21 July: ২১ জুলাই সভা করবেন শুভেন্দুও, শর্তসাপেক্ষে অনুমতি আদালতের

Calcutta High Court: মঙ্গলবার শুনানির সময় বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য বিজেপিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে অন্য কোনও দিন সভা করা হয়। পাশাপাশি রাজ্যের থেকেও জানতে চেয়েছিলেন, রাত ৮ টার পর সভা করতে দেওয়া হলে, কোনও সমস্যা হবে কি না।

21 July: ২১ জুলাই সভা করবেন শুভেন্দুও, শর্তসাপেক্ষে অনুমতি আদালতের
শুভেন্দু অধিকারী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 20, 2022 | 4:29 PM

কলকাতা : শেষ পর্যন্ত হাসি চওড়া হল বিজেপির। ২১ জুলাই অনুমতি পেল বিজেপি। তবে বেশ কিছু শর্ত মেনে, তবেই সভা করতে পারবে বিজেপি। ২১ জুলাই পাল্টা সভা করার জন্য সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। সভা করার অনুমতি পাওয়ার জন্য মামলা গড়িয়েছিল হাইকোর্ট পর্যন্ত। মঙ্গলবার শুনানির সময় বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য বিজেপিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যাতে অন্য কোনও দিন সভা করা হয়। পাশাপাশি রাজ্যের থেকেও জানতে চেয়েছিলেন, রাত ৮ টার পর সভা করতে দেওয়া হলে, কোনও সমস্যা হবে কি না। বুধবার শুনানি শেষে বিজেপির সভার পক্ষেই মত দিলেন বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য। তবে শর্তসাপেক্ষে।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক কী কী শর্ত পূরণ করে ২১ জুলাই পাল্টা সভা করতে পারবে বিজেপি?

১) আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, রাত ৮ টার আগে সভা করার যাবে না। রাত ১০ টার মধ্যে শেষ করতে হবে সভা।

২) শান্তি – শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হবে বিজেপিকে।

৩) বিজেপির জেলা অফিস সংলগ্ন মনসাতলা মাঠেই করতে হবে সভা।

৪) বুধবার সন্ধে ৬ টার মধ্যে স্থানীয় থানাকে সভাস্থল সম্পর্কে জানাতে হবে ।

৫) পুলিশ সেই সভাস্থল পরিদর্শন করবে এবং সেখানে দুই হাজার লোকের সমাগমের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে কি না, তা দেখবে ।

৬) যদি দেখা যায় দুই হাজার মানুষের জন্য ওই সভাস্থলটি পর্যাপ্ত নয়, তাহলে কত মানুষ নিয়ে সভা করা হবে, সেই বিষয়ে পুলিশকে জানাবে বিজেপি শিবির।

৭) কোনওভাবেই যাতে জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ না হয়, সেইদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিজেপিকে।

৮) সন্ধে সাড়ে ৬ টার পর থেকে মানুষ এবং গাড়ি ওই সভাস্থলের দিকে যেতে পারবে।

৯) হাওড়ার স্থানীয় মানুষ ছাড়া, বাইরের কোনও লোক যেন সভায় না আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে বিজেপি।

১০) সভাস্থল পরিদর্শন করে দেখবেন এসডিও। সভাস্থল ২০ টি লাউড স্পিকারের জন্য উপযুক্ত কি না, তা খতিয়ে দেখবেন তিনি। এসডিও যদি মনে করেন, তাহলে লাউড স্পিকারের সংখ্যা কমাতে পারেন তিনি।

১১) কিছুদিন আগেই যেহেতু ওই এলাকায় অশান্তি হয়েছিল তাই , বক্তারা যেন কোনওরকম প্ররোচনামূলক বক্তব্য না রাখেন তা নিশ্চিত করতে হবে। যাতে মানুষ উত্তেজিত হন, এমন কোনও প্ররোচনামূলক ভিডিয়ো না দেখানো হয়, তাও নিশ্চিত করতে হবে বিজেপিকে।

উল্লেখ্য, বুধবার আদালতে শুনানির সময় বিজেপির আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার জানিয়েছিলেন, বিজেপি বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধে ৭ টা পর্যন্ত সভা করার অনুমতি চায়। তবে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্যের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, যদি আগামিকালই অর্থাৎ, ২১ জুলাইতেই সভা করতে হয়, তাহলে রাত ৮ টার আগে অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়।

এদিন হাইকোর্টে বিজেপির আইনজীবী রাজদীপ মজুমদার জানান, ১৮ জুলাই বাউড়িয়ার একটি জুটমিল, তাদের জমিতে বিজেপিকে সভা করার অনুমতি দিয়েছিল। এরপরের দিনই ১৫ জুলাই আদালতে মামলা করা হয়। আর তারপরই ১৬ জুলাই পুলিশ জুটমিল কর্তৃপক্ষকে ভয় দেখায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। ফলে জুটমিলের তরফে এখন আর তাদের জমিতে সভা করার অনুমতি দিচ্ছে না। বিজেপির আইনজীবী আরও জানান, এই ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা করা হয় বিজেপির তরফ থেকে। বাউড়িয়ায় বিজেপির পার্টি অফিসের নিজস্ব জমি রয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় শ্মশান কমিটিও তাদের একটি জমি সভার জন্য ব্যবহার করার অনুমতি দিতে সম্মত হয়েছে। কিন্তু বিকল্প ব্যবস্থা করার পরেও পুলিশের তরফে বিজেপির আবেদনের কোনও জবাব পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার বিজেপির তরফ থেকে আদালতে জানানো হয়েছিল, তাদের সভা হাওড়ার উলুবেড়িয়ার মধ্যেই সীমিত থাকবে। তবে বিচারপতি প্রশ্ন করেছিলেন ২১ জুলাই যদি বিজেপি সভা করে সেক্ষেত্রে, নেতারা কীভাবে হাওড়ায় যাবেন? তাঁদের তো কলকাতার উপর দিয়েই যেতে হবে। বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য আরও মন্তব্য করেছিলেন, নেতাদের তো আর আকাশপথে উড়িয়ে নিয়ে গিয়ে সেখানে নামানো হবে না। সেই সঙ্গে কত লোক আসবে বিজেপির সভায় সেই প্রশ্নও করেছিলেন তিনি। বুধবার বিজেপির আইনজীবী আদালতে জানিয়েছেন, সভায় দুই হাজার লোক আসবে। দিল্লি থেকে যে নেতারা আসবেন, তাঁরা ভুবনেশ্বরে নামবেন এবং সেখান থেকে হাওড়ায় আসবেন। বিজেপি চাইছে, বিকেল সাড়ে ৫ টা থেকে সন্ধে ৭ টা পর্যন্ত যাতে সভা করার অনুমতি দেওয়া হয়।

তবে বিজেপির আইনজীবীর বক্তব্য শুনে বিচারপতি মৌসুমী ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যদি আগামিকালই সভা করতে হয়, তাহলে রাত ৮ টার আগে সভার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়। বিচারপতি বিজেপির আইনজীবীকে পাল্টা প্রশ্ন করেন, “ব্যক্তিগত জমিতে যদি কেউ সভা করার অনুমতি না দেয়, সেক্ষেত্রে আদালত কীভাবে সেই সিদ্ধান্তের উপর হস্তক্ষেপ করবে?” তিনি আরও স্পষ্ট করে বলেন, “এই ধরনের মাইক্রো-ম্যানেজমেন্ট করা আদালতের কাজ নয়।” বিচারপতির প্রশ্ন, বিজেপির কাছে যদি জমিই না থাকে, তাহলে পুলিশ কীভাবে অনুমতি দেবে?

উল্লেখ্য, বিচারপতি ভট্টাচার্য মঙ্গলবারই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, আদালত চায় যাতে আমজনতার শান্তি ও স্বস্তি বজায় থাকে। সেই কারণেই বার বার বিজেপিকে অন্যদিন সভা করার পরামর্শ দিয়েছিলেন তিনি। বুধবার সেই একই কথা তিনি আবারও বলেন। বিচারপতির মন্তব্য, আগামিকাল কারও জন্মবার্ষিকী নয় বা কোনও বিশেষ দিনও নয়। তাহলে অন্যদিন সভা করতে অসুবিধা কোথায়? তা জানতে চান তিনি। সেই সঙ্গে বিচারপতি অতীতে শ্যামাপ্রসাদের জন্মবার্ষিকীকে সভা সম্পর্কিত তাঁর নির্দেশের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। বলেন, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে সভা করার অনুমতি দিয়েছিলাম। কারণ, সেটি নির্দিষ্ট দিনেই করতে হত।” কিন্তু এ ক্ষেত্রে যখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন থাকছে, তখন অন্য কোনও দিনে যদি বিজেপি সভা করে, তাহলে অসুবিধা কীসের, তা জানতে চান বিচারপতি।

২১ জুলাই রাত ৮ টার পর বিজেপির সভা করতে দিলে কোনও সমস্যা হবে কি না, সেই বিষয়টিও রাজ্যের কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলেন বিচারপতি ভট্টাচার্য। সেই প্রেক্ষিতে রাজ্যের তরফে আইনজীবী অনির্বাণ রায় আদালতে জানান, আগামিকাল ধর্মতলায় শাসক দলের সমাবেশে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আসবে। এর মধ্যে প্রায় ৭ হাজার গাড়ি আসবে ঝাড়গ্রাম এবং দুই মেদিনীপুর থেকে। এরা সবাই ধর্মতলায় আসবে হাওড়ার উপর থেকেই। পাশাপাশি হাওড়া থেকেও প্রায় ৫০০ গাড়ি আসবে। ট্রেনে এবং পায়ে হেঁটেও অনেকে আসবেন। প্রায় মাঝরাত পর্যন্ত মানুষজন বাড়ি ফিরবে। পুলিশকর্মীরা তিন শিফটে কাজ করবেন।