এই দু-তিন মাস যেন ‘স্বাস্থ্যসাথী’র রোগীদের প্রত্যাখ্যান না করা হয়, আবেদন রাজ্যের

বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দাবি পূরণের জন্য দু-তিন মাস সময় চেয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে পাল্টা আশ্বাস চেয়ে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে যেন কোনও রোগীকে তারা প্রত্যাখ্যান না করে

এই দু-তিন মাস যেন 'স্বাস্থ্যসাথী'র রোগীদের প্রত্যাখ্যান না করা হয়, আবেদন রাজ্যের
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: Jan 09, 2021 | 9:09 PM

কলকাতা: সবার জন্য স্বাস্থ্যসাথী (Swasthya Sathi) প্রকল্প রূপায়ণের পথ মসৃণ করতে দ্বিতীয় দফায় বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক করল রাজ্য প্রশাসন। ১০ দিন আগে স্বাস্থ্যভবনে হওয়া বৈঠকের সূত্র ধরেই এদিন নবান্নে বৈঠকে বসেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় (Alapan Bandyopadhyay)। বেসরকারি হাসপাতালের প্রতিনিধিদল ছাড়াও স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। সূত্রের খবর, এদিনে বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দাবি পূরণের জন্য দু-তিন মাস সময় চেয়ে নিয়েছে রাজ্য সরকার। তবে পাল্টা আশ্বাস চেয়ে বলা হয়েছে, এই সময়ের মধ্যে যেন কোনও রোগীকে তারা প্রত্যাখ্যান না করে। এদিনের বৈঠক ইতিবাচকভাবেই শেষ হয়েছে বলে খবর।

আপামর রাজ্যবাসীকে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসার ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই অসন্তোষ বাড়ছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলির মধ্যে। উত্তোরত্তর তা বৃদ্ধি পেতে থাকায় গত ২৮ ডিসেম্বরও বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে স্বাস্থ্যভবনে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ্যের আধিকারিকরা। সেখানেই একটা বিষয় স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল বেসরকারি হাসপাতালগুলির পক্ষ থেকে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে বিভিন্ন চিকিৎসার যে খরচ বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তাতে বিপুল সংখ্যক মানুষকে পরিষেবা দেওয়া কার্যত অসম্ভব। শনিবার পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসাথীর জন্য ৫৫ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে ২৪ লক্ষ কার্ড ইতিমধ্যেই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। পরিবার প্রতি গড়ে ৫ সদস্য ধরা হলে এখনই স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় চলে এসেছেন রাজ্যের প্রায় ১.২ কোটি মানুষ।

সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে মুখ্যসচিবও বেসরকারি হাসপাতালগুলির এই দাবি শুনেছেন। চিকিৎসার খরচ বৃদ্ধির জন্য যে কমিটি গড়তে চাওয়া হয়েছে, তাতেও সম্মতি জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু যতদিন না সেই কমিটি গঠন ও খরচের নতুন পরিকাঠামো নির্ধারিত হচ্ছে, ততদিন বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে তিনি সহযোগিতার আবেদন জানিয়েছেন।

কী সেই সহযোগিতা? মুখ্যসচিব বলেছেন, গোটা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে যতদিন সময় লাগবে, ততদিন যেন কোনও বেসরকারি হাসপাতাল রোগীকে প্রত্যাখান না করে। একই সঙ্গে কমিটি যে খরচের পরিকাঠামো নির্ধারণ করবে, প্রত্যেকটি বেসরকারি হাসপাতাল যাতে সেটাই অনুসরণ করে তাও নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করে জানানো হয়েছে, হাসপাতালগুলির কোনও বিল বকেয়া রাখা হবে না।

এই প্রসঙ্গে পূর্বাঞ্চলের বেসরকারি হাসপাতালগুলির সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া বলেছেন, “বৈঠক অত্যন্ত ইতিবাচক হয়েছে। তিন-চারজনের একটি কমিটির দ্বারা সরকারের সঙ্গে বসে স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং ফরম্যাট তৈরি করা হবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই কমিটি নিয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসা হবে।” একই সঙ্গে জেলা ও পঞ্চায়েত স্তরে ছোট থেকে বড় বেসরকারি হাসপাতালকেও যাতে এই প্রকল্পেও আওতায় নিয়ে আসা হয়, সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটা হলে, প্রাথমিক ও কম গুরুতর চিকিৎসার জন্য কলকাতায় ছুটে আসতে হবে না রোগীদের।

আরও পড়ুন: ১৬ জানুয়ারি দেশে শুরু টিকাকরণ! অগ্রাধিকার স্বাস্থ্যকর্মীদের

আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে স্বাস্থ্যসাথীর মতো জনদরদী পরিষেবার সাফল্যকে হাতিয়ার করেই প্রচারে শান দিচ্ছে রাজ্যের শাসকদল। এমন অবস্থায় ভোটের মাত্র কয়েকমাস বাকি থাকতে এই সাফল্যের খতিয়ানে যাতে কোনও কালির দাগ না লেগে যায়, তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চে চেষ্টা করছে রাজ্য। এই অবস্থায় যদি রোগী প্রত্যাখ্যানের মতো ঘটনা ঘটে, তখন রাজ্যের এই স্বাস্থ্যবিমা নিয়েই বড় প্রশ্ন উঠে যাবে। আগামী দু-তিন মাসে এই কার্ড থেকে যত বেশি মানুষ লাভবান হবেন, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব যে ভোটবাক্সে পড়বে, তা দিনের আলোর মতোই পরিষ্কার। তাই এই প্রকল্পকে সফল করতে যারপরনাই চেষ্টা রাজ্য চালাচ্ছে। আজকের বৈঠকে শেষে এমনটাই পর্যবেক্ষণ বেসরকারি হাসপাতালগুলির। বৈঠক ইতিবাচকভাবে শেষ হওয়ায় বেসরকারি হাসপাতালগুলিও রাজ্যের আবেদনে সাড়া দেবে বলেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: ‘নির্বাচন যেন রক্তক্ষয়ী না হয়’, শাহকে বাংলার হাওয়া বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন রাজ্যপাল