Adhir Chowdhury: ২৫ বছরের গড়, বাউন্সার সামলে রক্ষা করতে পারবেন অধীর?

Adhir Chowdhury: ২০১৯ সালে নিজের খাসতালুকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছিল অধীর চৌধুরীকে। ২০১৯ সালে অধীরেরই একসময়ের শিষ্য অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডকে বহরমপুরে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। গুরু-শিষ্য দুজনেই ৫ লক্ষের বেশি ভোট পান।

Adhir Chowdhury: ২৫ বছরের গড়, বাউন্সার সামলে রক্ষা করতে পারবেন অধীর?
অধীর চৌধুরীImage Credit source: Twitter
Follow Us:
| Updated on: Mar 21, 2024 | 12:05 PM

কলকাতা ও বহরমপুর: তিনি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বহরমপুর তাঁর খাস তালুক। সেখানকার ভূমিপুত্র তিনি। ১৯৯৯ সাল থেকে মুর্শিদাবাদের এই লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ। সেই অধীর চৌধুরীকে এবার লোকসভা নির্বাচনে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, ২৫ বছরের সাংসদ এবার অনেকটাই চাপে পড়েছেন। এবারের নির্বাচন তাঁর কাছে সহজ হবে না বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

২০১৪ সালে বহরমপুর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বীকে প্রায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন অধীর চৌধুরী। তৃণমূল এই আসনে প্রার্থী করেছিল গায়ক ইন্দ্রনীল সেনকে। তাঁকে ৩ লক্ষ ৫৬ হাজারের বেশি ভোটে হারান অধীর। তবে ২০১৯ সালে নিজের খাসতালুকে কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। ২০১৯ সালে অধীরেরই একসময়ের শিষ্য অপূর্ব সরকার ওরফে ডেভিডকে বহরমপুরে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। গুরু-শিষ্য দুজনেই ৫ লক্ষের বেশি ভোট পান। তবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে প্রায় সাড়ে আশি হাজার ভোটে জয়ী হন অধীর।

তার পর গত পাঁচ বছরে ভাগীরথী নদী দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। একুশের নির্বাচনে এই লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসন খালি হাতে ফিরিয়েছে কংগ্রেসকে। ৬টি আসন জিতেছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল। এবং একটি আসন পায় বিজেপি। সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে ছিল কংগ্রেস। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, একুশের নির্বাচনে ভোটের ধর্মীয় মেরুকরণ হয়েছিল। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী, এই জেলায় ৬৬ শতাংশ নাগরিক মুসলিম। রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে ভোটের ধর্মীয় মেরুকরণ হলে অধীর চৌধুরীকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে।

উনিশের লোকসভা নির্বাচনে অধীরকে বাঁচিয়েছিল কান্দি আর বহরমপুর বিধানসভা এলাকা। বর্তমান পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের একটিও বিধায়ক নেই এই কেন্দ্রে। শুধু এই কেন্দ্র কেন, বাংলাতে কংগ্রেসের বিধায়ক সংখ্যা শূন্য। ২০২৩ সালে মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি আসনে উপনির্বাচনে জিতেছিল বাম-কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। তিনিও কয়েকমাস পর তৃণমূলে যোগ দেন। আবার বামেদের সঙ্গে জোট নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

অন্যদিকে বহরমপুর কেন্দ্রে জিততে মরিয়া শাসকদল তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট মাথায় রেখে ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে প্রার্থী করা হয়েছে এই কেন্দ্রে। ধর্মীয় মেরুকরণে হিন্দু ভোট যেমন বিজেপির দিকে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, সে রকম সংখ্যালঘু ভোটের সিংহভাগ তৃণমূলের দখলে যাবে বলে মত রাজনীতির কারবারিদের।

রাজনীতির কারবারিদের মতে অধীর চৌধুরীকে যেসব চ্যালেঞ্জ সামলাতে হবে-

৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ইস্যু-

২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা সংক্রান্ত সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এই নিয়ে সংসদে বলতে গিয়ে অধীর চৌধুরী প্রশ্ন তুলেছিলেন, কাশ্মীর সমস্যা কী করে অভ্যন্তরীণ বিষয় হয়? তাঁর এই মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন বিজেপি সাংসদরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অধীরের মন্তব্য বিরোধিতা করে সরব হয়েছিলেন। তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীও এই নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন বলে জানা যায়। সংসদে অধীরের পাশের আসনে বসেছিলেন তিনি। আর অধীরের পিছনে আসনে বসেছিলেন রাহুল গান্ধী। দু’জনকেই দৃশ্যত অস্বস্তিতে পড়তে দেখা গিয়েছিল। নির্বাচনী প্রচারে অধীরের সেই মন্তব্যকে হাতিয়ার করতে পারে বিজেপি।

CAA চালু-

২০১৯ সালের ডিসেম্বর CAA পাশ হয় সংসদে। তারপর ২০২১ সালে নিজের গড়ে ধাক্কা খান অধীর। এবার লোকসভা নির্বাচনের আগে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন চালু করেছে কেন্দ্র। এর প্রভাব কতটা পড়ে সেটা দেখার।

সংখ্যালঘু প্রার্থী দিয়ে ‘চাল’ শাসকদলের-

এই আসনে তৃণমূল প্রার্থী করেছে প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ৫ লক্ষের বেশি ভোট পেয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এবার ভোটের ধর্মীয় মেরুকরণ হলে তার লাভ পেতে পারে তৃণমূল। অধীর চৌধুরীও এটা বুঝেছেন। তাই, ইউসুফ পাঠানকে রাজ্যের শাসকদল প্রার্থী করার পরই তিনি বলেন, ভোট কাটতেই প্রার্থী করা হয়েছে ইউসুফকে। শাসকদলকে আক্রমণ করে তিনি বলেছিলেন, বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কোনও না কোনও মুসলিম প্রার্থী দাঁড় করিয়ে সংখ্যালঘু ভোটের বিভাজন ঘটাতে চাইছে। লক্ষ্য একটাই অধীর চৌধুরীকে হারাও।

রাম মন্দির নির্মাণ-

বিজেপি বহরমপুরে প্রার্থী করেছে চিকিৎসক নির্মলকুমার সাহাকে। বিজেপির প্রচারে উঠে আসতে পারে রাম মন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠার কথা। ভোটের ধর্মীয় মেরুকরণ হলে তার লাভ পেতে পারে বিজেপি।

রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, এবারের নির্বাচন কার্যত লিটমাস টেস্ট বছর সাতষট্টির অধীরের কাছে। বহরমপুর কেন্দ্রকে নিজের হাতের তালুর মতো চেনেন প্রদেশ কংগ্রস সভাপতি। বিরোধীদের মোকাবিলা করতে এবার প্রচারে তাঁর স্লোগান, বহরমপুর নিজের ছেলেকেই চায়। ৭ মে তৃতীয় দফায় ভোট হবে বহরমপুরে। শেষ পর্যন্ত অধীর নিজের গড় রক্ষা করতে পারবেন নাকি অন্য কেউ জয়ের মালা পরবেন, তা জানা যাবে ৪ জুন।