‘আমাকে কিন্তু ধোকলা খাওয়াতে হবে’, শাহি-প্রশ্নের জবাব দিয়ে আবদার মমতার

'স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনেক বড় বড় কথাই বলে গেছেন। কিন্তু কথাগুলো খুব জেনে নিয়ে বলা উচিত। উনি বাংলাকে দুঃস্বপ্ন নগরীর মতো দেখিয়েছেন। কোথায় ছিলেন ৩৪ বছর! আজকে সারা বাংলা ঝকঝক-চকচক করছে। তাই বুঝি ঈর্ষাকাতর হয়ে এই কথাগুলো বলছেন।'

'আমাকে কিন্তু ধোকলা খাওয়াতে হবে', শাহি-প্রশ্নের জবাব দিয়ে আবদার মমতার
অলঙ্করণ- অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Dec 22, 2020 | 7:19 PM

কলকাতা: নবান্নে সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে বসেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের (Amit Shah) অভিযোগের কিছুটা জবাব দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তবে জানিয়ে রেখেছিলেন, বেছে বেছে সব অভিযোগের জবাব দেবেন মঙ্গলবার। সেই মতো এদিন সাংবাদিক বৈঠকে বসে একের পর এক তথ্য তুলে ধরে শাহি আক্রমণের অবশিষ্ট জবাব দেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। মমতার কটাক্ষ, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনেক বড় বড় কথাই বলে গিয়েছেন। কিন্তু কথাগুলো  জেনে নিয়ে বলা উচিত। উনি বাংলাকে দুঃস্বপ্ন নগরীর মতো দেখিয়েছেন। কোথায় ছিলেন ১১ বছর আগে, আজকে সারা বাংলা ঝকঝক-চকচক করছে। তাই বুঝি ঈর্ষাকাতর হয়ে এই কথাগুলো বলছেন।’

প্রসঙ্গ জিডিপি:

অমিত শাহ: ১৯৪৭ সালে গোটা ভারতের সামগ্রিক শিল্পে পশ্চিমবঙ্গের অংশীদারিত্ব ছিল ৩০ শতাংশ। সেটা বর্তমানে কমতে কমতে ৩.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। ৩৬টি রাজ্যের মধ্যে ১৬-তে দাঁড়িয়ে বাংলা।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: আমি তো না হয় অর্থনীতি বুঝি না, উনি বোঝেন তো। ২০১১-র তুলনায় রাজ্যের জিএসডিপি (স্টেট গ্রস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট) বেড়েছে ২.৭ গুণ। আয়কর আদায় একই সময়ে ২.৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাপিটাল এক্সপেনডিচার বেড়েছে ৭.২ গুণ। কেন্দ্রর তথ্য অনুযায়ী, জিডিপি বৃদ্ধির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে বাংলা।

মমতা আরও বলেন ভারতের জিডিপি ৪.১৮ শতাংশ (২০১৯-২০ অর্থবর্ষে)। বাংলার জিডিপি ৭.২৬ শতাংশ। ভারতের জিভিএ (গ্রস ভ্যালু অ্যাডেড) ৩.৮৯ শতাংশ। বাংলায় ৭.৩৯ শতাংশ। ভারতের শিল্পক্ষেত্রের পরিমাণ ০.৯২ শতাংশ। বাংলায় সেটা ৫.৭৯ শতাংশ। ভারতের সার্ভিস সেক্টর ৫.৫৫ শতাংশ, বাংলায় যা ৯.২৬ শতাংশ। কৃষিক্ষেত্র গোটা ভারতে ৪.০৫ শতাংশ, বাংলায় সেটা ৪.৭৪ শতাংশ।

প্রসঙ্গ শিল্প:

অমিত শাহ : ১৯৫০-এর দশকে দেশের ফার্মা (ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থা) ইন্ডাস্ট্রির প্রায় ৭০ শতাংশই ছিল পশ্চিমবঙ্গে। সেই হার এখন কমে ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বাংলার জুট শিল্প যার নাম-ডাক একসময় দেশব্যাপী ছিল, সেগুলিও ক্রমশ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, কে দায়ী এর জন্য? বিদেশি বিনিয়োগও গত ১০ বছর ধরে ১ শতাংশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: ক্ষুদ্রশিল্পে আমরা ১ নম্বর। ১০০ দিনের কাজে দেশে বাংলা ১ নম্বর।

কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে, শিল্পের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ বর্তমানে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বলেও দাবি করা হয় রাজ্যের তরফে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে রাজ্যের দাবি, ০.২২ শতাংশ থেকে রাজ্যে বর্তমানে বিনিয়োগ বেড়ে ১.৬২ শতাংশ হয়েছে।

প্রসঙ্গ আইন-শৃঙ্খলা:

অমিত শাহ: দুর্নীতি, তোলাবাজ ও পরিবারবাদে এক নম্বরে বাংলা। রাজনৈতিক হিংসা চরমে পৌঁছেছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: উনি যেটা বলছেন সেটা সত্যি নাকি এটা সত্যি। ৩৮৩ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। বাংলার আইনশৃঙ্খলা প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলায় শাহকে ‘হাথরস থেকে হাসফাঁস’ বলে কটাক্ষ তাঁর।

প্রসঙ্গ শিক্ষা:

অমিত শাহ: শিক্ষা ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়েছে রাজ্য। রাজ্যের বাইরে যেতে হচ্ছে পড়ুয়াদের। শিক্ষাঙ্গন রাজনৈতিক হিংসায় পরিণত হয়েছে। ৫৬ শতাংশ স্কুলে শৌচালয় নেই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব দেওয়া হচ্ছে না। তার পরিবর্তে প্রত্যেক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের ১০ হাজার টাকা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ৯৯.৩৯ শতাংশ স্কুলে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। ১০০ শতাংশ স্কুলে টয়লেট, যাবেন নাকি কোনও স্কুলের টয়লেট ব্যবহার করবেন! স্যানিটাইজ করে দেওয়া হবে। ৯৩. ১৩ স্কুলে ফার্নিচার আছে। উনি বলেছেন স্কুলের ব্যাপারে, ফার্নিচার নেই, টয়লেট নেই, কত কথা।

প্রসঙ্গ প্রকল্প:

অমিত শাহ: ৫ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্য বিমা কেন্দ্র দিলেও রাজ্য দিচ্ছে না। চাষিদেরও বছরে ৬ হাজার টাকা মমতার সরকার আটকে রেখেছে। তাঁর একটা স্বাক্ষরে কয়েক লক্ষ চাষি উপকৃত হতে পারেন। কেন্দ্রের দেওয়া প্রকল্পের কোনও টাকা খরচ করছে এ রাজ্য।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: স্বনির্ভর প্রকল্পে ৮ লাখ ৫০ হাজার সেল্ফ হেল্প গ্রুপ রয়েছে, যাদের আমরা ৫০০০ টাকা করে দেই। চাষিদের বছরে ৫০০০ টাকা করে দেওয়া হয়। গতিধারা প্রকল্পে ৫০ হাজার হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ৯ লক্ষ সমব্যথী রয়েছে, মারা গেলেও ২০০০ টাকা করে দিচ্ছি। জল ধরো জল ভরো প্রকল্পে ৩ লক্ষ পুকুর কাটা হয়েছে। লোকপ্রসার প্রকল্পে ২ লক্ষ শিল্পী রয়েছে। এছাড়াও কন্যাশ্রী পেয়েছে ৮০ লক্ষ মেয়েরা।

আরও পড়ুন: প্রাথমিকে ১৬ হাজার ৫০০ শূন্যপদে নিয়োগ, ঘোষণা মমতার

প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য:

অমিত শাহ: এক সময় চিকিৎসা সামগ্রী পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদন হত প্রায় ৭০ শতাংশ। এখন তা নেমে দাঁড়িয়েছে ৭ শতাংশে। কেন্দ্রের দেওয়া স্বাস্থ্য বিমা ৫ লক্ষ টাকা রাজ্য আটকে রেখেছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: টোটাল ফ্রি ট্রিটমেন্ট করছি, গভর্মেন্ট হাসপাতাল ও বেসরকারি আন্ডারটেকিং। কোভিড ম্যানেজম্যান্ট সবথেকে ভাল আমরা করেছি।

রাজ্যের দাবি, দেশের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্য পরিষেবা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। শিশুমৃত্যু থেকে শুরু করে অন্যান্য মৃত্যুর হার যে জাতীয় হার এবং গুজরাটের তুলনাতেও কম, সেটাও জানিয়েছে সরকার। সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে নানাবিধ বিষয় এবং রাজ্যের স্বাস্থ্যবীমার কথাও।

আরও পড়ুন: একটা শর্তে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন শুভেন্দু! ফাঁস করলেন নিজেই

প্রসঙ্গ নম্বর:

অমিত শাহ: রাজ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি তলানিতে ঠেকেছে। শিল্পও নেই। এ রাজ্যে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা ঋণ মাথায় নিয়ে জন্ম নেয় শিশু।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: বাংলা দারিদ্র দূরীকরণে ১ নম্বরে। ১০০ দিনের কাজে দেশে বাংলা ১ নম্বর। গ্রামীণ গৃহ নির্মাণে আমরা ১ নম্বরে। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণেও আমরা ১ নম্বর। ক্ষুদ্রশিল্পে আমরা ১ নম্বর। স্কিল ডেভলপমেন্টে আমরা ১ নম্বর। সংখ্যালঘু স্কলারশিপ দেওয়ায় আমরা ১ নম্বর। ই-গভর্নেন্সে আমরা ১ নম্বর। ই-টেন্ডারে আমরা ১ নম্বর।

শেষে অবশ্যই আক্রমণের ঝাঁঝ কমিয়ে আনেন মমতা। বেছে বেছে মোটামুটি সব ইস্যুতেই পাল্টা যুক্তি খাড়া করে বলেন, ‘সব উত্তর কিন্তু দিয়ে দিয়েছি। এর জন্য আমাকে কিন্তু অমিত শাহকে খাওয়াতে হবে। আমি গুজরাটি খাবার খেতে চাই ধোকলা।’

আরও পড়ুন: ‘দলবিরোধী’ মন্তব্য, সায়ন্তনকে শোকজ করল বিজেপি