বিশেষ সম্প্রদায় উল্লেখ করতে কি নির্দেশ ছিল? পবিত্রর কথায় বিস্ফোরক তথ্য

HS Topper Rumana Sultana:সহ-নাগরিকদের অনেকের মতে, মেধার বিচার ধর্ম দিয়ে হয় না। রুমানা মাধ্যমিকেও পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। তখন করোনা ছিল না। ফলে তিনি উচ্চমাধ্যমিকে যে ভাল ফল করবেন না এমনটা তো হতে পারে না!

বিশেষ সম্প্রদায় উল্লেখ করতে কি নির্দেশ ছিল? পবিত্রর কথায় বিস্ফোরক তথ্য
অলঙ্করণ: অভিজিত্‍ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 23, 2021 | 5:13 PM

কলকাতা: অতিমারীর জেরে পরীক্ষা হয়নি। প্রকাশ হয়নি মেধাতালিকাও। তবু উচ্চমাধ্যমিকে (Higher Seconadary Examination) সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন তিনি। ৫০০-তে ৪৯৯। তিনি কান্দি রাজা মনীন্দ্রচন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী রুমানা সুলতানা। ফলপ্রকাশেই পরেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে তিনি। ঠিক রুমানা নন, বরং তাঁর ধর্মপরিচয় ও সংসদ প্রধানের মন্তব্য। সেই বিতর্কে মুখ খুললেন শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক পবিত্র সরকার। সংসদ প্রধানের বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মূলত ‘রাজনৈতিক কারণ’কেই দায়ী করলেন প্রবীণ শিক্ষাবিদ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার (Higher Seconadary Examination) ফলাফল ঘোষণা করতে গিয়ে উচ্চ মাধ্য়মিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস বলেছিলেন, “সর্বোচ্চ নম্বরের ভিত্তিতে একটা ইতিহাস সংসদে হয়েছে। সেটা একটু বলতে ইচ্ছে করছে। যিনি সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন একা।’’ এর পরেই মহুয়া বলেন, ‘‘একক ভাবে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন এক মুসলিম কন্যা। মুসলিম… মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে একজন মুসলিম লেডি… গার্ল। তিনি একক ভাবে ৪৯৯ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন।’’ তবে তখনই নাম ঘোষণা করেননি সংসদ সভাপতি। প্রশ্ন করলে জবাবে স্পষ্টই বলেন, “ওয়েবসাইট দেখে নেবেন।”

সংসদ সভাপতির এই মন্তব্যেই কার্যত বিতর্কের জল গড়িয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। এ প্রসঙ্গে শিক্ষাবিদ, অধ্যাপক পবিত্র সরকার বলেন, “সংসদ সভাপতি যা বলেছেন তার পেছনে একটি বিশেষ সম্ভাবনা থাকতে পারে। সেই সম্ভাবনা রাজনৈতিক হতে পারে। আমার ধারণা, সংসদ সভাপতিকে কোনও বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এই বলে যে বারবার বিশেষ সম্প্রদায়ের নাম উল্লেখ করতে। যাতে বোঝানো যায়, তথাকথিত পিছিয়ে পড়া কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের পক্ষে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল। জনগণের কাছে বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে সরকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উন্নয়ন নিয়ে চিন্তিত।”

পবিত্রবাবু আরও বলেন, “যদি এই সম্ভাবনা না থাকে বা এমন কোনও নির্দেশ না থেকে থাকে এবং সংসদ সভাপতি যদি মুখ ফসকে তা বলে থাকেন তবে বলতে হবে এ আসলে শিক্ষার অভাব। এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। কারণ, মেধা কখনও ধর্ম দিয়ে বিচার হয় না। আমরা বিভিন্ন পরীক্ষা দিয়ে ডিগ্রি অর্জন করেও যে আমাদের শিক্ষা সম্পূর্ণ হয়নি এই মন্তব্যই তার প্রমাণ।”

নেটমাধ্যম ও রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি হলেও অনেকেই সংসদ সভাপতির পক্ষে অভিমত প্রকাশ করেছেন। অনেকের মতেই, মুসলিম সমাজ বিশেষ করে রাজ্যের মুসলিম মেয়েরা এখনও নানা বাধা বিপত্তির সম্মুখীন। শিক্ষা হোক বা কর্মজীবন, সবেতেই তাঁরা পিছিয়ে। সংসদ সভাপতির এই মন্তব্য বহু মেয়ের কাছেই প্রেরণা হতে পারে, পাশাপাশি মুসলিম সমাজের কাছে এক নতুন শিক্ষা হতে পারে যা মূলত মেয়েদের জীবনোন্নয়নে সহায়তা করবে।

পাল্টা, সহ-নাগরিকদের অনেকের মতে, মেধার বিচার ধর্ম দিয়ে হয় না। রুমানা মাধ্যমিকেও পঞ্চম স্থান অধিকার করেছিলেন। তখন করোনা ছিল না। ফলে তিনি উচ্চমাধ্যমিকে যে ভাল ফল করবেন না এমনটা তো হতে পারে না! সেক্ষেত্রে, বিশেষ কোনও ধর্মসম্প্রদায়ের উল্লেখ করা কি কৃতী পড়ুয়াকে আরও বিড়ম্বিত করা নয়? এ প্রসঙ্গে, পবিত্রবাবু বলেন, “মুসলিম সমাজের পিছিয়ে পড়ার জন্য একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ইতিহাস রয়েছে। তা ভুলে গেলে চলবে না। কিন্তু সেই ইতিহাসের সঙ্গে রুমানার কোনও সম্পর্ক নেই। রুমানার কৃতিত্ব তার একান্ত নিজস্ব। এই ধরনের মন্তব্য সংসদ সভাপতির থেকে পড়ুয়ারা আশা করেন না।”

যাঁকে নিয়ে এই বিতর্ক সেই রুমানা কিন্তু এইসবের থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন নিভৃতে। স্পষ্টই বলেছেন, “আমি একজন স্টুডেন্ট। যিনি বলেছেন তিনি কাউন্সিলরের হেড। তিনি যেটা বলেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বলার পজিশন আমার নেই। আর এটা নিয়ে বেশি বিতর্ক না করাই ভালো।” আরও পড়ুন: মহুয়ার ঘোষণায় ৩ বার ‘মুসলিম’, ‘কোনও অঘটন ঘটেছে?’ প্রশ্ন অধীরের, ‘শ্রুতিকটু’ লাগছে শিক্ষক মহলেরও