২০ বছর পর কাটল অন্ধকার, বন্ধুদের সাহায্যেই দৃষ্টি ফিরে পেলেন দুঃস্থ মেধাবী অনুপ
২০ বছর মায়ের মুখ দেখতে পেলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অনুপ
প্রীতম দে: কুড়ি বছর পর আবার দেখা। কুড়ি বছর কেটেছে নিকষ কালো অন্ধকারে।
অনুপ সিং। ২৩ বছর বয়স। বাবা নেই। পরিবারে দুই বোন এক ভাই। মা বাড়ি বাড়ি রান্নার কাজ করেন। এ ভাবেই সংসার চলে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ছেন অনুপ।
পাঁচ বছর বয়সে ডায়েরিয়া হয়। তারপরই হঠাৎ দৃষ্টিশক্তি চলে যায়। দিশেহারা মা হন্যে হয়ে ছুটে গিয়েছেন হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে। মায়ের সঙ্গে ছিলেন প্রবীণ সিদাম সাহা। তিনি নাকি দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন। না উনি ডাক্তার নন। চোখ নিয়েই কাজ করেন। চোখ সংগ্রহ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘চোখ না পুড়িয়ে দান করলে আরেকজন দেখে বাঁচে। আমি অনেক চেষ্টা করেছি, বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছি। কিন্তু ডাক্তারবাবুদের একটাই কথা, ‘ওকে কোনও ব্লাইন্ড স্কুলে ভর্তি করে দিন।’
উত্তরপাড়া ব্লাইন্ড স্কুলে ভর্তি করা হয় অনুপকে। সেখানে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। পরে বেহালা ব্লাইন্ড স্কুলে ভর্তি করা হয় তাঁকে। সেখানে পড়াশোনা করে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করছেন অনুপ। সিদাম বাবু বলেন, ‘ওর মনের একটা ইচ্ছা টের পেতাম বার বার। আবার যদি দেখতে পাই…।’ হায়দরাবাদে এল ভি প্রসাদ আই হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয় অনুপকে। সেখানে এই লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে কলেজের এক বন্ধুকে নিয়ে পাড়ি দেন অনুপ। চোখের অপারেশন হয়। বন্ধুরাই চাঁদা তুলে দেয় যাতায়াতের খরচ।
আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের হাত ধরে বাংলায় ঢুকছে বর্ষা, আজ থেকেই শুরু বৃষ্টির দাপট
এখন ২০ শতাংশ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়েছেন তিনি। দু’মাস বাদে চেকআপের জন্য আবার নিয়ে যাওয়া হবে তাঁকে। চিকিৎসকদের আশা, আরেকটু ভাল হতে পারে তাঁর দৃষ্টিশক্তি। দৃষ্টি ফিরে পেয়ে আনন্দে চোখের কোণে জল অনুপের। বললেন, ‘মায়ের মুখ দেখতে পাওয়ার থেকে বড় আনন্দ আর কী বা হতে পারে। বলে বোঝানো যায়না।’