Swarnendu Das: পূর্ণচ্ছেদ-স্বর্ণেন্দু আর আমি
Swarnendu Das: অফিস যা চাইতো তার থেকে বেশি কিছু জোগাড় করে নিয়ে আসত এই ছেলেটি। পরিশ্রমী, খবরের গন্ধওয়ালা নাক আর এত মার্জিত, ভদ্র, সজ্জন রিপোর্টার ক্রমশ কমছে।
তন্ময় প্রামাণিক
“পারব দাদা।” আর বলবে না স্বর্ণেন্দু দাস। আমাদের স্বর্ণেন্দু। রিপোর্টার স্বর্ণেন্দু। অদ্ভুত কাজের নেশা। কোনও অ্যাসাইনমেন্ট দিলে কোনওদিন শুনিনি পারব না বা ডিউটি শেষ কিংবা অন্য কোনও বাহানা। অফিস যা চাইতো তার থেকে বেশি কিছু জোগাড় করে নিয়ে আসত এই ছেলেটি। পরিশ্রমী, খবরের গন্ধওয়ালা নাক আর এত মার্জিত, ভদ্র, সজ্জন রিপোর্টার ক্রমশ কমছে।
কেন যে আগে থেকে চিনলাম না স্বর্ণেন্দুকে? আমাকে এই প্রশ্ন তাড়া করছে ভোররাত থেকে। যখন তার চলে যাওয়ার সময় আগত, যখন তার মৃত্যুর অপেক্ষায় আমি ক্ষণ গুনছি। এখনো…এখনো…. স্বর্ণেন্দু বেঁচে আছে। হয়তো আর কিছুক্ষণ পর…। সেটাতে মঙ্গলবার সকালে পূর্ণচ্ছেদ পড়ল।
২০২০ সালে সিনিয়র সাংবাদিক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য ফোন করে বলেন, স্বর্ণেন্দু নামের একটি ছেলে আছে। তোরা সুযোগ দিতে পারিস। আমরা কয়েকজন খোঁজ খবর করে একমত যে স্বর্ণেন্দু আমাদের সহকর্মী হোক। তারপর ২০২১ সালের ৮ জানুয়ারি কাজে যোগ দিল। আর চ্যানেল শুরুর প্রথম দিন থেকেই জানান দিল সে টেলিভিশন সাংবাদিকতায় ছাপ রাখতে এসেছে। একের পর এক এক্সক্লুসিভ কপি। বিধানসভা ভোটে রিস্ক নিয়ে ঢুকে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়। বুঝতেই পারিনি সুখের সংসারে বিয়োগের অঙ্কে নাম লিখিয়ে ফেলেছে এই ভাইটা। বুঝতেই পারিনি তার অবহেলায় শরীর জুড়ে মৃত্যুর অণু-কণা ক্রমশ ভিড় বাড়াচ্ছে। তার নাছোড়বান্দা হার না মানা মনের অন্দরে মেঘ ঘনাচ্ছে দ্রুত। চেপে রাখা? নাকি ভুল সঙ্গে, ভুল পরামর্শে ক্যান্সার হারাতে ভুল “ওষুধে”র হাত ধরেছিল?
আমরা জানতে পারলাম শেষ দিকে। ক্যান্সার তখন মারণ বার্তা দিয়ে দিয়েছে মাথা থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত। তাকে সবরকম চিকিৎসার দায়িত্বের কথা জানিয়েছেন TV9 বাংলার ম্যানেজিং এডিটর অমৃতাংশু ভট্টাচাৰ্য। শুনল না। ধীরে ধীরে অফিস আসা বন্ধ। সহকর্মীদের অনুরোধ পাস কাটিয়ে ভরসা রাখল, বিশ্বাস করল সেই অজানা “ওষুধে “। তারপর শয্যাশায়ী। মুম্বই থেকে ফিরে আসার আর্জি ঘুরতে থাকল মুঠোফোনে। বন্ধুরা, অফিস, সহকর্মীরা মরিয়া স্বর্ণেন্দুকে ময়দানে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু তখন তো ইনজুরি টাইমও শেষ। খেলা শেষ। মুখ্যমন্ত্রী চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে ফিরিয়ে আনলেন। কিন্তু শরীর তো বিদ্রোহ করে বসে আছে। সময় গোনা শুরু। ক্রমশ বিছানায় মিশলো একটা দুর্দান্ত রিপোর্টার। কাছে গেলেই একটা কথা, “দাদা আমার পা-টা শুধু ঠিক করে দাও। দেখো আমি দারুণ স্টোরি এনে দেব। ”
স্বর্ণেন্দু স্টোরি আনতে গেল মঙ্গলবার ভোর রাতে। ওপারে। ভদ্র, সজ্জন আর সৎ হলে কি সেই মানুষের মরণ আগে হয়?
মরণ এই বেঁচে থাকা!!
পূর্ণচ্ছেদের আগেই যেন পূর্ণ ছেদ ঘটালি তুই।