Opposition Meet: মমতার বৈঠকে কেন নেই পট্টনায়ক, রাও, জগনরা? রয়েছে জটিল রাজনৈতিক সমীকরণ

Opposition Meet at Delhi: রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ঐক্যমত্য প্রার্থী মনোনীত করতে নয়া দিল্লিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা বিরোধীদের বৈঠকে কেন যোগ দিল না বিজেডি, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, টিডিপি বা আপ? তাদের সিদ্ধান্তের পিছনে কাজ করছে কোন অঙ্ক?

Opposition Meet: মমতার বৈঠকে কেন নেই পট্টনায়ক, রাও, জগনরা? রয়েছে জটিল রাজনৈতিক সমীকরণ
যোগ না দেওয়া নেতাদের প্রত্যেকের রয়েছে নিজস্ব বাধ্যবাধকতা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 15, 2022 | 5:59 PM

নয়া দিল্লি: নামেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। বস্তুত, এই আপাত গুরুত্বহীন নির্বাচনকে ঘিরে চলছে ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি। সেই দিক থেকে বিজেপি এবং বিরোধী দলগুলি – দুই পক্ষের কাছেই দারুণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এই নির্বাচন। আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে একদিকে বিরোধীরা চেষ্টা করছে ঐক্যবদ্ধ হতে। পাশাপাশি, বিজেপির পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে বিরোধীদের ফাটল আরও বাড়িয়ে দেওয়ার। বুধবার (১৫ জুন) বিকেলেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আহ্বানে নয়া দিল্লির সংবিধান ক্লাবে বিরোধী দলের নেতারা বৈঠকে বসছেন। উদ্দেশ্য, এনডিএ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ঐক্যমত্য বিরোধী প্রার্থী মনোনীত করা। তবে, ওয়ইএসআর কংগ্রেস, বিজু জনতা দল, তেলেঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতি, আম আদমী পার্টি এই বৈঠকে যোগ দেয়নি। কেন যোগ দিলেন না তাঁরা?

বিভিন্ন বিরোধী দলগুলিকে এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি স্পষ্ট লিখেছিলেন, বৈঠকে যোগ না দিলেই তাঁদের উদ্দেশ্য জনসমক্ষে ফাঁস হয়ে যাবে। স্পষ্ট হয়ে যাবে, বিজেপির বিরুদ্ধে সেই দলগুলি লড়াই করতে চায় না। কিন্তু, এই সমীকরণ কি এতটাই সরল? না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা এদিনের বৈঠকে যারা যোগ দেননি, তাঁরা যে বিজেপির পক্ষে রয়েছেন, বিষয়টা এতটা সাদা-কালো নয়। বস্তুত, এই দলগুলি সাদা-কালোর মাঝে এক ধুসর জায়গায় রয়েছে। এদিনের বৈঠকে যোগ না দেওয়ার পিছনে রয়েছে বেশ কিছু জটিল রাজনৈতিক অঙ্ক। কী সেগুলি? আসুন জেনে নেওয়া যাক –

বিজু জনতা দল

নবীন পট্টনায়কের বিজেডি যে এদিনের সভায় কোনও প্রতিনিধি পাঠাবে না, তা তৃণমূল কংগ্রেসও জানত। কারণ পট্টনায়ক প্রকাশ্যেই বিজেপি এবং বিজেপি-বিরোধীদের থেকে সম-দূরত্ব রেখে চলার নীতি নিয়েছে। ওড়িশায় শক্তি বৃদ্ধির জন্য বর্তমানে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। ফলে, রাজ্য রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে রয়েছে বিজেডি। তবে তারা সাফ জানিয়েছে, রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সংঘাতে তারা যাবে না। অতীতে, এনআরসি বিলের মতো সংসদে এনডিএ সরকারের উত্থাপিত বেশ কিছু বিলকেও সমর্থনও করেছে বিজেডি। আসলে, নবীন পট্টনায়কের দল রাজ্য রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতিকে ভিন্ন চোখে দেখে। ২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে রামনাথ কোবিন্দকেই সমর্থন করেছিল বিজেডি।

ওয়াইএসআর কংগ্রেস পার্টি

জগনমোহন রেড্ডিকে এদিনের বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানোই হয়নি। তবে তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও, তিনি বা তাঁর দলের কোনও প্রতিনিধি সম্ভবত বৈঠকে যোগ দিতেন না। কারণ, তাঁর অন্য বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলির অভিযোগ, তাঁর বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেটের অসঙ্গত সম্পত্তির মামলা রয়েছে। এই, মামলা দিয়েই তাঁকে নিয়ন্ত্রণ করে বিজেপি। তবে শুধু এই মামলার চাপ নয়, জগনমোহনের বিরোধীদের সঙ্গে হাত না মেলানোর পিছনে রাজ্য রাজনীতির পরিস্থিতিও একটা বড় কারণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অন্ধ্রপ্রদেশে কংগ্রেস এখন অত্যন্ত দুর্বল। তাই জগনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী টিডিপি। অতীতে বিজেপির সঙ্গে জোটে ছিল টিডিপি। জগনের প্রধান লক্ষ্য বিজেপি এবং টিডিপি-কে পরস্পরের থেকে দূরে সরানো। তাহলেই, রাজ্যে তাঁর ক্ষমতায় থাকাটা পাকা। এই উদ্দেশ্য পূরণের উদ্দেশ্যেই তিনি আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সমঝোতার পথে হাঁটতে পারেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতি

পাশাপাশি রাজ্য হলেও, তেলেঙ্গনার পরিস্থিতি অন্ধ্রের থেকে অনেকটাই আলাদা। ওয়াইএসআর কংগ্রেস যখন কেন্দ্রের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছে, টিআরএস বিজেপির থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছে। কারণ, বর্তমানে তেলেঙ্গনায় শক্তিবৃদ্ধি করতে কোমর বেঁধে নেমেছে বিজেপি। বিপদ বুঝেই নয়া কৌশল নিয়েছেন চন্দ্রশেখর রাও। সেই সঙ্গে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অরবিন্দ কেজরীবালের মতো তাঁরও জাতীয় রাজনীতির মুখ হওয়ার স্বপ্নও রয়েছে। তাহলে তিনি বিজেপি বিরোধী দলগুলির বৈঠকে যোগ দিলেন না কেন? আসলে তেলেঙ্গনায় রাও-এর প্রধান প্রতিপক্ষ এখনও কংগ্রেস। তাই কংগ্রেস রয়েছে, এমন বিজেপি বিরোধী জোটের অংশ হওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তবে, বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিবাদও তিনি চালিয়ে যাবেন বলেই মনে করা হচ্ছে। তাই বৈঠকে যোগ না দিলেও শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধীদের মনোনীকত প্রার্থীকেই সমর্থন করবে টিআরএস, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

আম আদমি পার্টি

বিজেপি বিরোধী জোটের অংশ হওয়া নিয়ে টিআরএস-এর মতো দ্বিধা রয়েছে আম আদমি পার্টিরও। বিজেপির বিরোধিতা করলেও, একই রকম ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গেও সমান দূরত্ব রেখে চলে আপ। চলতি বছরেই পঞ্জাবে কংগ্রেসকে হারিয়েই ক্ষমতা দখল করেছে আপ। তাই, কংগ্রেস আছে এমন বিরোধী জোটে অংশ নেওয়াটা আপের পক্ষেও সমস্যার। মমতার সঙ্গে কেজরীবালের ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভাল হলেও, বিজেপি বিরোধী মুখ হওয়ার প্রতিযোগিতাও রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো, অরবিন্দ কেজরীবালও সারা দেশে কংগ্রেসের ছেড়ে যাওয়া রাজনৈতিক জমি দখল করাকেই পাখির চোখ করেছেন। এই অবস্থায়, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে না হলেও, তলে তলে যোগাযোগে রাখবে আপ। শেষ পর্যন্ত তারাও বিরোধীদের মনোনীত প্রার্থীকেই সমর্থন করবে তারা। ইতিমধ্যেই শরদ পওয়ারকে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দিয়ে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন আপ দলের রাজ্যসভার সাংসদ সঞ্জয় সিং।

এআইমিম

এআইমিম-কে আমন্ত্রণই জানাননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসাদুদ্দীন ওয়াইসি জানিয়েছেন, ডাকা হলেও বৈঠকে যোগ দিতেন না। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস তাঁর দলের সম্পর্কে কটু কথা বলে। তবে, তিনি বৈঠকে যেতেন না কংগ্রেসের জন্য। কংগ্রেস রয়েছে, এমন কোনও জোটের অংশ হবে না এআইমিম। তবে শুধু কংগ্রেস নয়, রাজনৈতিক কারণেই তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেও দূরত্ব রাখাই মিমের পক্ষে সুবিধাজনক অবস্থান।