়ার