মাঝরাস্তায় প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ‘নামিয়ে দেওয়া’, কী বলছেন অ্যাম্বুল্যান্স চালক
চালকের কথায়, “উনি যখন সিগন্যালে নামতে যাচ্ছেন তখন আমি বললাম সামনে বিড়লা মন্দির। সে কথা শুনে বিড়লা মন্দিরের কাছে নামিয়ে দিতে বলেন তিনি।... উনি যদি বাড়ি পর্যন্ত যেতে বলতেন তাহলে তা-ও যেতাম। কিন্তু উনি তা বলেননি।”
সৌরভ দত্ত: করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী (Former Health Minister) পার্থ দে’র (Partha Dey) সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত চারদিনে যে ঘটনা ঘিরে সমালোচনার ঝড় বহাল রয়েছে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলিতে। সেইসব সমালোচনার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সের পাইলট সুদীপ দলুইয়ের পাল্টা দাবি, “স্যার নিজেই বলেন আমি হেঁটে চলে যাব। উনি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বললে আমি বাড়ি পৌঁছে দিতাম।”
গত ৮ ডিসেম্বর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ছ’দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে সোমবার পার্থবাবুকে ছুটি দেওয়া হয়। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর চিকিৎসক কন্যা প্রপা দে’র অভিযোগ ছিল, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে আশি বছরের প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে নামিয়ে চালক হেঁটে বাড়ি চলে যাওয়ার কথা বলেন। শুধু কী তাই! প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা স্কুলশিক্ষা মন্ত্রীকে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে ঘুরপথে তাঁকে বাড়ির কাছাকাছি নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও ওঠে। করোনা থেকে সদ্য সুস্থ হয়ে ওঠা আশি বছরের বৃদ্ধকে হেঁটে বাড়ি পৌঁছনোর ‘পরামর্শ’ কতখানি যুক্তিসঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা।
আরও পড়ুন: জোরাল হচ্ছে কৃষক-শক্তি, আন্দোলনকারীদের পাশে ‘আত্মঘাতী’ অন্নদাতাদের পরিবার
অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই চালককে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সোমবারের ঘটনাক্রম প্রসঙ্গে চালকের দাবি, পর্যাপ্ত অ্যাম্বুল্যান্স-পাইলট না থাকায় আইবি-২ থেকে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়া আইবি-৬ থেকে আরও দু’জন রোগীকে নিয়ে তিনি বালিগঞ্জের উদ্দেশে রওনা হন। অন্য দুই রোগীর গন্তব্য ছিল বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড।
করোনা হাসপাতালে ভর্তি হতে হলে আমার প্রথম পছন্দ বেলেঘাটা আই ডি হাসপাতাল। কিন্তু আ্যম্বুলেন্স ও অন্যান্য পরিসেবায় এরকম ত্রুটি গত কয়েক মাসে ঘটেই চলেছে। চাপের তুলনায় যানবাহন ও কর্মী অপর্যাপ্ত। এই ঘটনায় সমস্যা কোথায় খোঁজ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কি কিছু করতে পারেন? @MamataOfficial pic.twitter.com/f9V1Ux4UwD
— Surjya Kanta Mishra (@mishra_surjya) December 15, 2020
চালক বলেন, “কোথায় যাবেন জিজ্ঞাসা করলে স্যার বলেন, পাম অ্যাভিনিউ। পাম অ্যাভিনিউ আমি যেহেতু চিনি না তাই স্যারকে বলেছিলাম, বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দিলে আমি পৌঁছে দেব। উনি তখন বলেন বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে যেতে হবে।” সেই মতো বিল্ডিং মোড় থেকে ইএম বাইপাসের রাস্তা ধরেন অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। সুদীপবাবুর দাবি, পার্ক সার্কাস চার নম্বর সেতু ধরে ভিতরের রাস্তা দিয়ে তিনি বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছাকাছি যান। সেই রাস্তা চিনতে না পেরে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির সিগন্যালের কাছে পার্থবাবু চালককে নামিয়ে দিতে বলেন।
চালকের কথায়, “উনি যখন সিগন্যালে নামতে যাচ্ছেন তখন আমি বললাম সামনে বিড়লা মন্দির। সে কথা শুনে বিড়লা মন্দিরের কাছে নামিয়ে দিতে বলেন তিনি। উনি নেমে নিজে রাস্তা পার করতে যাচ্ছিলেন। আমি সে কথা না শুনে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিই। উনি যদি বাড়ি পর্যন্ত যেতে বলতেন তাহলে তা-ও যেতাম। কিন্তু উনি তা বলেননি।”
আরও পড়ুন: ফেসবুকে ‘বেসুরো’ অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ, জল্পনা উস্কে পরে পোস্ট ডিলিট
একজন রোগী এ কথা বললেও তিনি কেন একা যেতে দিলেন? রাস্তা পার করে দেওয়ার মতো একই ভাবে বাড়িও তো পৌঁছে দেওয়া যেত! চালক বলছেন, “করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা অনেক রোগী চান না ১০২ অ্যাম্বুল্যান্স তাঁদের বাড়ি পর্যন্ত যাক। আমাদের তো নামই হয়ে গিয়েছে করোনা গাড়ি! আমি ভেবেছিলাম, উনি বোধহয় সে জন্যই নিজে হেঁটে যাওয়ার কথা বলছেন।”
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, করোনা রোগী হাসপাতাল থেকে ছুটি পেলেও দীর্ঘদিন শরীরে দুর্বলতা থাকে। আশি বছরের একজন বৃদ্ধের ক্ষেত্রে সেই সম্ভাবনা আরও বেশি। তাই কোনও ভাবে রোগীকে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। কিন্তু চালক যে ‘স্টিগমা’র কথা বলছেন তা-ও বাস্তব।
চালকের দাবি প্রসঙ্গে প্রাক্তন মন্ত্রীর কন্যার প্রতিক্রিয়া, “কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের মাঝরাস্তায় রোগীকে নামিয়ে দেওয়ার কথা নয়। অ্যাম্বুল্যান্সের চালক রাস্তা চিনতে পারেননি। রাস্তা চেনার চেষ্টাও করেননি। পাম অ্যাভিনিউয়ে সরকারি আবাসন কোথায় অনেক ভাবে চালককে বোঝানোর চেষ্টা হয়েছিল। এ নিয়ে চালকের যদি কোনও বক্তব্য থাকে তাহলে সরাসরি উনি আমাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলুন। সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে কিছু বলব না।”