Lungs Transplant in Kolkata: ফুসফুস প্রতিস্থাপন করেও বাঁচানো গেল না! জীবনযুদ্ধ থামল পাটুলির দীপকের
Covid19: দীপক হালদার পেশায় তথ্য প্রযুক্তির কর্মী ছিলেন। কোভিড নিউমোনিয়া নিয়ে গত ৯ জুন মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন।
কলকাতা: শেষ রক্ষা হল না। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের (Lungs Transplant) পরও জীবনযুদ্ধে হার মানতে হল পাটুলির দীপক হালদারকে (৪৬)। শুক্রবার রাত ন’টা নাগাদ দীপক হালদারের মৃত্যু হয়। গত ২০ সেপ্টেম্বর মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে (Medica Super Speciality Hospital) দীর্ঘ ছ’ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে সুরাটের এক ব্যক্তির ফুসফুস কোভিড আক্রান্ত দীপকবাবুর দেহে প্রতিস্থাপিত করা হয়। সেই সঙ্গে এ রাজ্যে প্রথম ফুসফুস স্থাপনের সাক্ষী থেকেছিল বঙ্গবাসী। অস্ত্রোপচারের পরে ৭২ ঘণ্টা দীপককে পর্যবেক্ষণে রাখার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। শুক্রবার চিকিৎসকেরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ এবং রাইট ভেন্ট্রিকুলার কাজ না করার জন্য মৃত্যু হয় দীপকের।
সুরাটের বাসিন্দা ৫২ বছরের মণীশ শাহর মস্তিস্কে টিউমার ধরা পড়ে। গুজরাটেই চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হয়। পরদিন চিকিৎসকরা মণীশ শাহের ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। পরিবারের তরফে মণীশের অঙ্গদানের অঙ্গীকার করা হয়। তখনই গোটা দেশের মধ্যে ফুসফুস গ্রহীতা হিসাবে মেডিকাতে চিকিৎসাধীন ৪৬ বছরের ওই ব্যক্তিকে বেছে নেওয়া হয়।
এরপরই মেডিকার চিকিৎসকদের একটি টিম সুরাট পৌঁছন। দাতার শরীর থেকে সংগ্রহ করেন ফুসফুস। বিমানে আনা হয় কলকাতায়। বাংলায় ফুসফুস প্রতিস্থাপনের নজির এর আগে ছিল না। গত সোমবার মহানগরে তৈরি হয় সেই রেকর্ড। প্রথমবার ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয় কলকাতায়। মুকুন্দপুরের মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার হয়। রাত ১০টার কিছু পরে সুরাট থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছয় ফুসফুস। গ্রিন করিডর করে তা নিয়ে যাওয়া হয় মুকুন্দপুরে। সেখানে রাতেই ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য অস্ত্রোপচার হয়। প্রায় সাত ঘণ্টা ধরে এই প্রতিস্থাপন-পর্ব চলে।
চিকিৎসক কুণাল সরকারের নেতৃত্বে চিকিৎসকদের বিরাট একটি টিম এই অস্ত্রোপচার করেন। ফুসফুস প্রতিস্থাপন সফল ভাবে হলেও চিকিৎসকরা আশঙ্কা করেছিলেন অস্ত্রোপচার পরবর্তী কিছু জটিলতা তৈরি হতে পারে। দীর্ঘদিন একমোয় থাকার ফলে দীপকের শরীরে রক্তক্ষরণের একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে বলে মনে করেছিলেন চিকিৎসকরা। সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।
চিকিৎসক কুণাল সরকার জানান, “কোভিড রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন হাই রিস্কের। একটা চ্যালেঞ্জিং পদ্ধতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। পোস্ট কোভিড লাং ট্রান্সপ্লান্ট এ ক্ষেত্রে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের টিম সবরকম চেষ্টা করেছে।” তবু শেষ রক্ষা হল না।
তবে শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, গোটা পূর্ব ভারতে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ইতিহাস তৈরি করে মুকুন্দপুরের মেডিকা বেসরকারি হাসপাতাল। এর আগে পূর্ব ভারতে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কোনও ইতিহাস নেই। রাজ্যের সবথেকে বড় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএমে ইতিমধ্যে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। তবে এমন ঘটনা শহরে এর আগে ঘটেনি।
দীপক হালদার পেশায় তথ্য প্রযুক্তির কর্মী ছিলেন। কোভিড নিউমোনিয়া নিয়ে গত ৯ জুন মেডিকা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন। ভিভি-একমো (VV-ECMO) সাপোর্টে রাখা হলেও ফুসফুসের অবস্থার বিশেষ উন্নতি হচ্ছিল না। ৯০ দিন পর চিকিৎসকরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। ফুসফুস প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। এরপরই শুরু হয় ফুসফুস দাতার খোঁজ।