Unemployment in West Bengal: বেকারত্ব কি সত্যিই কমছে রাজ্যে? EPFO-র হিসেব থেকেই উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য
Unemployment in West Bengal: সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন রাজ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ বেকারত্ব কমেছে। বাংলা একাধিক বিষয়ে এক নম্বরে উঠে এসেছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
কলকাতা : ২০২১ সালে এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে ডোম পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। শূন্যপদ ছিল মাত্র ৬। বেতন মাসে ১৫০০০ টাকা। অষ্টম শ্রেণি পাশ হলেই আবেদন করা যাবে বলে জানানো হয়েছিল। আর সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর দেখা যায়, আবেদন করেছেন প্রায় আট হাজার জন চাকরিপ্রার্থী। তাঁদের মধ্যে আড়াই হাজারের বেশি স্নাতক, ৫০০-র কাছাকাছি স্নাতকোত্তর, আরও অন্তত ১০০ জন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রিধারী।
২০২১-এর ৪ ডিসেম্বরও এমন এক ছবি দেখা যায় এ রাজ্যে। মন্ত্রী হুমায়ুন কবীরের উদ্যোগে একটি বেসরকারি সংস্থার নিয়োগের জন্য ক্যাম্প করা হয়েছিল। ১,২০০ পদের জন্য সেখানে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। কেউ বলেন এক লক্ষ, কেউ বলেন সাড়ে তিন লক্ষ মানুষ গিয়েছিলেন সেখানে। পরিস্থিতি সামলাতে লাঠি চালাতে হয় পুলিশকে। ঘটনা দুটো আাদা হলেও, দুটো ঘটনা থেকে একটা ছবি স্পষ্ট, তা হল বাংলার বেকারত্ব। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, রাজ্য সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছে বেকারত্ব কমানোর। দেশের তুলনায় বাংলায় কর্মসংস্থানের ছবি ভাল বলেও দাবি করেছেন মমতা। তবে কতজনের চাকরি নিরাপদ, কতজন তাঁদের চাকরি নিয়ে নিশ্চিন্তে রয়েছেন? তা নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি-র সমীক্ষায় উঠে এসেছে বেকারত্ব সংক্রান্ত তথ্য।
লকডাউন শুরুর মুহূর্তের ছবি
২০২০ সালের মার্চ মাসে করোনা মহামারী প্রকোপ শুরু হওয়ায় লকডাউন ঘোষণা করা হয় দেশ জুড়ে। স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থানের ছবিটা এক লহমায় পাল্টে যায়। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমি-র তথ্য অনুযায়ী, ওই বছরের মার্চ মাসে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৮.৮ শতাংশ, সেটাই মে মাসে একধাক্কায় বেড়ে হয় ২৩.৫ শতাংশ। আর রাজ্যে মার্চ মাসে যে হার ছিল ৬.৯ শতাংশ, সেটা মে মাসে বেড়ে হয় ১৭.৩ শতাংশ।
তথ্য বলছে, ২০১১-১২-তে পশ্চিমবঙ্গে বেকারত্বের হার ছিল গ্রামাঞ্চলে ২.৭ শতাংশ এবং শহরে ৪.৮ শতাংশ। কেন্দ্রের পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১১-১২-র তুলনায় ২০১৭-১৮ তে রাজ্যে বেকারত্বের হার বেড়েছে। তবে তা জাতীয় হারের তুলনায় কম ছিল। রাজ্য সরকারের দাবি, বেশি কর্মসংস্থান হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে। যাতে রাজ্য সারা দেশের মধ্যে দ্বিতীয়।
নিয়োগ কি সত্যিই বেড়েছে রাজ্যে?
প্রশ্ন উঠছে, রাজ্যে যে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে তার মান কেমন? তথ্য বলছে, ২০১৭-১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে চাকুরিরতদের ৩৩ শতাংশই ছিলেন অস্থায়ী। আর দেশে সেই হারটা ২৫ শতাংশ। এমপ্লয়মেন্ট এক্সেচেঞ্জে লেখানো নামের সংখ্যা ৩৫ লক্ষ। কিন্তু এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের হারও কমছে। প্রায় ২ লক্ষ সরকারি পদে নিয়োগ হচ্ছে না বলেই জানা গিয়েছে। রাজ্যে শিক্ষক পদ ফাঁকা এক লক্ষেরও বেশি। সরকারি কাজে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের নিয়োগটাই রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্যে কতজনের চাকরি স্থায়ী?
কোন মাসে কত জন প্রভিডেন্ট ফান্ড পাচ্ছে, সেই হিসেব দেখলে বোঝা যাবে EPFO পাওয়া যায় এরকম কাজে যোগ দিচ্ছেন কতজন। বিভিন্ন বয়সীদের হিসেব থাকে সেখানে। গত জানুয়ারির হিসেব বলছে, রাজ্যে ১৮ বছরের কম বয়সী থেকে ৩৫ উর্ধ্বদের নিয়োগ সারা দেশের মোট সংখ্যার ১.৯ থেকে ৩.৫ শতাংশের মধ্যে। মহারাষ্ট্রে সেই হার ১১.৬-২৩.৭ শতাংশ, কর্নাটকে ৬.৩ থেকে ১৩.৩ শতাংশ, তামিলনাড়ুতে ৯.২-২৬ শতাংশ, গুজরাতে ৭.৬-১২ শতাংশের মধ্যে। অর্থাৎ নিরাপদ কাজের সুযোগ অন্য রাজ্যগুলোতে তৈরি হচ্ছে অনেক বেশি।
লকডাউনের সময় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যাও স্রোতও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কাজের খোঁজে রাজ্যের প্রচুর মানুষকে ভিন রাজ্যে যেতে হয়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কাজ মানে তো শুধু চাকরি নয়। নিজেদেরও উদ্যোগী হতে হবে। সরকার পাশে থাকবে। অথচ দেখা যাচ্ছে, সারা দেশের স্টার্ট আপগুলোর মধ্যে খুব সামান্যই এ রাজ্যের। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহিলাদের স্বনিযুক্তি প্রকল্পে কাজের সুযোগ তৈরির বদলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো প্রকল্প রাজ্যের অর্থনীতির ক্ষতি করছে। কাজের সুযোগ তৈরির সম্ভাবনাও কমছে। কাজের সুযোগ তৈরি করা, বিশেষত নিরাপত্তা আছে এরকম কাজের সুযোগ তৈরি করা সরকারের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।