একুশে বাজিমাতের লক্ষ্যে বঙ্গ বিজেপির ঠিকানা বদল
লড়াই যে কতটা কঠিন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা আছে নেতৃত্বের। আর তাই তাঁরা মনে করছে, মুরলীধর সেন লেনের অপ্রসস্ত কার্যালয় থেকে এই যুদ্ধের রণনীতি তৈরি এবং রূপায়ন অসম্ভব। তাই নয়া ঠিকানার দরকার।
কলকাতা: বঙ্গ বিজেপির (Bengal BJP) দীর্ঘ যাত্রাপথের সাক্ষী হয়ে রয়েছে মুরলীধর সেন লেনের কার্যালয়। এক সময় কেবল ‘বড় বাজারের পার্টি’ থেকে লোকসভায় ১৮টি আসন পাওয়া- পুরো যাত্রাপথের একমাত্র সাক্ষী ওই বাড়িটিই। সবকিছুই ওই সরু গলির অপরিসর ঘর থেকে পরিচালিত হয়েছে। নেতৃত্ব মনে করছে, বিজেপি আজ বাংলায় মহীরুহ হওয়ার পথে। তাদের ক্ষমতা এখন এতটাই যে বাংলার শাসন ভার হাতে পাওয়ার স্বপ্ন দেখছে গেরুয়া পার্টি। তবে এই লড়াই যে কতটা কঠিন সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা আছে নেতৃত্বের। আর তাই তাঁরা মনে করছে, মুরলীধর সেন লেনের অপ্রসস্ত কার্যালয় থেকে এই যুদ্ধের রণনীতি তৈরি এবং রূপায়ন অসম্ভব। তাই নয়া ঠিকানার দরকার।
এবারই প্রথম ৬ নম্বর মুরলীধর সেন লেনের বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভোট পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ কর্পোরেট কায়দার কার্যালয় তৈরি করল গেরুয়া শিবির। বুধবার এই ভবনের উদ্বোধন করেছেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে.পি. নাড্ডা (JP Nadda)। ভোট পরিচালনার শুরু থেকে শেষ সবটাই হবে হেস্টিংস মোড়ে অবস্থিত এই সুবিশাল অফিস থেকেই।
বিজেপির এই ওয়াররুমের ঠিকানা- হেস্টিংসের ২ নম্বর সেন্ট জর্জেস গেট রোড। এই ভবনের প্রথম চারটি তলা নিয়ে ২০২১-এর লড়াইয়ের মূল কার্যালয় তৈরি হচ্ছে। এখানেই দলের আইটি সেল, কল সেন্টার থাকবে। এ ছাড়াও থাকছে হেলিকপ্টার ও গাড়ি মনিটরিং সেন্টার। নেতারা প্রচারে এলে হেলিকপ্টার কোথায় যাবে, কটা হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখতে হবে, সব কিছুই পরিচালিত হবে এখান থেকে।
আর কয়েকদিন পর প্রতিদিনই রাজ্যে আসতে শুরু করবেন কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রীরা। আট তলায় তাঁদের বিশ্রামের ব্যবস্থা থাকছে। সাত তলায় রয়েছে দলের সাধারণ সম্পাদকদের অফিস। চারতলায় আইটি সেল। ছয় তলায় কলসেন্টার। সাত এবং আট তলায় ৬৫০ বর্গফুট জায়গা। কল সেন্টার ও আইটি সেল মিলিয়ে কয়েকশো ছেলে-মেয়ে এখনই কাজ করছে এখান থেকে। এখানে রয়েছে কনফারেন্স রুমও। সব মিলিয়ে এ যেন পুরোপুরি কর্পোরেট কায়দার কার্যালয়। ২০২১-এর (West Bengal Assembly Election 2021) লড়াই পরিচালনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে চলেছে এই বিশাল ওয়াররুম।
আরও পড়ুন: উত্তরকন্যা অভিযানে শামিল সব প্রথম সারির বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর
এই কার্যালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে মুরলী ধর সেন লেন ছেড়ে দিচ্ছে না বিজেপি। বর্তমান রাজ্য দফতর ব্যবহার হবে বিজেপির কলকাতা জোনের ভোট পরিচালনা কেন্দ্র হিসাবে।
মোদী-শাহরা বাংলার ভোটকে কতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন, তা বিজেপির এই নতুন ভবনের কলেবর স্পষ্ট করে দিয়েছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই ধরনের কার্যলয় তৈরি করে ভোট পরিচালনার নজির এ রাজ্যে নেই। রাজনীতির কারবারিরা এ কথা এক বাক্যে স্বীকার করছেন। বিজেপি জাতীয় সভাপতি নিজেও অফিস এবং কার্যালয়ের মধ্যে পার্থক্য কী সেটাও এদিন উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘অফিসে আমরা কাজের সময় যাই এবং কাজ মিটে গেলে চলে আসি। কিন্তু, কার্যালয় সারাক্ষণ চলে।‘ নতুন এই ভবনকে সেই কার্যালয় বলেই আখ্যা দেন নাড্ডা। বলেন, এই কার্যালয় থেকেই দলের সংস্কৃতি বাকি কর্মীদের মধ্যেও চারিত হবে।
খাতায় কলমে রাজ্যে বিরোধীদের আসনে কংগ্রেস থাকলেও, পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটের পর একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে তৃণমূলের সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেওয়ার মতো অবস্থায় একমাত্র রয়েছে বিজেপিই, এমনটাই মত সিংহ ভাগ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকের। ফলে সময় যত গড়াচ্ছে, ক্ষমতা দখলের লড়াই ততটাই তীব্র আকার ধারণ করছে। এমন একটা সন্ধিক্ষণে ভোটে জেতার জন্যও যে সম্পূর্ণ পেশাদার একটা ‘সাপোর্ট সিস্টেম’ প্রয়োজন, সেটা অনুভব করে তৃণমূল বা অন্যান্য দলের আগেই এমন বড় পদক্ষেপ বিজেপির। মনে রাখতে হবে, ভোট পরিচালনার জন্য এর আগে রাজ্যের কোনও দলকেই এহেন নির্বাচনী দফতর বানাতে দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: দলীয় কার্যালয়ে বসবেন না শুভেন্দু! নন্দীগ্রামে নিজস্ব কার্যালয় খুললেন প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী