‘উমর কোনও ভুল করেনি, দেশের জন্য কাজ করে জেলে গিয়েছে’

সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ শুনে বুকে বল পাচ্ছেন উমর খালিদের বাবা-মা। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, "ছেলে ভুল কিছু করেনি। সে ফিরে আসবে।"

'উমর কোনও ভুল করেনি, দেশের জন্য কাজ করে জেলে গিয়েছে'
গ্রাফিক্স- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Jul 17, 2021 | 1:33 PM

সুমন মহাপাত্র: ‘মাই নেম ইজ উমর খালিদ বাট আই অ্যাম নট এ টেররিস্ট,’ ২০১৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১০টা বা সওয়া ১০টা নাগাদ জেএনইউর মঞ্চে উঠে এ কথাই বলেছিলেন ছাত্রনেতা উমর খালিদ। জেএনইউ সেডিশন মামলায় তখন তাঁর বিরুদ্ধে ‘লুকআউট’ নোটিস জারি করেছে পুলিশ। রাজধানীতে শীতের রাত, গলায় শাল জড়িয়ে কথার জোরে উত্তাপ বৃদ্ধি করছেন উমর। কানহাইয়া কুমার তখন জেল হেফাজতে। জেএনইউর ছাত্ররা জানতেন উমর, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, আশুতোষ যাদব, রাম নাগা ও অনন্ত নারায়ণকে ধরতে আসতে পারে পুলিশ। তাঁরা তৈরিও ছিলেন। পুলিশ এলে আত্মসমর্পণ করবেন গা-ঢাকা দিয়ে থাকা এই ছাত্রনেতারা। তাঁদের বিরুদ্ধে, ৯ ফেব্রুয়ারি জেএনইউ ক্যাম্পাসে দেশবিরোধী স্লোগান তোলার অভিযোগ।

আত্মসমর্পণ করেছেন উমর খালিদ ও অনির্বাণ। কানহাইয়া সহ এই ত্রয়ীর বিরুদ্ধে ধারা ১২৪ (এ) তে মামলা হয়েছে। ৫ বছর কেটে গেলেও তার কোনও ফয়সালা হয়নি। কানহাইয়া, অনির্বাণ জেলে নেই, তবে দিল্লি হিংসার ঘটনায় ফের একবার দেশদ্রোহিতার অভিযোগ ওঠে উমর খালিদের বিরুদ্ধে। ফের ১২৪ (এ) ও ইউএপিএ আইনে মামলা দায়ের হয়। গ্রেফতার হয়ে এখন জেল খাটছেন উমর খালিদ। পরিবারেরে অভিযোগ, ন্যায্য বিচার পাচ্ছেন না তাঁরা। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ শুনে বুকে বল পাচ্ছেন উমর খালিদের বাবা-মা। তাঁদের দৃঢ় বিশ্বাস, “ছেলে ভুল কিছু করেনি। সে ফিরে আসবে।” সে কথাই টিভি নাইন বাংলার সঙ্গে ভাগ করে নিলেন উমর খালিদের বাবা তথা ওয়েলফেয়ার পার্টি অব ইন্ডিয়ার জাতীয় সভাপতি সায়েদ কাসিম রাসুল ইলিয়াস।

Umar Khalid Father exclusive

‘উমর দিল্লিতেই ছিল না’

সায়েদ কাসিম রাসুল ইলিয়াস জানান, সরকার কণ্ঠস্বর আটকাতে সেডিশনকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। যথেচ্ছ অপব্যাবহার নিয়েও মুখ খোলেন তিনি। উমর খালিদের প্রসঙ্গে তাঁর বাবা বলেন, “প্রথমে ছেলের বিরুদ্ধে ধারা ১২৪ (এ) রুজু করেছিল ২০১৬ সালে। তখন জেএনইউর একটা ছোট অনুষ্ঠানে তাঁরা না কি দেশবিরোধী স্লোগান দিয়েছিল। একটা কথা বলি, কোনও স্লোগান ততক্ষণ দেশবিরোধী হতে পারে না, যতক্ষণ না সেই স্লোগানের মাধ্যমে সমাজে হিংসার আবহ তৈরি হয়। যাই হোক, সেই মামলা ৪-৫ বছর হয়ে গেল চার্জশিটই দাখিল হয়নি। এরপর দিল্লি হিংসায় উমর খালিদকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেখানেও ইউএপিএ-র পাশাপাশি ধারা ১২৪ (এ) বসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যেদিনের ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেদিন দিল্লিতেই ছিল না উমর। কিন্তু তাঁকে এই ঘটনার মাস্টারমাইন্ড বানিয়ে দিল। উমরের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যে।”

‘ছেলে আরও বেশি শক্তি নিয়ে ফিরবে’

ছেলের সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয় না। সে বিষয়ে বাবা বলেন, “ও আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরবে। ওকে আরও বেশি মানুষ চিনবে। দেখুন ইতিহাসে যত স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, যাঁরা ঔপনিবেশিক আইনের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন, তাঁদের জেলে যেতে হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে গেলে এসব দেখতে হবে। উমর কোনও ভুল কাজ করেনি। ও দেশের জন্য কাজ করেছে। জেলে গিয়েছে, ঠিক আছে। এটা তাঁকে আরও শক্তি জোগাবে। উমরের মা-ও একই রকম ভাবেন। একটু কষ্ট হয় ঠিকই।”

‘পর্যবেক্ষণ স্বাগত, তবে সিদ্ধান্ত প্রয়োজন’

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, “দেশদ্রোহ ঔপনিবেশিক আইন। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও কি আমাদের এই আইন চাই?” এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে ১০০ শতাংশ সহমত উমর খালিদের বাবা ইলিয়াস। তিনি বলেন, “এই আইন বানানো হয়েছিল যাতে ব্রিটিশ বিরোধী আওয়াজকে দমিয়ে ফেলা যায়। এই আইন ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুছে ফেলা উচিত ছিল। যে সরকারের সঙ্গে সহমত হচ্ছে না, প্রতিবাদ করছে, তাঁকেই এই আইনে জেলে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই আইন শেষ হওয়া উচিত। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে ১২৪(এ) ধারার অপব্যবহার হয়। সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণকে স্বাগত তবে সিদ্ধান্ত হওয়া প্রয়োজন।”

২১ ফেব্রুয়ারি রাতে উমর বলেছিলেন, “জেএনইউ রাজনীতিতে আমি নিজেকে ৫-৬ বছরে কখনও মুসলিম বলে প্রজেক্ট করিনি। কিন্তু গত ১০ দিনে আমাক সবচেয়ে বেশি মনে হচ্ছে যে আমি মুসলিম। কোনও প্রমাণ ছাড়াই বলা হচ্ছে আমি কাশ্মীরে ফোন করেছি- গাল্ফে ফোন করেছি।” সেদিন জেএনইউর ছাত্রদের ‘মাই ফেলো অ্যান্টি ন্যাশনালস’ বলে সম্বোধন করেছিলেন উমর। সুপ্রিম কোর্ট সেডিশন নিয়ে পর্যবেক্ষণ দেওয়ায় সায়েদ কাসিম রাসুল ইলিয়াস বলছেন, “যতই সমস্যা হোক না কেন, ছেলে ফিরবে।” আরও পড়ুন: এক্সক্লুসিভ- অভিজ্ঞতা ও নতুন মুখ একই সঙ্গে সমান অংশে থাকতে পারে না: এসএফআই সভাপতি ভিপি সানু