শিক্ষক নিয়োগের নয়া বিধিতে ‘সাদা খাতা’ দুর্নীতির আশঙ্কা বিরোধীদের
সরকারি তরফে দাবি, এর ফলে স্বচ্ছতা বাড়বে নিয়োগে। কারণ, ইন্টারভিউ প্যানেল নিয়ে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের অবকাশই থাকবে না আগামী দিনে। যদিও এই যুক্তি মানতে রাজি নয় অধিকাংশ শিক্ষক সংগঠন।
কলকাতা: শিক্ষক নিয়োগের (Teacher Appoitment) পরীক্ষায় ইন্টারভিউ থাকবে না। শিক্ষাগত যোগ্যতাও বিবেচ্য হবে না। শুধু লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই শিক্ষক নিয়োগ হবে। যার জেরে ‘সাদা খাতা’ জমা দুর্নীতি আরও বাড়বে বলে মনে করছে বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি।
সোমবার নয়া নিয়োগ বিধি প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন। শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষার উপরই আগামী দিনে নিয়োগ হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনে। পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত টেট, বিষয়, জেনারেল পেপার মিলিয়ে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বিষয় এবং জেনারেল পেপারের সঙ্গে প্রিলিমিনারি টেস্টের বা পিটির জন্য ১৫০ নম্বরের এমসিকিউ পরীক্ষা হবে। সব মিলিয়ে ৩০০ নম্বরের পরীক্ষা। লিখিত পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতেই নিয়োগ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে। সরকারি তরফে দাবি, এর ফলে স্বচ্ছতা বাড়বে নিয়োগে। কারণ, ইন্টারভিউ প্যানেল নিয়ে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের অবকাশই থাকবে না আগামী দিনে। যদিও এই যুক্তি মানতে রাজি নয় অধিকাংশ শিক্ষক সংগঠন।
এবিটিএ’র সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, ‘এর ফলে সাদা খাতা জমা দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে। দুর্নীতি কমার বদলে বাড়বে। প্রশ্নপত্র আগেই পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করা প্রার্থীরা গুরুত্ব পাবে না! সবটাই নিজেদের লোক ঢোকানোর কৌশলমাত্র। এর আমরা তীব্র প্রতিবাদ করছি।’
আরও পড়ুন: দ্বাদশ শ্রেণির সব পড়ুয়াকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
একইভাবে বঙ্গীয় শিক্ষক শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচ্য হবে না অর্থাৎ মুড়ি-মিছরি এক হয়ে যাবে। সাদা খাতা জমা দিয়ে আসবে। ফলে নিয়োগ দুর্নীতির রাস্তা প্রশস্ত হবে।’ এসটিইএ’র সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, ‘প্রার্থী নিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোনও জায়গায় ইন্টারভিউ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাঁর মানসিকতা বোঝা যায়, ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে তাঁরা কতটা সংযোগ স্থাপন করতে পারছে তাও বোঝা যায়। শুধু লিখিত পরীক্ষা দিয়ে এটা বোঝা সম্ভব! এটা আমরা একেবারেই সমর্থন করছি না।’ তৃণমূল শিক্ষা সেলের তরফে দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মতে, ‘সরকার চিন্তা ভাবনা করেই নিয়োগ বিধি বদল করেছে। আগামী দিনে নিয়োগ পদ্ধতি অনেক দ্রুত অনেক স্বচ্ছতার সঙ্গে হবে।’
প্রসঙ্গত বাম আমলে ইন্টারভিউয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ নম্বর। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে তা বেড়ে ৩০ হয়। পরে কমে হয়। ইন্টারভিউ বোর্ডে নম্বর নিয়ে গত বছরে বারবার দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। তাই নতুন নিয়মে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিকে ১৬ হাজার ৫০০ শূন্যপদে নিয়োগ, ঘোষণা মমতার