Cyclone: ৬ বছরে ৩ বার দুই সাগরে ‘যমজ ঘূর্ণিঝড়’! ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনাও কি বাড়ছে?

Cyclone: ইদানীং কালের মধ্যে ২০১৮ সালেও দুর্গাপুজোর মধ্যে জোড়া ঘূর্ণিঝড় দেখেছে উত্তর ভারত মহাসাগর। আরব সাগরে লুবন, বঙ্গোপসাগরে তিতলি। ওড়িশায় আছড়ে পড়া তিতলির প্রভাবে বাংলাতেও পুজোর মুখে বৃষ্টি নামে।

Cyclone: ৬ বছরে ৩ বার দুই সাগরে 'যমজ ঘূর্ণিঝড়'! 'বিরলের মধ্যে বিরলতম' ঘটনাও কি বাড়ছে?
৬ বছরে ৩ বার দুই সাগরে 'যমজ ঘূর্ণিঝড়'Image Credit source: Tv9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 24, 2023 | 6:44 PM

আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তেজ। বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় হামুন। একই সময়ে দুই সাগরে দুই ঘূর্ণিঝড়। এবং দু’টিই তীব্র বা তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। উত্তর ভারত মহাসাগরে এমন যমজ ঘূর্ণিঝড় এই প্রথম, তা নয়। তবে বিরল। মৌসম ভবনের ভাষায়, বিরলের মধ্যে বিরলতম। কিন্তু এই তকমা ক’বছর থাকবে? মৌসম ভবনের হিসেব বলছে, ২০১৮ থেকে ২০২৩, এই ৬ বছরে এই নিয়ে তৃতীয় বার যমজ ঘূর্ণিঝড় দেখে ফেলল দেশের দু’দিকের দুই সমুদ্র। অথচ, ১৩২ বছরের ইতিহাসে মাত্র ২৭তম ঘটনা। তবে কি যমজ ঘূর্ণিঝড়ের প্রবণতা, ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ ঘটনাও বাড়ছে? জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রশ্নটা ভাবাচ্ছে আবহবিদদের।

বর্ষার আগে একবার, বর্ষার পরে একবার, বছরে দু’বার ঘূর্ণিঝড় মরসুম। এ বছর বর্ষার আগে এসেছিল ঘূর্ণিঝড় মোখা আর ঘূর্ণিঝড় বিপর্যয়। বর্ষার পরে এল তেজ আর হামুন। ২১ অক্টোবর আরব সাগরে তেজের জন্ম। তার পর দফায় দফায় শক্তি বাড়িয়ে চরম তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। শেষমেশ কিছুটা শক্তি খুইয়ে, ২৪ অক্টোবর ভোররাতে ইয়েমেন উপকূলে আছড়ে পড়ে। বঙ্গোপসাগরে হামুনের জন্ম তার কয়েক ঘণ্টা আগে, ২৩ অক্টোবর বিকেলে। জন্মের পর অল্প সময়েই, শক্তি বাড়িয়ে অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় হামুন। তার অভিমুখ বাংলাদেশ। মৌসম ভবনের সর্বশেষ পূর্বাভাস, একাদশীর সকালের আগেই চট্টগ্রাম লাগোয়া উপকূলে আছড়ে পড়বে হামুন।

ইদানীং কালের মধ্যে ২০১৮ সালেও দুর্গাপুজোর মধ্যে জোড়া ঘূর্ণিঝড় দেখেছে উত্তর ভারত মহাসাগর। আরব সাগরে লুবন, বঙ্গোপসাগরে তিতলি। ওড়িশায় আছড়ে পড়া তিতলির প্রভাবে বাংলাতেও পুজোর মুখে বৃষ্টি নামে। পরের বছর, ২০১৯ সালের অক্টোবর-শেষে আরব সাগরে একই সঙ্গে জোড়া ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। সুপার সাইক্লোন কিয়ার, চরম তীব্র ঘূর্ণিঝড় মহা। কিয়ার দুর্বল হতে না হতেই বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হয় ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। একদিকে গুজরাতমুখী মহা, অন্য দিকে সুন্দরবনমুখী বুলবুল। সেই প্রথম, আয়লার ১০ বছর পর কোনও ঘূর্ণিঝড় বাংলার উপকূলে আছড়ে পড়ে।

এর আগের উদাহরণটি অনেক আগের, ১৯৭৭ সালের। নভেম্বরে কিছু দিনের ব্যবধানে দু’টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় বঙ্গোপসাগরে। এর মধ্যে একটি তামিলনাড়ু উপকূল হয়ে আরব সাগরে গিয়ে পড়ে। বেশ কয়েক দিন এমন হয়েছিল, কয়েকশো কিলোমিটারের মধ্যে জোড়া ঘূর্ণিঝড়। দেশের দু’কুল দফারফা। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, ১৩২ বছরে এরকম যমজ ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির ঘটনা ঘটল মাত্র ২৭বার। তাই একে বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা হিসেবেই দেখতে চান আবহবিদরা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ”আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগরে অনেক সময়ই একাধিক ঘূর্ণিঝড় থাকে। পর পর লাইন দিয়ে থাকার মতো। বঙ্গোপসাগর, আরব সাগরে এই ধরনের প্রবণতা একটু বিরলই।”

আইপিসিসি প্রতিটি রিপোর্টেই নিয়ম করে বলেছে, তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আনাগোনা বাড়বে। পূর্বাভাস ভুল হয়নি। ২০১৯ সালে এক বছরে ৮টি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয় দুই সাগরে। চলতি মরসুমের সব ক’টি ঘূর্ণিঝড়ই তীব্র বা তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী। হামুন যেমন, প্রথম দিকে মামুলি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার ইঙ্গিতই পেয়েছিলেন আবহবিদরা। পরে সেটিও শক্তিধর হয়ে ওঠে। সঞ্জীববাবুর কথায়, ”দুই সাগরের মধ্যে দূরত্ব অনেকটা থাকলেও বায়ুপ্রবাহের অদৃশ্য দাঁড়িপাল্লা কাজ করে। তেজ একটু দুর্বল হয়ে ইয়েমেনে ঢুকে যাওয়ার পরই, দ্রুত শক্তি বেড়েছে হামুনের। তাই অতি গভীর নিম্নচাপ নয়, ঘূর্ণিঝড় রূপেই বাংলাদেশ উপকূলে আছড়ে পড়বে হামুন।”

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কায় সমুদ্রে জলতলের তাপমাত্রা বাড়ছে। সাধারণত ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই যথেষ্ট। এই মুহূর্তে দুই সাগরের জলতলের তাপমাত্রা ২৯-৩০ ডিগ্রির আশপাশে, কোথাও তার চেয়েও বেশি। এমন ”উত্তপ্ত পরিস্থিতি”তে এরকম যমজ ঘূর্ণিঝড় দেখার সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে, সতর্ক করছেন আবহবিদরা।