Weather Update: অগস্টেও বৃষ্টির ঘাটতির আশঙ্কা, এ বার কি খরা দক্ষিণবঙ্গে?
Rain in August: পাট পচাতে হবে, আমন ধানের রোপণের কাজ সারতে হবে! সবাই আশায়, অগস্টে পুষিয়ে দেবে প্রকৃতি। সেই আশাতেও জল!
ক ম লে শ চৌ ধু রী
জুন-জুলাইয়ে প্রায় অর্ধেকও বৃষ্টি হয়নি দক্ষিণবঙ্গে। ঘাটতির ঘেরাটোপে উত্তরের মালদহ, দুই দিনাজপুরও। তীর্থের কাকের মতো আকাশের দিকে চেয়ে চাষিরা। পাট পচাতে হবে, আমন ধানের রোপণের কাজ সারতে হবে! সবাই আশায়, অগস্টে পুষিয়ে দেবে প্রকৃতি। সেই আশাতেও জল! মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, অগস্টেও ঘাটতির আশঙ্কা। অর্থাত্, বৃষ্টি হবে স্বাভাবিকের চেয়ে কম। শুধু দক্ষিণবঙ্গ নয়, উত্তরের জেলাতেও।
তবে কি এ বার খরা? ১২ বছর আগের গেরো বাইশেও?
শেষ বার ২০১০ সালে রাজ্যে খরা ঘোষণা হয়েছে। সে বছর ১১ জেলায় খরা ঘোষণা করেছিলেন তত্কালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এ বার পরিস্থিতি আরও শোচনীয়। ২০১০-এ জুনে ঘাটতি ছিল ১৬ শতাংশ, এ বার জুনে ৪৮ শতাংশ। ২০১০-এ জুলাইয়ে ঘাটতি ছিল ৪০ শতাংশ, এ বার জুলাইয়ে ৪৬ শতাংশ। সে বার অগাস্টেও ৪০ শতাংশ ঘাটতি ছিল, সেপ্টেম্বরে ২২ শতাংশ। মাঝের ১২ বছরে একাধিকবার জুন-জুলাই মিলিয়ে বড়সড় ঘাটতির মুখোমুখি হয়েছে বাংলা। কিন্তু অগস্টে বর্ষা মোটামুটি পুষিয়ে দেওয়ায় দরজায় কড়া নাড়েনি খরা। কিন্তু এ বার সেই আশঙ্কাই দানা বাঁধছে?
কেন খরার আশঙ্কা?
সোমবার মৌসম ভবন যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলেও পূর্ব ভারতে ঘাটতির আশঙ্কাই বেশি। আবহবিদদের দেওয়া মানচিত্র বলছে, দক্ষিণবঙ্গের বেশিরভাগ জেলায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হবে। শুধু বাংলাদেশ লাগোয়া কিছু জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। তাতে সার্বিক ঘাটতি কমবে না। চাষের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, ১৫ জুলাই থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত আমন ধান রোপণের কাজ চলে। রোপণের সময় যত পিছোবে, তত উত্পাদন মার খাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে থাকে ফসল তোলার সময় বৃষ্টির মুখোমুখি হওয়ার বিপদ। যাকে বলে, পাকা ধানে মই। ফলে অগস্টের ২০ তারিখের মধ্যে ঝেঁপে বৃষ্টি না নামলে রোপণ ব্যাপক ভাবে মার খাবে।
গত মরসুমে অতিবৃষ্টির জেরে বারবার ধানচাষে ক্ষতি হয়েছে। যার জেরে প্রতি কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে চালের দাম। এ বারও মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা। কিন্তু দায়ী হতে চলেছে অনাবৃষ্টি!
মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই, উত্তরবঙ্গেও অগাস্টে বৃষ্টির পরিস্থিতি ভাল দেখাচ্ছে না। বেশিরভাগ জেলায় ঘাটতির সম্ভাবনা। কিছু জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু সেই বৃষ্টি অগাস্টের শেষের দিকে হলে চাষের কোনও লাভ হবে না। বৃষ্টি দরকার আগামী ২-৩ সপ্তাহে। সেই আশা কম।” শুধু চাষ নয়, চিন্তা জলাধারের জল নিয়েও। সঞ্জীববাবুর কথায়, “জুন, জুলাইয়ে বেশি বৃষ্টি হয়নি। অগস্টেও অতিবৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। ফলে ঘাটতি মিটবে না বোঝাই যাচ্ছে। জলাধারগুলি যে ভবিষ্যতের জন্য জল জমিয়ে রাখবে, সে উপায়ও পাওয়া যাবে না।”
চলতি মরসুমের গোড়ায় দক্ষিণবঙ্গের জন্য খারাপ খবর শুনিয়েছিল মৌসম ভবন। অপেক্ষায় ঘাটতির ফাঁড়া, জুনের শুরুতেই আভাস দিয়েছিলেন আবহবিদরা। জুন-শেষে মৌসম ভবন পূর্বাভাস দেয়, জুলাইয়েও স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হবে। হুবহু মিলেছে দুই পূর্বাভাসই। ভরা বর্ষায় কালো মেঘের বদলে জুটেছে শরতের নীল আকাশ। ফল, ভয়াবহ। এই পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ারই আশঙ্কা।
অথচ, সার্বিকভাবে দেশে পুরো অন্য ছবি। এখনও ৭ শতাংশ বৃষ্টি উদ্বৃত্ত। আর দক্ষিণবঙ্গে ৪৭ শতাংশ ঘাটতি। আর ঘাটতি ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশে। এমন বৈষম্য কেন? সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, “এর অন্যতম কারণ, যে নিম্নচাপগুলি সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলি সবই ওড়িশা-ঘেঁষা। ফলে মৌসুমি অক্ষরেখা বেশিরভাগ সময় ওড়িশার উপর ছিল, আর নয়তো উত্তরবঙ্গের উপর। তাই দক্ষিণবঙ্গ প্রাপ্য বৃষ্টি পায়নি।” অগস্টেও এই প্রবণতারই পুনরাবৃত্তি হওয়ার জোর সম্ভাবনা।
এ বার কি তাহলে খরাই ভবিতব্য? বরাভয় নয়, বরাতে ভয়ই!