হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার রাজ্য প্রাণী, এবার সংরক্ষণে নয়া উদ্যোগ আলিপুর চিড়িয়াখানার

Fishing Cat: ডোরাকাটা চেহারায় একেবারে বাঘের আদল। আদতে অবশ্য ভীতু, মাছ খেকো বিড়াল।

হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার রাজ্য প্রাণী, এবার সংরক্ষণে নয়া উদ্যোগ আলিপুর চিড়িয়াখানার
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 12, 2021 | 2:27 PM

পৌলমী রায় বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলার রাজ্য প্রাণী বাঘরোল। তবু খাঁটি বাঙালি এই মেছো বিড়াল বা বাঘরোলের কদর কই! উল্টে প্রকৃতি থেকে হারাতে বসেছে সে। এবার সেই হিসাবটাই পাল্টে দিতে উদ্যোগী আলিপুর চিড়িয়াখানা।

ডোরাকাটা চেহারায় একেবারে বাঘের আদল। আদতে অবশ্য ভীতু, মাছ খেকো বিড়াল। জলাজমি হারিয়ে ফেলা শহর, মফস্বলে হু হু করে কমছে বাঘরোল। লোকালয়ে ঢুকে পড়লে প্রাণ যাচ্ছে মানুষের হাতেও। তাই প্রকৃতিতে এই বাঘরোলকে টিকিয়ে রাখতে তাদের প্রজনন প্রকল্প হাতে নিল আলিপুর চিড়িয়াখানা। সেখানকার খাঁচাতেই এক টুকরো জল জঙ্গল। সেখানেই মেছো বিড়ালের বেঁচে থাকার যাবতীয় উপকরণও মজুত। এ ভাবেই বাঘরোল প্রজননের ব্যবস্থা করেছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।

আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত জানান, “চিড়িয়াখানায় আমরা একটা কনজারভেশন ব্রিডিং প্রোগ্রাম নিয়েছি। এখানে এখন ১২টা বাঘরোল আছে। তাদের আমরা নজরে রাখব। ওদের সংখ্যা যেমন বাড়ানো হবে, তেমনই ওদের ব্যবহার, গতিবিধির উপরও নজরদারি চলবে। যখন সংখ্যায় বাড়বে, ইচ্ছা আছে প্রকৃতির মাঝে ছেড়ে দেওয়ার। এতে ওরাও প্রকৃতি থেকে হারাবে না।”

প্রতি বছর ৩০ শতাংশ হারে কমছে বাঘরোলের সংখ্যা। সারা পৃথিবীর বাঘরোলের উপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গিয়েছে, ওদের বসবাসের ৯০ শতাংশই লোকালয় সংলগ্ন এলাকা। ওদের বাঁচিয়ে রাখতে গেলে মানুষের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। এ রাজ্যে হাওড়া, হুগলি, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পূর্ব-পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে পাওয়া যায় বাঘরোল। ভারত ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ার জলাভূমি অঞ্চলেও বাঘরোলের দেখা পাওয়া যায়।

বাঘের মতো চেহারা। তাই ভয়ের চোটে বাঘরোল মেরে ফেলে মানুষও। তা আটকাতে যে সচেতনতাই শেষ কথা, মানছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। আশিস সামন্তর কথায়, “মানুষের মধ্যে সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। হাওড়া, হুগলি, সুন্দরবনের বিভিন্ন এনজিও বাঘরোল নিয়ে কাজ করছে। ওরা সচেতনতাও বাড়াচ্ছে।” শুধু রাজ্য প্রাণীর তকমা আছে বলেই নয়, মেছো বিড়ালের বেঁচে থাকা জরুরি বাস্তুতন্ত্রের জন্যও। সেখানে চিড়িয়াখানার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সদর্থক বলেই মনে করছেন পশুপ্রেমীরা। আরও পড়ুন: অনলাইনে পড়তে বলছে সরকার! কুলুঙ্গিতে উঠল কতজনের বইখাতা, সমীক্ষা করছে এসএফআই

পরিবেশবিদ স্বাতী নন্দী চক্রবর্তীর কথায়, “বাঘরোল কিন্তু এখন রেড লিস্টে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ ইউনিয়ন বা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের। সেখানে এই কৃত্রিম প্রজনন নিঃসন্দেহে ভাল উদ্যোগ। তবে কৃত্রিম প্রজননের পর ওদের তো একটা সময় প্রকৃতিতে ছাড়া হবে, তখন মানুষ যেন সচেতনতা জারি রেখে ওদের না মেরে ফেলে, এটাই বড় কথা।”