Subrata Mukherjee passes away: বালিগঞ্জে শুরু, বালিগঞ্জেই শেষ… মাঝে বর্ণময় ৫০ বছর, পরিষদীয় রাজনীতিতে সুব্রতর সফরনামা

Subrata Mukherjee death: মাত্র ২৬ বছর বয়সে মন্ত্রী। বাংলার রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত সবথেকে কম বয়সি মন্ত্রী তিনিই। প্রায় এক অর্ধ্ব শতকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের।

Subrata Mukherjee passes away: বালিগঞ্জে শুরু, বালিগঞ্জেই শেষ... মাঝে বর্ণময়  ৫০ বছর, পরিষদীয় রাজনীতিতে সুব্রতর সফরনামা
বঙ্গ রাজনীতিতে এক যুগের অবসান
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 05, 2021 | 12:56 AM

কলকাতা: আদ্যোপ্রান্ত কংগ্রেসি ঘরানার মানুষটা আজ পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। বঙ্গ রাজনীতিতে একটা যুগের অবসান হল আজ। প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সি, সোমেন মিত্রর দেশে রওনা দিয়েছেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। বাংলার রাজনীতিতে এক মহীরূহের মতো ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। মাত্র ২৬ বছর বয়সে মন্ত্রী। বাংলার রাজনীতিতে এখন পর্যন্ত সবথেকে কম বয়সি মন্ত্রী তিনিই। প্রায় এক অর্ধ্ব শতকের বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন কাটিয়ে আজ রাত ৯ টা ২২ মিনিটে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রয়াত হয়েছেন তিনি।

ছাত্র রাজনীতি দিয়ে হাতেখড়ি। শুরুটা হয়েছিল ছাত্র পরিষদের হাত ধরে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক উত্থানের কথা বলতে গেলে, অবশ্যই প্রথমে নাম আসবে বঙ্গবাসী কলেজের। ষাটের দশকে এখান থেকেই তাঁর ছাত্র রাজনীতিতে পা রাখা। খুব কম সময়ে সকলের নজর কেড়েছিলেন। নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। ছাত্র পরিষদের সভাপতিও হয়েছিলেন। প্রিয়-সুব্রত জুটিও এই সময় থেকেই… প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির থুড়ি ‘প্রিয়দা’র ডান হাত হয়ে উঠেছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। যাঁরা তাঁদের খুব কাছে থেকে দেখেছেন, তাঁরা বলেন, ইন্দিরা গান্ধীও নাকি তাঁকে বেশ পছন্দ করতেন।

তারপর থেকে আর কোনওদিন পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি সুব্রতকে। প্রথমবার ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন ১৯৭১ সালে। বয়স তখন বছর ২৫ হবে। আর প্রথম বারেরই বাজিমাত। বালিগঞ্জ কেন্দ্র থেকে প্রথমবারেই জয়। এরপর ১৯৭২ সালে ফের বালিগঞ্জ থেকে জিতে আসেন। তরুণ সুব্রতর উপর ভরসা রাখেন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। নিজের মন্ত্রিসভায় জায়গা দেন সুব্রতকে। তখন সুব্রত মুখোপাধ্যায় তখন সবে কলেজ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে পা রেখেছেন। বয়স তখন মাত্র ২৬। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। একসঙ্গে ১৩ টি দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও সামলেছেন। বাংলার এতদিনের রাজনৈতিক ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবথেকে কম বয়সে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার কৃতিত্ব তাঁরই রয়েছে। সেই যে শুরু… আর থেমে থাকেননি সুব্রত। বাংলা পরিষদীয় রাজনীতিতে প্রায় একটি অর্ধ্বশতক কাটিয়ে আজ ৭৫ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন তিনি।

এরপর কংগ্রেসকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে বামেরা। প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোটের হাওয়া তখন বাংলায়। কংগ্রেসের সাম্রাজ্য ভেঙে পড়ে। আর সেই ঝড়ে, বালিগঞ্জের আসনও হাতছাড়া হয়েছিল সুব্রতর। পরে ১৯৮২ সালে তিনি নতুন কেন্দ্র জোড়াবাগান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আবার জয়ী হন। পরপর তিনবারের বিধায়ক জোড়াবাগান থেকে। ১৯৯৬ সালের আগে পর্যন্ত জোড়াবাগানই ছিল তাঁর বিধানসভা কেন্দ্র। তারপর আবার বিধানসভা কেন্দ্র বদল। এবার দাঁড়ালেন চৌরঙ্গী থেকে। সেবারও জয়ী হন। যে কেন্দ্র থেকেই হোক না কেন, নিজের ব্যক্তিগত ক্যারিশ্মার প্রতিফলন প্রতিবারের ভোটেই দেখিয়েছেন সুব্রত।

এরপর সুব্রত আইএলওর গভর্নিং বডিতে দ্বিতীয়বারের জন্য মনোনয়ন দিতে চাইলে, তাতে সায় দেয় না আইএনটিইউসি। ততক্ষণে মমতাও কংগ্রেস ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজের দল গঠন করেছেন। আইএনটিইউসির সিদ্ধান্তে ‘বিরক্ত’ সুব্রতও এসে যোগ দেন মমতার দলে। তখন ২০০০ সাল। কংগ্রেসের বিধায়ক থাকাকালীনই পৌরভোটে তৃণমূলের টিকিটে ভোটে লড়েন। জিতে মেয়র হন কলকাতার। এরপর ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফের একবার চৌরঙ্গী থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। প্রমাণ করে দিয়েছিলেন, দল বদল করলেও জনপ্রিয়তা এতটুকুও কমেনি। নতুন দলের হয়েও চৌরঙ্গী থেকে জিতে আসেন সুব্রত।

মমতাকে ভীষণ স্নেহ করতেন সুব্রত। মমতাও ‘সুব্রতদা’ বলে ডাকতেন সেই কংগ্রেসের সময় থেকে। মমতা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়ে ওঠার এই রাজনৈতিক যাত্রায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের অনেকটা হাত ছিল। সুব্রতর থেকে রাজনীতির অনেক কিছুই শিখেছেন মমতা। দু’জনের ব্যক্তিগত সম্পর্কও অত্যন্ত সুমধুর। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেমনই হোক না কেন, রাজনৈতিক কর্তব্য পালনে কোনওদিন দ্বিধাবোধ করেননি সুব্রত। ২০০৫ সালের পৌরভোটের আগে আগে মমতার সঙ্গে মতানৈক্য। তৃণমূল ছেড়ে বেরিয়ে আসতে দ্বিতীয়বার ভাবেননি।

এরপর মাঝে বছর পাঁচেক কংগ্রেসে কাটিয়ে আবার বোন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে ফিরে আসেন। আর এর জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ ছেড়ে দিতেও দুবার ভাবেননি। রাজ্যে তখন আবার প্রতিষ্ঠানবিরোধী ভোটের হাওয়া। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে চারিদিকে তৃণমূলের জয়জয়াকার। নিজের পুরানো কেন্দ্র বালিগঞ্জ থেকে জিতে আসেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। সুব্রতদার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার উপর ভরসা রাখেন মমতা। মমতার মন্ত্রিসভার জনস্বাস্থ্য মন্ত্রী হন সুব্রত। এর পাশাপাশি পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব সামলান তিনি। আর চলতি বছরের বিধানসভা নির্বাচনেও সেই বালিগঞ্জ থেকেই রেকর্ড ভোটে জয়ী হন তিনি।

আরও পড়ুন : Subrata Mukherjee passes away: ‘সেদিনও আমার সঙ্গে দেখা হল… হাসল’; সুব্রতদা আর ফিরবেন না, মেনে নিতে পারছেন না মমতা