ভোট বিপর্যয়ের দায় সিপিএমের ঘাড়ে চাপিয়ে নতুন সম্ভাবনার দরজা খোলা রাখল ফরোয়ার্ড ব্লক
সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে রীতিমতো বোমা ফাটালেন ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়।
কলকাতা: এতদিন নানা সূত্র মারফৎ জানতে পারা গিয়েছিল শরিকদের অসন্তোষের কথা। কিন্তু এবার প্রকাশ্যে ভোট বিপর্যয়ের জন্য সম্পূর্ণ এবং এককভাবে সিপিএমকেই দায়ী করল ফরোয়ার্ড ব্লক। সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে রীতিমতো বোমা ফাটালেন ফরোয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়। আইএসএফ এবং কংগ্রেসের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাই কাল হয়েছে বলেও বৃহস্পতিবার উল্লেখ করেছেন নরেনবাবু। সিপিএমের এই নির্ভরশীলতাকে দুভার্গ্যজনক এবং লজ্জাজনক বলেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। এমনকী, সিপিএমের সঙ্গে কতদিন একসঙ্গে চলা হবে, সেই নিয়ে জল্পনা জিইয়ে রেখেছেন তিনি।
ফরোয়ার্ড ব্লকের স্পষ্ট অভিযোগ, বিধানসভা ভোটে বামপন্থী শরিকদের উপেক্ষা করা হয়েছে সিপিএমের পক্ষ থেকে। বরং বেশি ভরসা দেখানো হয়েছিল কংগ্রেস-আইএসএফের উপর। নরেনবাবুর কথায়, “এটা আমজনতা ও কর্মীরা মেনে নেয়নি। এটা লজ্জাজনক যে বামপন্থীরা বামপন্থীদের উপর ভরসা করতে পারছে না। বামপন্থীদের কী এমন হল কংগ্রেস বা আইএসএফ-কে ভরসা করতে পারল। কিন্তু ফব-সহ অন্য বামপন্থীরাদের উপর ভরসা করল না।”
ভোট-বিপর্যয় নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে ফরোয়ার্ড ব্লকের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি, “শ্রেণিগত দিক থেকে আমরা সরে এসেছি। সে কারণেই নির্বাচনের ক্ষেত্রে এমন ফল। ধর্মীয় মেরুকরণ আর কর্পোরেট পুঁজির মেরুকরণ, জাতপাতের মেরুকরণ-এর ভোট হয়েছে।” ১০০ টি বিধানসভার উপর সমীক্ষা চালিয়ে তাঁরা জানতে পেরেছেন, ৩০ থেকে ৩৫ জায়গায় নাকি বুথ এজেন্টও ছিল না। এমনকী, বেশিরভাগ বিধানসভায় কোনও কোনও বৈঠক হয়নি। বেশিরভাগ জায়গায় বুথ কমিটিও হয়নি বলে দাবি করেছেন নরেন চট্টোপাধ্যায়।
সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থতার দায় কার্যত চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে সিপিএমের উপর। বামপন্থীদের কর্পোরেট নির্ভরশীলতা আদৌ বাস্তববাদী নয়, কিন্তু বড় শরিক অর্থাৎ সিপিএম সেটা অনুধাবন করতে পারেনি বলেই দাবি করেছেন নরেনবাবু। সিপিএমের সঙ্গে ফরোয়ার্ড ব্লকের ভবিষ্যৎ নিয়েও বড় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে আজকের এই সাংবাদিক বৈঠকে পর। কারণ রাজ্য সম্পাদক ইঙ্গিতপূর্ণভাবে জানিয়ে রেখেছেন, “যারা আমাদের সঙ্গে একমত হবেন না, তাঁদের সঙ্গে এক সঙ্গে চলতে পারা যাবে না।” যদিও কোন বিকল্প পথে হাঁটা হবে সেটা নিয়ে ধোঁশায়া কাটেনি। যদিও সিদ্ধান্তভার ন্যস্ত করা হয়েছে বড় শরিকদের উপরই। সিপিএম যদি ফব-র সঙ্গে চলতে চায়, তবে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু তেমনটা না হলে নতুন সম্ভাবনার দরজা খোলাই রাখা হয়েছে। নতুন মতবাদকে সঙ্গী করে আগামিদিনে পথ চলার কথাও বলতে শোনা গিয়েছে ফরোয়ার্ড ব্লক রাজ্য সম্পাদককে।
তবে শুধু মাত্র সিপিএমকে দুষে বড় শরিকের ঘাড়ে দায় চাপানো হলেও ব্যর্থতার দায় কি ফরোয়ার্ড ব্লক এড়িয়ে যেতে পারে? দায় নেওয়ার দায়িত্ব কি তাদের উপরও বর্তায় না? এই বিষয়ে অবশ্য কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি নরেন চট্টোপাধ্য়ায়। এই নিয়ে সিপিএমের কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আরও পড়ুন: আইন থেকে ‘বাঁচতে’ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন! দিলীপের খোঁচার পরই বাড়ি-মুখো মুকুল