বাবা-দাদা শারীরিক নির্যাতন করে! আদালতে মামলা যেতেই বেরিয়ে এল যুবতীর ভয়ঙ্কর রোগ

Schizophrenia: সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রিন্সিপাল তো অভিযোগ পেয়েই হতভম্ব। এমনকি সদ্য যুবতী জানাচ্ছেন, তাঁর ওপর রোজ চলে শারীরিক নির্যাতন। আর সেখানে মা নাকি এসব সমর্থন করেন! এর পর তিনি সোজা এফয়াইয়ার করেন আর্মহাস্ট স্ট্রিট থানায়।

বাবা-দাদা শারীরিক নির্যাতন করে! আদালতে মামলা যেতেই বেরিয়ে এল যুবতীর ভয়ঙ্কর রোগ
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 11, 2021 | 8:30 PM

শ্রাবন্তী সাহা: প্রখ্যাত চিত্রকর ভ্যান গঘ একদিন এক তর্কে জড়িয়ে পড়েন। বাড়তে বাড়তে তা এমন পর্যায়ে পোঁছয় যে ছুরি দিয়ে নিজের কানই কেটে ফেলেন তিনি। কেন? পরে তিনি বলেছিলেন, তিনি নাকি শুনতে পেয়েছিলেন কারা যেন বলছে “খুন করো ওকে”। পরবর্তীতে চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও গবেষকরা সন্দেহ করেছিলেন আসলে গঘ ছিলেন স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় (Schizophrenia) আক্রান্ত। বুধবার কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) এক মামলায় এক মায়ের আর্জি যেন সেই গল্পকেই স্মরণ করাল।

মনোবিদরা বলেন স্কিৎজোফ্রেনিয়া আসলে মানসিক অসুস্থতা। এলোমেলো চিন্তায় সকলকে সন্দেহ করতে শেখায় এই অসুখ। আক্রান্ত সম্পূর্ণ অন্য এক জগতে বাস করতে শুরু করেন। হ্যালুসিনেশন হয়। মানে কানে শব্দ শুনছেন, অথবা নাকে গন্ধ পাচ্ছেন, অথবা চোখে দেখতে পাচ্ছেন অথবা কোনও স্পর্শ পাচ্ছেন, অথচ যার কোনওটারই কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই। এমনই অসুখে আক্রান্ত টিটাগড়ের বাসিন্দা এক তরুণী।

কলেজ জীবন সবে শুরু। আর পাঁচটা বন্ধুবান্ধব যখন কলেজ জীবন চুটিয়ে এই উপভোগ করছেন তখন তাঁদের এই বন্ধুটি ঘোরতর সমস্যায়। প্রিন্সিপালকে হোয়াটস অ্যাপ করে জানাচ্ছেন বাবা, দাদা ও কাকার বিরুদ্ধে নালিশ। সুরেন্দ্রনাথ কলেজের প্রিন্সিপাল তো অভিযোগ পেয়েই হতভম্ব। এমনকি সদ্য যুবতী জানাচ্ছেন, তাঁর ওপর রোজ চলে শারীরিক নির্যাতন। আর সেখানে মা নাকি এসব সমর্থন করেন! এর পর তিনি সোজা এফআইআর করেন আর্মহাস্ট স্ট্রিট থানায়।

তদন্তে যে তথ্য উঠে এল অন্য তাতে বিস্মিত সবাই। ওই যুবতী আসলে স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এতদিন যা যা অভিযোগ করে এসেছেন সবই তাঁর কল্পনা! আর সেই কল্পনাকে বাস্তব ভেবে প্রিন্সিপালের কাছে অভিযোগ করেন বাবা-কাকা-দাদার বিরুদ্ধে। এর পর পুলিশের পক্ষ থেকে লুম্বিনি পার্কে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। বছর দুই পরে নিজেই বিচারকের কাছে হাজির হয়ে যুবতী জানালেন তিনি সুস্থ। এবার বাড়ি ফিরতে চান। মা-ই নিয়ে গেলেন তাঁকে বাড়িতে। কিন্তু আবার সেই একই সমস্যা।

মায়ের আইনজীবী সুমন সেনগুপ্ত এদিন হাইকোর্টে জানিয়েছেন, এবার নার্সিং কলেজের প্রিন্সিপালকে একই রকমের অভিযোগ করেছেন ওই যুবতী। বর্তমানে বাবা, দাদা কেউই থাকেন না তাঁর সঙ্গে। কিন্তু তিনি নালিশ জানাচ্ছেন যে তাঁর ওপর এঁরা অত্যাচার করছে! এদিন আদালতে মেয়ের চিকিৎসার জন্য বিশেষ মেডিকেল বোর্ড গড়ে দেওয়ার জন্য আর্জি জানান মা। তাঁর দাবি, অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসা হলে মেয়ে তার ভুল বুঝতে পারবে।

বিচারপতি রাজ শেখর মান্থা আগামী শুক্রবার মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করেছেন। মানসিক রোগের মধ্যে আপাতত সবচেয়ে জটিল মনে করা হয় স্কিৎজোফ্রেনিয়াকে। দীর্ঘস্থায়ী রোগকে সঙ্গী করেই পৃথিবী বিখ্যাত হয়েছেন গঘের মতো অনেকেই। আক্রান্তের সঙ্গে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আত্মীয়দের আপাতত একটাই আর্জি সুস্থ হোক তাঁদের জীবনও। আরও পড়ুন: এখনও চেয়ারম্যান পদে মুকুল, পিএসি-র দ্বিতীয় বৈঠকও বয়কট করলেন শুভেন্দুরা