Teachers’ Day: শিক্ষক দিবসে ২,৮৯৭ জন শিক্ষকের চোখ দিয়ে শুধুই অশ্রু ঝরছে…
Teachers' Day: অনেক শিক্ষকেরই হাতে সময় নেই। সরকারি চাকরি, ভেবেছিলেন স্থিতিশীল। তাই গত বছর পাওয়া এই চাকরির ভরসাতেই এই শিক্ষকদের অনেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। কেউ কেউ মোটা মাইনের বেসরকারি চাকরি ছেড়েছিলেন। শিক্ষক দিবসে, তাঁদের চোখ দিয়ে শুধুই অশ্রু ঝরছে৷
দিনটা শিক্ষকদেরই। ছাত্রছাত্রীরা এদিন শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। তাই, এই দিনটা গোটা ভারতের শিক্ষকদের জন্য এক অত্যন্ত খুশির দিন। কিন্তু, ছত্তীসগঢ়ের হাজার-হাজার শিক্ষকের এবারের শিক্ষক দিবসটা কাটল এক গভীর শঙ্কায়। ৩২ বছরের শশাঙ্ক শেখরের মাথার উপর ঝুলছে ঘরবাড়ি হারানোর খাঁড়া। ৩০ বছরের রাকেশ কুমার পদৌতি বুঝে পাচ্ছেন কীভাবে সাড়ে নয় লাখ টাকার ঋণ শোধ করবেন। ২৬-এর তুমেশ্বরী সিংহরাম এবং ২৪-এর নীলম মান্ডভি এখন হাত কামড়াচ্ছেন, কেন যে লাভজনক সরকারি চাকরি ছেড়ে শিক্ষক হতে গেলেন!
এই কজনই নন, তাঁদের মতো ছত্তীসগঢ়ের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়া ২,৮৯৭ জন বিএড শিক্ষকই এখন তাদের চাকরি হারানোর শঙ্কায় কাঁপছেন। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার এডুকেশন বা এনসিটিই গত বছর বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল, প্রাথমিক শিক্ষক হতে গেলে শুধুমাত্র বিএড ডিগ্রি থাকলেই হবে। সেই বিজ্ঞপ্তি মেনেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারী শিক্ষকের চাকরি দেওয়া হয়েছিল শশাঙ্ক-তুমেশ্বরীদের। কিন্তু, সবটা বদলে দিয়েছে ছত্তীসগঢ় হাইকোর্টের এক রায়। উচ্চ আদালত বলেছে, প্রাথমিকে পড়াতে গেলে ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন বা ডিএলএড থাকতেই হবে। তাই এই প্রাথমিক শিক্ষকদের নিয়োগ অবৈধ। হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টেও গিয়েছিলেন এই শিক্ষকরা। কিন্তু, গত ২৮ অগস্ট, তাঁদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতও। ফলে, বাতিল হতে চলেছে ২,৮৯৭ জন বিএড শিক্ষকের নিয়োগ।
এই অবস্থায় সুরাহা খুঁজতে গত বৃহস্পতিবার, বেশ কয়েকজন শিক্ষক রায়পুরে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাইয়ের সঙ্গে দেখা করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আইনের মধ্যে তিনি যা করতে পারেন, তা করবেন। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, সরকার এই মামলা লড়ার জন্য একজন বড় মাপের আইনজীবী নিয়োগ করেছিল। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এরপরও মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যের সরকার যুবদের পাশে আছে। সাংবিধানিক সীমার মধ্যে তারা যতদূর সম্ভব চেষ্টা করে যাবে।
তবে, রাজ্যর খুব বেশি চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই। এই বিএড শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের একটা পথ সুপ্রিম কোর্টই বাতলে দিয়েছে। ছত্তীসগঢ় সরকারকে আদালত বলেছে, যে সব স্কুলে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়, সেই সব স্কুলে এই বিএড শিক্ষকদের নিয়োগ করতে। কিন্তু আদালতের সেই সুপারিশে রাজ্য এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া দেয়নি। তবে, শিক্ষকরা এখনও আশাবাদী। তাঁদের মতে, রাজ্যের একটি আবেদন এখনও সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তাই, শেষ পর্যন্ত রাজ্য তাঁদের উচ্চ বিদ্যালয়গুলিতে নিয়োগ দিতে পারে বলে আশা করছেন তাঁরা।
তার জন্য অবশ্য সময় লাগবে। কিন্তু অনেক শিক্ষকেরই হাতে সময় নেই। সরকারি চাকরি, ভেবেছিলেন স্থিতিশীল। তাই গত বছর পাওয়া এই চাকরির ভরসাতেই এই শিক্ষকদের অনেকে বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছেন। কেউ কেউ মোটা মাইনের বেসরকারি চাকরি ছেড়েছিলেন। কেউ তাঁর নিজের বাড়ি ছেড়ে এসে, এই চাকরির করার জন্যই বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন। কেউ আবার অন্য সরকারি চাকরি ছেড়ে শিক্ষকতা করতে এসেছিলেন। শিক্ষক দিবসে, তাঁদের চোখ দিয়ে শুধুই অশ্রু ঝরছে৷
আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)