TMC leaders threatening oppositions: কতটা ফোঁস করলে ছোবল হয়? কথার ‘বিষে’ দগ্ধ কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ

TMC leaders threatening oppositions: আরজি কর নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় 'ফোঁস' করতে বলেছেন। তারপরই বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায়। তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের হুঁশিয়ারির জবাব দিয়েছেন বিরোধীরা।

TMC leaders threatening oppositions: কতটা ফোঁস করলে ছোবল হয়? কথার 'বিষে' দগ্ধ কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ
তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের 'ফোঁস' নিয়ে কী বলছে বিরোধীরা?
Follow Us:
| Updated on: Sep 02, 2024 | 7:49 PM

কলকাতা: কেউ বলছেন জিভ ছিঁড়ে নেওয়ার কথা। ডাংয়ের বাড়ি মারার হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন কেউ। দংশনের নিদানও দিচ্ছেন কেউ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তেই তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের এই ‘ফোঁস’-র গর্জন শোনা যাচ্ছে। সেই তালিকায় তৃণমূল বিধায়ক যেমন রয়েছেন। আবার জেলা পরিষদের সদস্যও রয়েছেন। আর এই কথার ‘বিষে’ দগ্ধ রাজ্য রাজনীতি।

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে লাগাতার নিশানা করে চলেছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে গত বুধবার (২৮ অগস্ট) তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের সভা থেকে আরজি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির কথা ফের বলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই বিরোধীদের সমালোচনা নিয়ে তিনি বলেন, “আমি বাংলাকে অসম্মান করতে দেব না। আমায় অনেক গালাগালি দিয়েছেন। অনেক অসম্মান করেছেন। আমি অনেক ভেবেছি। তবে দেখলাম আমি এদের বিরুদ্ধে কখনও বদলা নিইনি। আমরা বলেছিলাম, বদল চাই, বদলা নয়। আজ বলছি, যেটা করার দরকার সেটা আপনারা ভাল বুঝে করবেন। আমি অশান্তি চাই না। তবে, কুৎসা-অপপ্রচার-চক্রান্ত করে যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে, আপনি তাঁকে কামড়াবেন না। তবে ফোঁস তো করতে পারেন। আপনারা ফোঁস করতে শিখুন।”

এই খবরটিও পড়ুন

আর এই ফোঁসের কথা বলতে গিয়ে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা টেনে আনেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তিনি বলেন, “রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছিলেন, একটা গোখরে সাপ তাঁর কাছে গিয়ে বলেছিল, ঠাকুর তুমি তো আমাকে কামড়াতে বারণ করেছো। আমি কাউকে কামড়াই না। কিন্তু, আমাকে অনেকে ইট মারে। আমার রক্ত পড়ে। আমার খুব কষ্ট হয়। ঠাকুর বললেন, শোনো, আমি তোমাকে কামড়াতে বারণ করেছি। ফোঁস করতে বারণ করিনি।”

আরজি কর নিয়ে বিরোধীদের আক্রমণের জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘ফোঁস’ করতে বলেছেন। তারপরই বিভিন্ন জেলায় তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের হুঁশিয়ারি দিতে দেখা যায়। রবিবার সিউড়ি শহর মহিলা তৃণমূল কংগ্রেস আরজি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভের আয়োজন করেছিল। সেই অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন সিউড়ি বিধানসভার বিধায়ক বিকাশ রায় চৌধুরী। সেখানেই বক্তব্য রাখার সময় বিজেপি নেতাদের নিশানা করেন তিনি। বলেন, “কয়েকজন বিজেপি নেতা রয়েছেন, যাঁরা শুধু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগ চাই বলে চিৎকার করছেন। আর ওই সকল বিজেপি নেতাদের জিভ ছিঁড়ে নেবে প্রমিলা বাহিনী।”

তার একদিন আগেই বীরভূমের মল্লারপুরের শাসকদলের নেতা মানস বন্দ্যোপাধ্যায় একটি সভা থেকে বলেছিলেন, “বাড়িতে ডাং আছে তো? ডাংয়ের বাড়ি মারবেন। হাত-পা ভাঙবেন। ছ’মাসের জন্য হাসপাতালে ভর্তি করে দেবেন। আর ওদের বৌকে বলবেন, যাও তোমার স্বামীকে হাসপাতালের ভাত খাওয়াতে পাঠালাম। অর্ধেক তুমি খাবে। আর অর্ধেক তোমার স্বামীকে খাওয়াবে।”

শনিবার মালদহ জেলা পরিষদের সদস্য মর্জিনা খাতুন বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “আমাদের মুখ্যমন্ত্রী জাস্টিস চেয়েছেন। আমরাও সেইটাই চাইছি। আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদে নামলে এবার বিজেপি নেতা কর্মীদের খুঁটিতে বেঁধে রাখব।” তৃণমূলের মালদহের জেলা সম্পাদক বুলবুল খান বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দেন। তিনি বলেন, “বিজেপি নেতাদের চাপ দিতে হবে। বাড়ি বাড়ি ঘেরাও করতে হবে। জিজ্ঞাসা করতে হবে, দোষীদের ফাঁসি কবে হবে?”

কোচবিহারের দিনহাটার তৃণমূল বিধায়ক উদয়ন গুহ আবার ফোঁস নয়, দংশনের নিদান দিলেন। দিনহাটায় তৃণমূলের সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, “পরিকল্পিতভাবে বদনাম করা হচ্ছে। মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন। সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে এসব বাড়তে থাকবে। তাই এক বার কেউ দংশন করলে, পাঁচ বার দংশন করতে হবে। ওরা যদি একটা দাঁত বসায়, পাঁচটা দাঁত বসানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। তাহলে মিথ্যাচার বন্ধ হবে।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোঁস করতে বলেছেন জানিয়ে বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের তৃণমূল নেতা অতীশ সরকার। তাঁর স্ত্রী অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভার কাউন্সিলর। তৃণমূলের একটি সভায় বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে অতীশ বলেন, “মমতা বন্দোপাধ্যায় ফোঁস করতে বলেছেন, সাবধান হয়ে যান। আমরা পাড়ায়-পাড়ায় ফোঁস করলে, বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন তো?” এখানেই না থেমে তিনি বলেন, “আমরা যদি ফোঁস করি, আপনার বাড়ির মা-বোনদের সম্পর্কে কুৎসা রটিয়ে, বিকৃত ছবি করে যদি আপনার বাড়ির দরজায় টাঙিয়ে দিসে আসি, তাহলে ওই পোস্টারটা আপনি খুলতে পারবেন না। ওই দিনটা আসছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলে গেলাম।”

বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সোনারপুর দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক লাভলি মৈত্র। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী, সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করে তিনি বলেন, “সুজন, সায়নরা ঘুরে বেড়ান। তার একটাই কারণ। রাজ্যে বদল হয়েছিল, কিন্তু বদলা হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দিকে আঙুল তুললে, কীভাবে আঙুল নামাতে হয়, সেটা আমরাও জানি। আমরা শান্ত আছি, কিন্তু দুর্বল নই।”

বিজেপিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূলের বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মণ্ডল। শনিবার বাঁকুড়ার সোনামুখীতে দলের এক প্রতিবাদ মিছিল শেষে অবস্থান মঞ্চ থেকে তাঁর নিদান, “আরজি কর ইস্যু নিয়ে বিজেপির নেতা কর্মীরা অশান্তি পাকানোর চেষ্টা করলে তাঁদের কোমর থেকে পা পর্যন্ত ভেঙে দেবেন।”

তৃণমূলের নেতা-নেত্রীদের একের পর এক হুঁশিয়ারি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। অশোকনগরের তৃণমূল নেতার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি লেখেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নিদানের পরই তৃণমূলের ‘গুণধর’ লুম্পেন বাহিনীর ভাষণ শুনুন! অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই নাকি প্রতিবাদীদের বাড়ির মা-বোনদের বিকৃত ছবি দেওয়ালে টাঙিয়ে দেবে বলছে অশোকনগর কল্যাণগড় পৌরসভার কাউন্সিলরের স্বামী।” অশোকনগরের তৃণমূল নেতার বক্তব্য এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, অশোকনগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলর অতীশ সরকার তাঁর দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ মেনে “ফোঁস” করছেন।

আবার লাভলি মৈত্রের হুঁশিয়ারি নিয়ে সিপিএম নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কতজনকে দেখে নেবেন বিধায়ক ম্যাডাম? কতজনের ওঠানো আঙুল নামিয়ে দেবেন? ও হুমকিতে আমরা ভয় পাই না।”

দিকে দিকে তৃণমূল নেতা-নেত্রীদের ‘ফোঁস’ নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলছে। এই পরিস্থিতিতে অশোকনগরের ঘটনা নিয়ে এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেছেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, “যে দলীয় নেতা প্রতিবাদী মা-বোনেদের ছবি সংক্রান্ত বিকৃত মন্তব্য করেছিলেন, তাঁকে চিহ্নিত করে তৃণমূল এক বছরের জন্য সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই আচরণের নিন্দা করছে দল।”

আরজি কর কাণ্ড নিয়ে পথে শাসক-বিরোধীরা। তার মধ্যেই বাড়ছে ‘ফোঁস’। কথার জবাব দিচ্ছে বিরোধীরা। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ‘ফোঁস’ করতে বলেছিলেন। কামড়াতে নয়। শাসক-বিরোধীদের এই চাপানউতোরের মধ্যে আবার ‘ছোবল’ বসবে না তো? উঠছে সেই প্রশ্ন। আর এর উত্তর জানে শুধুই ভবিষ্যৎ।

আরও খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Tv9 বাংলা অ্যাপ (Android/ iOs)