‘ব্রিগেডে মিটিং হবে, বাসি রুটি চাই গো!’ ঝুলি উপুড় করে দিলেন কুঁড়ে ঘরের মায়েরা

একুশের ব্রিগেডের (Left Congress Brigade 2021) আবেগের রং পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) দাসপুরের বৈকুন্ঠপুরে

'ব্রিগেডে মিটিং হবে, বাসি রুটি চাই গো!' ঝুলি উপুড় করে দিলেন কুঁড়ে ঘরের মায়েরা
দাসপুরে ব্রিগেডমুখী যুবকদের হাতে তৈরি রুটি দিচ্ছেন গ্রামের মহিলারা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Feb 28, 2021 | 1:42 PM

পশ্চিম মেদিনীপুর: ‘বৌদি রাতে দুটো রুটি এক্সট্রা বানিয়ে রেখো, কাল সকালে নিয়ে যাব….’ টিনের চালের বাড়ির নড়বড়ে ফাটা কাঠের দরজায় কড়া নাড়িয়ে বলে গিয়েছিলেন পাড়ার ছেলেগুলো। চাল নুন কেনার গার্হস্থ্য অনুশাসনে যাঁদের ফুরিয়ে যায় দু’পয়সা। তাঁরাও বাড়িয়ে দিলেন হাত। সযত্নে বানালেন ‘দুটো রুটি’। আবেগে মুড়িয়ে সেই রুটি রেখে দিলেন হেঁসেলের এক কোণে। গ্রামের ব্রিগেডমুখী ছেলেগুলোকে খেতে দিতে হবে যে! সকাল হতেই দরজায় কড়া নাড়া। ঝুলি পাততেই উপুড় করে দেওয়া হল সযত্নে রাখা সেই বাসি রুটি। একুশের ব্রিগেডের (Left Congress Brigade 2021) আবেগের অন্য রং ধরা পড়ল পশ্চিম মেদিনীপুরের (Paschim Medinipur) দাসপুরের বৈকুন্ঠপুরে।

দূরত্বটা প্রায় ১৩০ কিলোমিটার। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ব্রিগেডে আসছেন ওঁরা। কেউ দিনমজুর, কেউ চাষি, কেউ বেকার। অনেক দূর থেকে তাঁরা আসছেন। পথে খিদে পেলে ভরসা ওই বাসি রুটি। সঙ্গে হয়তো দুটো আলু। এককথায় বিনে পয়সার পেট ভরা খাবার।

রাতে পাড়ার ছেলেরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রুটি বানাতে বলে এসেছিলেন। তাঁদের আবেদন শুনেছেন গ্রামের মহিলারাও। রুটি বানিয়ে রেখেছিলেন রাতেই। নিজেদের সাধ্য মতো। ব্রিগেডের সকালে ভোর হতেই বাড়ি বাড়ি ঘুরে রুটি সংগ্রহ করেন বাম দলীয় কর্মী সমর্থকরা।

দাসপুর সিপিএমের শিক্ষক নেতা সৈয়দ মিশবাউল রহমান বললেন, “বাড়ির মা বোনেদের কাছে আবেদন করেছিলাম। কথা রাখল গ্রামের মায়েরা।” দাসপুর থেকে শতাধিক কর্মী সমর্থক ব্রিগেডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন ঝুলিতে পুরে সেই বাসি রুটি। তবে, ব্রিগেড সফরে বাড়ি বাড়ি রুটি সংগ্রহ বামেদের এই প্রথম নয়। অতীতেও দেখা গিয়েছে, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা বাম সমর্থকরা এভাবেই রুটি, ভেলিগুড় নিয়ে ব্রিগেডে গিয়েছেন। কিন্তু এই সংস্কৃতির ছন্দপতন ঘটে ৩৪ বছরের শাসনকালের শেষের দিকে। দেওয়া শুরু হয় প্যাকেটবন্দি খাবার। তবে, এ বার ব্রিগেডে সেই পুরনো রুটির স্বাদ খুঁজে পেয়েছেন বাম কর্মীরা।

গত লোকসভা নির্বাচন থেকেই শাহ বঙ্গে শুরু করেছেন ‘মধ্যাহ্নভোজ-রাজনীতি’। আর এবার একুশে সেই রীতি বঙ্গে ফিরেছে আরও রঙ চড়িয়ে। বাউল, বস্তিবাসী, শ্রমিক, উদ্বাস্তু, কৃষকদের বাড়িতে যে মধ্যাহ্নভোজে যাচ্ছেন বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা কেবলই জনসংযোগের লক্ষ্যেই।

আরও পড়ুন: লক্ষ্য ব্রিগেড, রাস্তাতেই লাল ঝাণ্ডা খুলে ফেললেন ‘কমরেড’রা! কেন?

সেক্ষেত্রে ‘শ্রমজীবী’ বাম বাসি রুটিতেই সারতে চাইলেন মধ্যাহ্নভোজ। নেপথ্যে সেই জনসংযোগেরই উজ্জ্বল উপস্থিতি।