আমফান মামলায় রাজ্যের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করল হাইকোর্ট

ক্যাগের দাবি, গত ২৩ ডিসেম্বর আমফানে ত্রাণ বণ্টন সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয় কিন্তু রাজ্য এড়িয়ে যায়। ৬ জানুয়ারি তথ্য চাইলে কোভিড পরিস্থিতির যুক্তি দেওয়া হয়

আমফান মামলায় রাজ্যের রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করল হাইকোর্ট
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jan 20, 2021 | 6:48 PM

কলকাতা: আমফান ত্রাণ অনিয়ম মামলায় ধাক্কা রাজ্যের। কলকাতা হাইকোর্টেরই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে রাজ্য যে পুনর্বিবেচনা আর্জি জানায়, বুধবার সরাসরি খারিজ করে দিল প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ। এ দিন স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়, কেন্দ্রীয় হিসাব রক্ষক সংস্থা ক্যাগই (কম্পট্রলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল অব ইন্ডিয়া) তদন্ত করবে। তবে, আগের রায়ের বেঁধে দেওয়া ৩ মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সময়সীমা তুলে নিল হাইকোর্ট।

মামলাকারীর আইনজীবী শমীক বাগচির বক্তব্য, কেন্দ্রের পাঠানো টাকা আমফান ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে সর্বত্র খরচ হয়নি। ওই টাকা কীভাবে ব্যবহার হয়েছে, তা যথাযথ তদন্ত হোক। গত ডিসেম্বর মাসে হাইকোর্টে এই আর্জি নিয়ে মামলা উঠলে, প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ক্যাগকে দায়িত্ব সঁপে এবং ৩ মাসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা বলে। কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযোগ, রাজ্যের কাছে এ বিষয়ে একাধিকবার তথ্য চাওয়া হলে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে এড়িয়ে গিয়েছে।

ক্যাগের দাবি, গত ২৩ ডিসেম্বর আমফানে ত্রাণ বণ্টন সংক্রান্ত তথ্য চাওয়া হয় কিন্তু রাজ্য এড়িয়ে যায়। ৬ জানুয়ারি তথ্য চাইলে কোভিড পরিস্থিতির যুক্তি দেওয়া হয়। ১০ জানুয়ারিতে বলা হয় গঙ্গাসাগর নিয়ে ব্যস্ত রাজ্য। ১৫ জানুয়ারি রাজ্য জানায়, হাইকোর্টে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তথ্য দেওয়া নিয়ে গড়িমসির অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ওয়াই জে দস্তুরের সওয়াল, আমফানের নয় মাস পরেও রাজ্য কেন তথ্য দিতে অপারগ? যেখানে আমফান ত্রান বণ্টনে আদালত সন্দেহ প্রকাশ করছে, রাজ্য কেন সাহায্য করছে না।

আরও পড়ুন- ধূপগুড়ির দুর্ঘটনাগ্রস্তদের পাশে মোদীর দফতর, এগিয়ে এলেন মমতাও

রাজ্যের আইনজীবী কিশোর দত্ত বলেন, “ফান্ড ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট সব সময় লাগে। এই শংসাপত্রের সাহায্যেই বলা সম্ভব কোথায় কত টাকা খরচ হয়েছে।” এই পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল জানান, প্রতি বছর রাজ্যকে কেন্দ্র যে টাকা পাঠায় তার জন্য ফান্ড ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমফানের মতো ঘটনায় এই শংসাপত্র প্রয়োজন হয় না। কেন্দ্রের এই যুক্তি দেওয়ার পরই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে দেয়। ক্যাগকে রিপোর্ট দেওয়ার ক্ষেত্রে সময়সীমা বেঁধে না দিলেও, যত দ্রুত সম্ভব (রিজনেবল টাইম) জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তদন্ত যাতে সুষ্ঠভাবে এগোয় রাজ্য সরকারকেও সহযোগিতা করার পরামর্শ দেয় আদালত।

এই রায় প্রসঙ্গে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য জানান, আমফান দুর্নীতি মামলায়, কোথায় কোথায় দুর্নীতি হয়েছে, তার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয় ক্যাগকে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই রায়ের পুনর্বিবেচনার আর্জি করে রাজ্য সরকার। তাদের মূল বক্তব্য, ক্যাগকে দিয়ে যে তদন্তের কথা বলা হয়েছে, সেই আদেশ প্রত্যাহার করা হোক। অর্থাৎ এই ধরনের আদেশে রাজ্য সরকারের যে অস্বস্তি রয়েছে, তা স্পষ্ট। আমাদের ধারণা, সিএজি যদি ঠিক মতো তদন্ত করে, অনেক দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসবে। দুর্নীতির পিছনের রাজনৈতিক দলের নেতারা আছে বলে আমাদের আশঙ্কা। সরকারও সেই আশঙ্কা থেকেই পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে।