Adani Issue: ‘দেশ ছেড়ে পালানোর আগে গ্রেফতার করা উচিত’, আদানি গোষ্ঠী নিয়ে মুখ খুলল তৃণমূল

Adani Issue: আদানির নাম না করে গতকাল সভা থেকেই মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর আদানির গ্রেফতারির দাবি তোলেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়।

Adani Issue: 'দেশ ছেড়ে পালানোর আগে গ্রেফতার করা উচিত’, আদানি গোষ্ঠী নিয়ে মুখ খুলল তৃণমূল
ফাইল ছবি (নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গৌতম আদানির সাক্ষাৎ)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 03, 2023 | 3:35 PM

নয়া দিল্লি: আদানি ইস্যুতে তোলপাড় জাতীয় থেকে রাজ্য রাজনীতি। এই ইস্যুর আঁচ পড়েছে সংসদের অধিবেশনেও। এই ইস্যুতে বিরোধীদের আলোচনার দাবিতে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে সংসদের দুই কক্ষেই। আজই তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় এই ইস্যুতে মুলতুবি প্রস্তাব এনেছেন। এদিকে আদানি ইস্যুর ছাপ পড়েছে বঙ্গ রাজনীতিতেও। বাংলার সঙ্গে আদানির ‘গোপন আঁতাত’ রয়েছে বলে অনেক মহলে চর্চা রয়েছে। কয়েক মাস আগেই বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে (Bengal Global Business Summit) আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানিকে (Gautam Adani) সাদরে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে। আর বাংলার মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, আদানি বাংলার বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করবেন। এই সম্মেলন থেকেই আদানির সঙ্গে তৃণমূলের একটি সম্পর্ক সদ্য শুরু হয়েছিল। তবে তা পরিপক্ক হওয়ার আগেই শেষের দিকে এগোল কি না তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। আর এই বিজিবিএস-এ আদানিকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্যই এখন তৃণমূলকে সুর চড়াতে হচ্ছে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির বিরুদ্ধে। একাধিক মহল মনে করছে, আদানির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে তৃণমূল।

শেয়ারে উথালপাথাল হতেই গতকাল পূর্ব বর্ধমানের এক সভা থেকে নাম না করে বিস্ফোরক হন মমতা। আর নেত্রীর সুরে সুর বেঁধেছেন বাকি সাংসদরাও। সকালে সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্যের পরই বিকেলে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় আদানি ইস্যুতে সুপ্রিম তদন্ত এবং গ্রেফতারির দাবি তোলেন। গতকাল পূর্ব বর্ধমানের সভা থেকে আদানির নাম না করে মমতা বলেন, “কালকে তো প্রায় সরকার পড়ে যাচ্ছিল। কেন পড়ে যাচ্ছিল? শেয়ার বাজারে ধস নেমেছিল। এবার কাউকে কাউকে অনুরোধ করে…আমরা জানি তাঁরা কারা। নামগুলো বলে আমি আর তাঁদের দুর্বিসহ করতে চাই না।” তিনি আরও বলেন, “কাউকে বলেছে ৩০ হাজার কোটি টাকা দাও। কাউকে আবার বলেছে ১০ হাজার কোটি টাকা দাও। এই দিয়ে সরকার চলে? একটা সরকারের যদি প্ল্যানিং না থাকে…।”

আর সকালে মমতার এহেন মন্তব্যের পরই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত এবং গ্রেফতারির দাবি তোলেন প্রবীণ তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়। তিনি বলেন, “ইডি, সিবিআইয়ের মতো যে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি বিরোধীদের পিছনে ক্ষ্যাপা কুকুরের মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের ছায়া পর্যন্ত আদানি গোষ্ঠীকে স্পর্শ করতে পারল না। কেন পারল না? এখনও পর্যন্ত সবাই নীরব কেন? অর্থমন্ত্রক নীরব কেন?” সুখেন্দুশেখর আরও বলেন,”সুপ্রিম কোর্টের কোনও ভারপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে এর তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ এর সঙ্গে বহু মানুষের ভবিষ্যতও জুড়ে রয়েছে। ব্যাঙ্কের সুদের হার এত কমিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে সুদ মেলে না। অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ মানুষরা তাই বাধ্য হয়ে শেয়ার বাজারে যাচ্ছেন। আর শেয়ার মার্কেটের হাঙরগুলো এই সাধারণ মানুষের টাকা আত্মসাৎ করছে। এর মতো জাতীয় বিপর্যয়কে রোধ করতে হলে অবিলম্বে তদন্ত হওয়া উচিত।” তিনি বলেন, “কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধাররা যাতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে না পারেন তাই তাঁদের গ্রেফতার করা উচিত। পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করা উচিত। তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত এয়ারপোর্টে লুক আউট নোটিস জারি করা উচিত। এমনকি ইন্টারপোলকেও সতর্ক করা দরকার।”

প্রসঙ্গত, বাংলায় বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আশ্বাস দিয়েছিলেন গৌতম আদানি। গত শিল্প সম্মেলনে গৌতম আদানির পুত্র কিরণ আদানির হাতে তাজপুর বন্দরের কাজ শুরুর অনুমতিপত্র তুলে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদানির টাকায় তাজপুর বন্দর তৈরিতে প্রায় ১০ লক্ষ চাকরি তৈরির কথাও জানানো হয়েছিল। তবে এবার আদানি ইস্যুতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে সেই প্রজেক্টও। এই নিয়ে সুর চড়িয়েছে রাজ্যের বিরোধী শিবির বিজেপিও। এদিকে পূর্ব বর্ধমানের সভায় আম আদমির বিপদের কথা মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। তাহলে কি এই বিপদের আশঙ্কা করেই আদানির সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে তৃণমূল? আর আশঙ্কা বাড়ছে রাজ্যে আদানির বিনিয়োগে তাজপুর বন্দর তৈরির ভবিষ্যত নিয়ে। অন্যদিকে শিল্প সম্মেলনে আদানিকে আমন্ত্রণ জানানো নিয়ে সুখেন্দুশেখর বলেছেন, “কারোর সঙ্গে কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন সরকার শিল্প সম্মেলন করে। আমাদেরও শিল্প সম্মেলন হয়েছে। আমাদের শিল্প সম্মেলনে অম্বানি ও আদানিও এসেছেন। পাশাপাশি অন্যান্য শিল্পপতিরাও এসেছেন। যাঁরা আমাদের রাজ্যে বিনিয়োগ করতে চান তাঁদের সবসময় স্বাগত। কিন্তু তাই বলে সাত খুন মাফ হয়ে যাবে তা হয় না। যদি অপরাধ করে, সাধারণ মানুষের টাকা, ব্যাঙ্কের টাকা, এলআইসির টাকা লুটপাঠ করে, তার জন্য আমরা নীরবতা পালন করব না।”