Ghulam Nabi Azad: ‘যখন সবাই রাহুলের সঙ্গে…’, দল ছাড়ার পরও গুলামের ‘টাইমিং’ নিয়ে প্রশ্ন তুলল কংগ্রেস
Ghulam Nabi Azad resigns from Congress: দল ছাড়ার পাশাপাশি পাঁচ পাতার এক পত্রবোমাও ফেলেছেন গুলাম নবি আজ়াদ। এই বিষয়ে কী প্রতিক্রিয়া দিল কংগ্রেস?
নয়া দিল্লি: শুক্রবার (২৬ অগস্ট), প্রাথমিক সদস্যপদ-সহ কংগ্রেস দলের যাবতীয় পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন প্রবীণ নেতা তথা জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ। এক চিঠিতে শেষ ৫২ বছরের সম্পর্ক। চিঠি তো নয়, রীতিমতো পাঁচ পাতার এক পত্রবোমা ফেলেছেন তিনি। যাতে প্রায় কেঁপে গিয়েছে শতাব্দী প্রাচীন দলটির ভিতই। অল্প কিছু সময় পরই দলের পক্ষ থেকে সেই পত্রবোমার প্রতিক্রিয়ায় বলা হল, এটা (গুলাম নবি আজ়াদের দল ছাড়া এবং পত্রবোমা) সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখজনক। এমন এক সময়ে আজ়াদ এই চিঠি দিলেন যখন সকল কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা একত্রিতভাবে লড়াইয়ের জন্য রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। ভারত জোড়া যাত্রার মাধ্যমে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এদিন দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করে সনিয়া গান্ধীকে একটি পাঁচ পাতার চিঠি লিখেছেন গুলাম নবি আজ়াদ, যেখানে তিনি দলের পতনের জন্য সরাসরি রাহুল গান্ধীর ‘শিশুসুলভ’ নেতৃত্বের সমালোচনা করেছেন।
তাঁর দলত্যাগ এবং পাঁচ পৃষ্ঠার পত্রবোমা সম্পর্কে এদিন কংগ্রেস দলের পক্ষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ নেতা অজয় মাকেন। তিনি দাবি করেছেন, গুলাম নবি আজাদের পদত্যাগের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমেই জানতে পেরেছে কংগ্রেস দল। কারণ, পাঁচ পৃষ্ঠার চিঠিটি আজ়়াদ দলীয় সভানেত্রীকে পাঠানোর বদলে সংবাদমাধ্যমেই প্রকাশ করেছেন। অজয় মাকেন আরও বলেছেন, “দল এবং দেশের জন্য তাঁর (গুলাম নবী আজাদ) বিরাট অবদান রয়েছে। কিন্তু, তিনি এমন সময়ে কংগ্রেস ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যখন কংগ্রেস দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, মেরুকরণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে চলেছে। গুলাম নবি আজ়াদের মতো একজন প্রবীণ নেতা আগামী মাসে দলের দেশব্যাপী প্রচারের অংশ হতে চান, এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখজনক।”
আরেক গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ নেতা তথা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশও গুলাম নবি আজ়াদের কংগ্রেস ত্যাগের সময় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কংগ্রেস মুখপাত্র বলেছেন, “এই সময়ে গুলাম নবি আজ়াদের পদত্যাগ দুর্ভাগ্যজনক। তাঁর পদত্যাগ আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। গরীব মানুষের হয়ে আওয়াজ তুলতে যাচ্ছে দল। এই সময় তিনি পদত্যাগ করলেন। কংগ্রেস এই সময়ে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে জোর প্রচার চালাচ্ছে। তাঁর দলের সঙ্গে থাকা উচিত ছিল। তাঁর চিঠির বিষয়বস্তু বাস্তবসম্মত নয়, সময় তো খুবই খারাপ।”
কংগ্রেস সাংসদ মানিকম ঠাকুরও আজ়াদের দলত্যাগকে ‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক’ বলেছেন। তবে তাঁর মতে দলের পতনের জন্য রাহুল গান্ধীকে দোষ দেওয়া ভুল। তিনি বলেন, “রাহুলজি যখন ভারত জোড়ার জন্য একটি ঐতিহাসিক পদযাত্রা শুরু করতে চলেছেন, সেই সময় তাঁর (গুলাম নবি আজ়াদ) পদত্যাগকে খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তিনি যেভাবে কংগ্রেস নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন তাও অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি কীভাবে রাহুল গান্ধীকে দোষ দিতে পারেন? ২০১৭ থেকে ২০১৯ – মাত্র ২ বছর সভাপতি ছিলেন রাহুল গান্ধী। তিনি (আজাদ) বহু বছর কংগ্রেসে মন্ত্রী ছিলেন। কংগ্রেসের জন্যই তিনি দিল্লিতে বাংলো পেয়েছিলেন। তিনি নিজেই প্রতিটি সিদ্ধান্তের অংশ ছিলেন। তাই রাহুল গান্ধীকে দোষ দেওয়াটা ভুল।”
অনেক আগেই দল ছেড়েছিলেন, আরেক বর্ষিয়ান নেতা অশ্বিনী কুমার। প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা এদিন বলেছেন, “তাত্ত্বিক আত্মদর্শনের সময় শেষ, কংগ্রেসকে এখন অন্য কিছু করতে হবে। নৈতিক কেন্দ্র হওয়ার আগে দলকে প্রথমে তার বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করতে হবে। অন্য কাউকে সংশোধন করার আগে, আগে নিজেকে সংশোধন করতে হবে। গুলাম নবি আজ়াদের পদত্যাগ দুঃখজনক। এটা কংগ্রেস পার্টি এবং দেশের গণতন্ত্রের জন্য একটা দুঃখজনক দিন। তা সত্ত্বেও, দল (কংগ্রেস) পরিবর্তন করতে অস্বীকার করছে। সেই কারণেই দলের বর্ষিয়ান নেতারা চলে যাচ্ছেন, কারণ তাঁরা বিচ্ছিন্ন, এবং অপমানিত বোধ করছেন।”
এক দিন আগেই কংগ্রেস ছেড়েছেন দিল্লির কংগ্রেস নেতা জয়বীর শেরগিলও। তিনি বলেছেন, “বাস্তবে কংগ্রেসে এখন দরবারি সংস্কৃতি চলছে। এতে নেতারা বিরক্ত হচ্ছেন। অনেক বড় বড় নেতা এখন কংগ্রেস ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন।”
অন্যদিকে, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লার মতেও গুলাম নবি আজ়াদের পদত্যাগ অত্যন্ত দুঃখজনক। আজ়াদের একসময়ের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী তথা ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ফারুক আবদুল্লা বলেছেন, “ইন্দিরা গান্ধীর সময় থেকেই গুলাম নবি আজ়াদ অভ্যন্তরীণ মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তিনি আজও সনিয়া গান্ধীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বড়ই আফসোসের বিষয়, কী হল যে এত বড় সিদ্ধান্ত নিতে হল!”
তাঁর পুত্র তথা জম্মু ও কাশ্মীরের আরেক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার মতে আজ়াদের দল ছাড়া কংগ্রেসের পক্ষে জোরালো ধাক্কা। যেভাবে শতাব্দী প্রাচীন দলটি ভেঙে যাচ্ছে, তা দুঃখের এবং ভয়ের। টুইটে ওমর আবদুল্লা লেখেন, “অনেকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছিল, কিন্তু কংগ্রেসের জন্য একটা ধাক্কা বই কম নয়। সম্ভবত সাম্প্রতিক সময়ে দল ছেড়ে দেওয়া সবচেয়ে সিনিয়র নেতা, তার পদত্যাগপত্র পড়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ভারতের সবথেকে পুরোনো রাজনৈতিক দলকে এভাবে বিপর্যস্ত হতে দেখাটা দুঃখজনক এবং বেশ ভীতিকর।”