Jhalda Municipality: জাতীয় স্তরে তৃণমূলের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতেই বাংলার জমি হারাচ্ছে কংগ্রেস?
Congress-TMC: দেশে যখন ইন্ডিয়া জোট নিয়ে চর্চা হচ্ছে, যখন লোকসভার ব্লু-প্রিন্ট একসঙ্গে বসে তৈরি করছেন মমতা-সনিয়া-রাহুল-অভিষেকরা, তখন বাংলায় এমন দৃশ্য! 'বন্ধুর' ঘর ভাঙছে 'বন্ধুই'।
কলকাতা: প্রথমে বাইরন বিশ্বাস। বিধানসভায় শূন্য হয়ে যাওয়া কংগ্রেসের মুখে হাসি ফুটিয়েও, শেষে চলে গিয়েছেন তৃণমূলে। আর এবার ঝালদা। কংগ্রেসের হাতে থাকা বাংলার একমাত্র পুরসভাও এবার ‘দখল’ করে নিল তৃণমূল। কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলর ও কংগ্রেসকে সমর্থন দেওয়া দুই নির্দল কাউন্সলর যোগ দিয়েছেন ঘাসফুলে। দেশে যখন ইন্ডিয়া জোট নিয়ে চর্চা হচ্ছে, যখন লোকসভার ব্লু-প্রিন্ট একসঙ্গে বসে তৈরি করছেন মমতা-সনিয়া-রাহুল-অভিষেকরা, তখন বাংলায় এমন দৃশ্য! ‘বন্ধুর’ ঘর ভাঙছে ‘বন্ধুই’। ইন্ডিয়া জোটেরই কংগ্রেসের ঘর ভেঙে ঝালদা পুরসভা দখল করল জোটেরই অপর শরিক তৃণমূল।
জাতীয় রাজনীতিতে যখন ‘দোস্তি’, তখন প্রাদেশিক রাজনীতিতে ‘কুস্তি’? বিধানসভার শক্তির নিরীখে তৃণমূল অনেক এগিয়ে। তারপরও বাইরন বিশ্বাস ‘উন্নয়নের টানে’ যোগ দিলেন ঘাসফুলে। আর এবার ঝালদাতেও সেই একই ছবি, ‘উন্নয়নে’ সামিল হতেই তৃণমূলের যোগ দিলেন ঝালদার কংগ্রেস ও নির্দল কাউন্সিলররা। রাজ্যের কংগ্রেস নেতারা তো ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করে দিয়েছেন। বলছেন, বিরোধীশূন্য করে দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে রাজ্যের শাসক দল।
আর এখানেই প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে, এই বাইরন বিশ্বাস বা এই ঝালদা পুরসভাই যদি আগামী দিনে রাজ্য রাজনীতির ট্রেন্ড হয়ে যায়, তাহলে? ‘ইন্ডিয়া’ জোটের উপর এই উল্টো প্রভাব পড়বে না তো? চব্বিশের লোকসভার লক্ষ্যে যখন একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ের কথা হচ্ছে, তখন বাংলার ক্ষেত্রে এই তা চাপে ফেলবে না তো জোটকে? বাংলার কংগ্রেস কি আদৌ চাইবে তৃণমূলের সঙ্গে ‘বন্ধুত্ব’ করে লোকসভার আসরে নামতে?
কংগ্রেস নেতা কৌস্তভ বাগচি যেমন সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ‘তৃণমূলের সঙ্গে ঘর করা মানে বিষধর সাপের সঙ্গে ঘর করা। দল যদি বিষয়টি না বোঝে তাহলে কংগ্রেসের জন্য বাংলায় এক অন্ধকার ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আবার ইন্ডিয়া নিয়ে মন্তব্য না করলেও তৃণমূলকে ‘সর্বভূক’ বলে আক্রমণ করেছেন। বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেপাল মাহাতোও ইন্ডিয়া নিয়ে বিশেষ কোনও মন্তব্য করছেন না। তবে, ঝালদায় যে দলবদল ঘটল, তা বাংলায় কংগ্রেস কর্মীদের উপর একটা প্রভাব ফেলবে, তা মেনে নিচ্ছেন তিনি।
ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম প্রধান শরিক দল তৃণমূল। তারা আবার বাংলার শাসক দলও। সেক্ষেত্রে বাংলার কংগ্রেস কর্মীদের উপর যাতে ইন্ডিয়া জোট নিয়ে কোনও বিরূপ প্রভাব না পড়ে, সেটা দেখার দায় কি জোটসঙ্গী হিসেবে তৃণমূলের উপরেও পড়ে না? এমন প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যেই ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে।
তৃণমূলেরও আবার যুক্তি রয়েছে। তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ যেমন বলছেন, বাংলার শাসক দল ইন্ডিয়া জোটের পক্ষেই। কিন্তু কংগ্রেস চাইছে তৃণমূলকে দুর্বল করতে। কুণালের যুক্তি, এমন ক্ষেত্রে ‘দ্যাখ কেমন লাগে’ বলা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। তৃণমূল মুখপাত্র বলছেন, ‘ওখানকার (ঝালদার) কংগ্রেসের লোকেরা যদি মনে করেন মানুষের কাজ করতে গেলে, উন্নয়ন করতে গেলে, তৃণমূলই একমাত্র দল, তাহলে তাঁরা তৃণমূলে আসবেন।’ এতে অস্বাভাবিক কিছুই দেখছেন না কুণাল ঘোষ।
বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ও দায় ঠেলছেন কংগ্রেসের সাংগঠনিক দুর্বলতার দিকেই। বলছেন, ‘কংগ্রেসের বঙ্গ নেতৃত্ব যদি তাদের সদস্যদের ধরে রাখতে না পারে, তাঁরা যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের প্রতি, উন্নয়নের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তৃণমূলে যোগ দেন, তাতে আমাদের কী করণীয়?’ তাপস রায়ের আরও বক্তব্য, এই পরিস্থিতি বাংলায় কংগ্রেসের বর্তমান নেতৃত্বই সৃষ্টি করেছে এবং কংগ্রেসের জাতীয় নেতৃত্বও এই বিষয়ে অবগত। তবে এই সমস্যার ইন্ডিয়া জোটে কোনও প্রভাব পড়বে না বলেই দাবি বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়কের।