গুজরাটের ৪ বারের মুখ্যমন্ত্রী মাধব সিং সোলাঙ্কির জীবনাবসান
১৯৮৪ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২টি আসনে ১৪৯টিতে জয়লাভ করে সোলাঙ্কির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। সে রেকর্ড কোনওদিন ভাঙতে পারেননি নরেন্দ্র মোদীও।
গান্ধীনগর: সাংবাদিক থেকে চার বার মুখ্যমন্ত্রী তারপর কেন্দ্রের বিদেশমন্ত্রী- শনিবার দীর্ঘ যাত্রাপথের অবসান ঘটল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা মাধব সিং সোলাঙ্কির (Madhav Singh Solanki) জীবনাবসানে। আজ সকালে নিজের বাসভবনেই ঘুমের মধ্যে দিকশূন্যপুরে যাত্রা করেন ৯৩ বছর বয়সী সোলাঙ্কি। গুজরাটের গণ্ডি ছাপিয়ে চার দশকর ধরে দেশের রাজনীতিতে তাঁর অবাধ বিচরণ। নিজের রাজ্যে বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতার ব্যাপ্তি কখনও কখনও হার মেনেছে ‘ব্রান্ড মোদীও’। তাঁর মৃত্যুতে শোকবিহ্বল গোটা রাজনৈতিক মহল।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, গান্ধীনগরে বরসাদ শহরে নিজের বাসভবনে ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হয় সোলাঙ্কির। তাঁর শেষকৃত্য আজই হওয়ার কথা। এই মুহূর্তে সোলাঙ্কির পুত্র, প্রাক্তন কেন্দ্রীয়মন্ত্রী ভারত সিং সোলাঙ্কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। তিনি ফিরলেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তাঁর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে প্রদেশ কংগ্রেসের অন্দরে। দলের তরফে টুইটারে শোকবার্তা জানানো হয়। প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটে তাঁর শোকবার্তায় জানান, বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা সোলাঙ্কির মৃত্যুতে তিনি মর্মাহত। কংগ্রেসের মতাদর্শ এবং সামাজিক ন্যায় বিচারকে মজবুত করতে তাঁর অবদান চিরদিন মনে রাখবেন মানুষ।
Shri Madhavsinh Solanki Ji was a formidable leader, playing a key role in Gujarat politics for decades. He will be remembered for his rich service to society. Saddened by his demise. Spoke to his son, Bharat Solanki Ji and expressed condolences. Om Shanti.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 9, 2021
শোকবার্তা জানিয়েছেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মাধব সিং সোলাঙ্কিকে ‘দুর্দান্ত নেতা’ বলে অভিহিত করেন তিনি। মোদীর কথায়, “সুষ্ঠ সমাজ গঠনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। রাজনীতির বাইরে একাধিক বিষয় নিয়ে ওঁর সঙ্গে আলোচনা হত। উনি নতুন নতুন বই পড়তে ভালবাসতেন। সে সব বই নিয়ে গভীর আলোচনা হত আমাদের।” সোলাঙ্কির মৃত্যুতে শোকজ্ঞাপন করেছেন গুজরাটের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। সোলাঙ্কির শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।
১৯৮৪ সালে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২টি আসনে ১৪৯টিতে জয়লাভ করে সোলাঙ্কির নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। সে রেকর্ড কোনওদিন ভাঙতে পারেননি নরেন্দ্র মোদীও। বলা ভাল, আজও তা অটুট। গুজরাটের রাজনীতিতে সোলাঙ্কির অবদান হয়ত শুধুই এই রেকর্ড পরিসংখ্যান দিয়ে মনে রাখবেন না মানুষ, সমাজে বিভিন্ন জাতের মধ্যে কৌশলী বুনন ঘটিয়ে এক নতুন তত্ত্ব তৈরির মধ্যে তাঁর নাম আলোচিত হবে। গুজরাটের ক্ষত্রিয়, হরিজন, আদিবাসী এবং মুসলমিকে এক সূত্রে বেঁধে (খাম) প্রথম ভোট ব্যাঙ্কে কাজে লাগান বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ সোলাঙ্কি।
আরও পড়ুন- বিতর্কিত কৃষি বিলের বিরুদ্ধে ‘পিচ’ তৈরিতে প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে আজ ভার্চুয়াল বৈঠকে সোনিয়া গান্ধী
১৯৫৭-৬০ সাল পর্যন্ত বম্বে স্টেট বিধানসভার সদস্য ছিলেন সোলাঙ্কি। এরপর ১৯৬০ থেকে ৬৮ সাল পর্যন্ত গুজরাট বিধানসভার সদস্য ছিলেন। ১৯৭৬ সালে প্রথমবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। রাজ্যসভার সাংসদ ছিলেন ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত। ৮৮-তে প্ল্যানিং কমিশন এবং ১৯৯১ সালে পিভি নরসীমা রাওয়ের ক্যাবিনেটে বিদেশমন্ত্রী হন সোলাঙ্কি। ফের ১৯৯৪ সালে রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছেন তিনি। গুজরাটে প্রদেশ কংগ্রেসের ৩ বার সভাপতির দায়িত্ব সামলেছেন ইন্দিরা ঘনিষ্ঠ সোলাঙ্কি। আটের দশকে হরিজনরা যখন উচ্চবর্ণের দ্বারা ক্রমাগত আক্রান্ত হচ্ছিলেন, এ বিষয়ে ইন্দিরার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, তৎক্ষণাৎ সোলাঙ্কির এক কথায় বিমানে স্পেশাল পুলিস ফোর্স পাঠিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। ‘কূটনীতিক’ সোলাঙ্কির উপর এমনটাই ভরসা ছিল মিসেস গান্ধীর!