২ দিন পরও অব্যাহত অসম-মিজোরাম সীমানায় অশান্তি, সমাধান খুঁজতে আজই বৈঠক স্বরাষ্ট্রসচিবের

Assam Mizoram Border Issue: সংঘর্ষের দু'দিন পরেও টানটান উত্তেজনা অসম-মিজোরাম সীমানায়। দুই রাজ্যের মধ্যে সংযোগকারী জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ চলছে বলে জানা গিয়েছে।

২ দিন পরও অব্যাহত অসম-মিজোরাম সীমানায় অশান্তি, সমাধান খুঁজতে আজই বৈঠক স্বরাষ্ট্রসচিবের
সোমবারের সংঘর্ষের চিত্র। ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 28, 2021 | 2:14 PM

গুয়াহাটি: রাজ্যের সীমানা নিয়ে সমস্যা দীর্ঘদিনেরই। কিন্তু রবিবার থেকেই উত্তেজনা চরমে উঠেছে অসম-মিজোরাম সীমানায়। ক্রমাগত সংঘর্ষের জন্য দুই রাজ্যের তরফেই একে অপরকে দোষারোপ করা হচ্ছে। সমস্যা মেটাতে দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপের আবেদন জানিয়েছিলেন। সেই আবেদন শুনেই বুধবার অসম ও মিজোরামের মুখ্যসচিবদের নিয়ে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লা।

রবিবার রাতে অসম-মিজোরাম সীমানাবর্তী গ্রামের আটটি বাড়ি পুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এরপরই সোমবার সকাল থেকে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দফায় দফায় দুই রাজ্যের বাসিন্দা ও পরে পুলিশদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সোমবার ৬ ঘণ্টা ধরে চলা সংঘর্ষে অসম পুলিশের ৬ কর্মীর মৃত্যু হয়। এ দিন আরও এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু হওয়ায় মোট মৃতের সংখ্যা ৭-এ পৌঁছেছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ কর্মী মিলিয়ে আহতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা  টুইটে একে অপরকে আক্রমণ করতে থাকেন।

একদিকে, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা টু্‌ইটে লেখেন, সংঘর্ষ বন্ধ হওয়া উচিৎ। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে বিষয়টিতে দৃষ্টিপাত করার অনুরোধও জানান তিনি। তাঁর দাবি, দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন নিরপরাধ মানুষ। অন্যদিকে, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাও টুইটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের আর্জি জানান। মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীকে টুইটে ট্যাগ করে তিনি লেখেন, “মিজোরামের পুলিশ সুপার আমাদের পোস্ট থেকে লোক সরাতে বলছে, নাহলে অশান্তি থামবে না। এ ভাবে কি করে সরকার চালানো সম্ভব?”  সেই টুইটের জবাবে জোরামথাঙ্গা লেছেন, “মিজোরামে সাধারণ মানুষকে লাঠিপেটা করছে অসম পুলিশই।”

দুই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের মধ্যে অশান্তি ও উত্তপ্ত পরিবেশের কথা মাথায় রেখেই সীমানা আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দুই পক্ষ যাতে ফের সংঘর্ষে জড়িয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে সীমানায় টহল দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এরই মাঝে আজ বিকেল চারটেয় দুই রাজ্যের মুখ্য সচিব ও পুলিশের ডিজিদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা।

এ দিকে, সংঘর্ষের দু’দিন পরেও টানটান উত্তেজনা অসম-মিজোরাম সীমানায়। দুই রাজ্যের মধ্যে সংযোগকারী জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ চলছে বলে জানা গিয়েছে। মহম্মদপুর স্টেশনের কাছে রেললাইন উপড়ে ফেলার খবরও মিলেছে। বিক্ষোভ দেখানো শুরু করেছে কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি-সহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।

বিভিন্ন এলাকায় অসমের রাস্তা ও জঙ্গল নষ্ট করার অভিযোগও তোলা হয়েছে মিজোরাম পুলিশের বিরুদ্ধে। অন্যদিকে, মিজোরামের দাবি, অসম পুলিশ সিআরপিএফ পোস্ট অতিক্রম করে জোর করে তাদের রাজ্যে প্রবেশ করে। মিজোরাম সরকারের দাবি, কোনোভাবেই আলোচনায় রাজি নয় অসম। তাদের পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুঁড়েছে অসম পুলিশই।

অন্যদিকে, অসম সরকারের রিপোর্টে ড্রাগ মাফিয়াদের যোগের কথা উঠে এসেছে। সরকারের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, পুলিশের পোশাকে কারা গুলি চালিয়েছিল? যদি গ্রামবাসীরাই জড়িত থাকে, তবে তাদের কাছে স্নাইপার ও এলএমজি-র মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র কীভাবে এল? সীমানা সংঘর্ষে ড্রাগ মাফিয়া যোগ থাকতে পারে বলেই সন্দেহ অসম সরকারের।

সম্প্রতিই মাদক মাফিয়াদের বিরুদ্ধে  কড়া অবস্থান নিয়েছে অসম সরকার। বিগত কয়েক বছর ধরেই মায়ানমার থেকে মিজোরাম হয়ে মাদক পাচার চলত। কিন্তু অসম সরকারের পদক্ষেপে বিপাকে পড়েছে মাদক মাফিয়ারা। তাই এই সংঘর্ষের পিছনে তাদেরই হাত থাকতে পারে বলে অনুমান। অন্যদিকে, অসমের গো-রক্ষা আইনও নিয়েও সীমান্তের দুই পক্ষের বহু মানুষদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সংঘর্ষের পিছনে এটিও একটি কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা অসম সরকারে। আরও পড়ুন: কেন আড়াই টাকা বাড়াল সিঙ্গারার দাম? দোকানির সঙ্গে তর্কের জেরে গায়ে আগুন দিল যুবক