Saugata Roy On Physical Assault Case: মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটি ধর্ষণও লজ্জার: সৌগত রায়

Saugata Roy On Physical Assault Case: একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিকের মুখে এহেন মন্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

Saugata Roy On Physical Assault Case: মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটি ধর্ষণও লজ্জার: সৌগত রায়
বিস্ফোরক সৌগত রায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 14, 2022 | 2:45 PM

কলকাতা: মেটিয়া, হাঁসখালি, রায়গঞ্জ, পিংলা, বীরভূম-  এই চৈত্রে যেন বাংলায় ধর্ষণ, গণধর্ষণের অভিযোগের তালিকা ক্রমেই লম্বা হচ্ছে। বিধানসভা উত্তপ্ত, পথে বিরোধীরা। গঠিত হচ্ছে শাসকদলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীর বিশেষ তথ্য অনুসন্ধান কমিটিও। বাংলার পরিস্থিতি বর্তমানে তেঁতে। রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা। এবার এই ইস্যুতেই রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন খোদ শাসকদলের সাংসদ।   “মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটি ধর্ষণও লজ্জার”- রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতন প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সৌগত রায়। তিনি বলেন, “সরকার চিন্তিত রাজ্যের মহিলাদের ওপর অত্যাচারের ঘটনায়। এই বিষয়টাতে একদম জিরো টলারেন্স করতে হবে। এরকম কোনও ঘটনা ঘটলে, কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যে রাজ্যে মহিলা মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর রাজ্যে যদি একটাও এহেন ঘটনা ঘটে, তা লজ্জার। আমি আশা করি পুলিশ প্রশাসন সবরকম ব্যবস্থা করবে।” একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিকের মুখে এহেন মন্তব্য যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কেন হঠাৎ সৌগত রায় এতটা বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন, সেটা স্পষ্ট নয় রাজনীতিকদের কাছেই। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজ্যে গত এক সপ্তাহে চারটে ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনা দেখার পর আম জনতা যে মন্তব্য করছেন, সেটাই প্রকাশ্যে বলেছেন সৌগত রায়। এক্ষেত্রে একটি বিষয় অত্যন্ত উল্লেখ্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাঁসখালির ঘটনা প্রসঙ্গে নিন্দা করেছেন বটে, তাঁর বক্তব্য ততটাও কঠোরতা দেখেননি বিশ্লেষকরা। তাঁদের মতে, সেই কঠোরতা দেখা গিয়েছে সৌগত গলাতেই। আর সেই ইস্যুতে মন্তব্য করতে গিয়ে বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় কি বল ঠেলে দিয়েছেন তাঁর নেত্রীর কোর্টেই? প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের।

কী বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী?

হাঁসখালি ‘গণধর্ষণ’ কাণ্ড প্রসঙ্গেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, “পুলিশ এখনও বিষয়টাই জানতে পারেনি। এই যে বারবার দেখাচ্ছে, একটা বাচ্চা মেয়ে নাকি মারা গিয়েছে রেপড হয়ে। আপনি রেপড বলবেন? নাকি প্রেগন্যান্ট বলবেন? না লাভ অ্যাফেয়ার্স বলবেন? এটা ইনকোয়ারি করেছেন কি? আমি পুলিশকে বলেছি এটা।” বিতর্ক চরমে ওঠে। এরপর তৃণমূলেরই তিন নেতাকে দেখা যায় ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে। এই পরিস্থিতিতে সৌগত রায়ের এহেন মন্তব্য নিঃসন্দেহে শাসকদলকে অস্বস্তিতে ফেলবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

সুখেন্দুশেখর রায়ের তথ্য-সাফাই

রাজ্যসভার নেতা সুখেন্দুশেখর রায় তথ্য পেশ করে নেত্রীর বক্তব্যের স্বপক্ষে যুক্তি খাঁড়া করেছিলেন। তিনি তথ্য দিয়ে দাবি করেছিলেন, বাংলার ৯৩ শতাংশ যৌন নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্ত পরিবারের সদস্য কিংবা পরিচিতরাই হয়। উল্লেখ্য হাঁসখালির ক্ষেত্রেও মূল অভিযুক্তের সঙ্গে প্রেম ছিল মৃত নির্যাতিতার। তা নিয়েও অবশ্য প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি দলকে পক্ষ দিতেই এরকম সাফাই দিচ্ছেন বর্ষীয়ান নেতা?

আগেও ছক ভেঙেছেন সৌগত

এই পরিস্থিতিতে সৌগত রায়ের একটা সোজা সাপটা মন্তব্য অত্যন্ত অর্থবহ। তবে সৌগত রায় যে এই প্রথম দলের বেঁধে দেওয়া ‘কনভেনশন্যাল লাইনের’ বাইরে গিয়ে কথা বললেন, তেমনটা নয়। কারণ এর আগেও সম্ভবত ২০১৪-১৫ সালে শিক্ষাব্যবস্থার পরিস্থিতি নিয়েও তিনি সরকারের বিপক্ষে মন্তব্য করেছিলেন। সেবারও স্পষ্ট কথা বলেছিলেন।

কী বলছে বিজেপি?

সৌগত রায়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ” ১১ বছর বাদে সৌগত রায় বুঝতে পারলেন মহিলা মুখ্যমন্ত্রীর রাজ্যে একটি ধর্ষণের ঘটনাও লজ্জার। তাও এতদিনে যে তিনি সত্য কথা বলে ফেললেন, এটাই ব্যাপার। এই কথাটা মানুষ বলছে, সৌগত রায় সেটা এখন বলছেন। এটা একটা ধর্ষকের রাজ্য তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এটা বাংলার লজ্জা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়, কারণ ওঁ যা কথা বলছেন, তাতে ধর্ষণকারীদেরই মনোবল বৃদ্ধি পাচ্ছে।”

‘ওঁ বুঝতে পারছেন, এবার মুখ্যমন্ত্রী বোঝান’

সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “সৌগত রায় পুরনো মানুষ। অনেক দিনের রাজনীতিবিদ। ওঁ তো বুঝতে পারছেন। মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। তাঁর রাজ্যে যেভাবে ধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে, সেটা তো ওঁ বুঝতে পারছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় তো ধর্ষকরাই অনুপ্রাণিত হচ্ছে। সৌগতবাবু যথার্থই বলেছেন। কিন্তু এটা কি ওঁ মুখ্যমন্ত্রীর কাছে গিয়ে বোঝাবেন? পারলে বোঝান।”

তাঁর মন্তব্য যে দলের লাইনের বিরুদ্ধে, তা হয়তো বুঝেই সচেতনভাবে মন্তব্য করেছেন বর্ষীয়ান নেতা। কিন্তু কেন? সেই অবশ্য এখনও সৌগত রায়ের তরফে পাওয়া যায়নি।