SSC: পুলিশের চাকরি ছেড়ে স্বপ্নের পেশা শিক্ষকতায় যোগ দেন, ৮ বছর চাকরির পর হাইকোর্টের রায়ে চাকরিহারা ‘যোগ্য’ প্রবীরও!
SSC: প্রবীর বললেন, "বুঝতেই তো পারছেন পুলিশের চাকরি কতটা পরিশ্রমের-কঠিন। বিভিন্ন শিফটের ডিউটি। তার মাঝেই পড়াশোনা করতাম। বন্ধুদের কাছ থেকে নোটস নিতাম। পড়াশোনাটা চালিয়ে যাই চাকরির পাশাপাশি।"
কলকাতা: নদিয়ার প্রবীর মজুমদার। ১১ বছর ধরে পুলিশের চাকরি করতেন। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের পেশা ছিল শিক্ষকতা। পুলিশে চাকরির পাশাপাশি সিফটিং ডিউটির মাঝে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছেন। বিএড সম্পূর্ণ করেন। এরপর ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষা দেন। পাশ করেন। চাকরিতে যোগ দেন ২০১৮ সালে। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের সোমবারের নির্দেশে ১৯ হাজার যোগ্যদের ভিড়ে চাকরি গিয়েছে ‘যোগ্য’ প্রবীরেরও। এখন সকলেই তাঁকে বলছেন, কেন ‘সিকিওরড চাকরিটা ছাড়লি?’ নানা কথা- নানা গুঞ্জনে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন প্রবীর। ধর্মতলায় যোগ্য শিক্ষকদের সঙ্গে বিক্ষোভ- আন্দোলনে সামিল হয়েছেন তিনিও।
ছোট থেকেই আর্থিক কষ্টের মধ্যেই বড় হয়েছিলেন। কলেজ পাশের পর চাকরির খোঁজ করছিলেন। বন্ধুদের কাছ থেকেই শুনেছিলেন পুলিশে লোক নিচ্ছে। পুলিশের চাকরির লাইনে দাঁড়ান। চাকরি হয়ে যায় তাঁর। কিন্তু মনে তাঁর স্বপ্ন ছিল ছাত্র পড়ানোর। শিক্ষকতার পেশাই যে তাঁর স্বপ্নের চাকরি। তিনি বলেন, “সকলেরই তো স্বপ্নের পেশা বলে কিছু থাকে। আমারও ছিল। পুলিশে চাকরি করতাম বটে। কিন্তু মনে মনে চাইতাম শিক্ষক হতে।”
প্রবীর বললেন, “বুঝতেই তো পারছেন পুলিশের চাকরি কতটা পরিশ্রমের-কঠিন। বিভিন্ন শিফটের ডিউটি। তার মাঝেই পড়াশোনা করতাম। বন্ধুদের কাছ থেকে নোটস নিতাম। পড়াশোনাটা চালিয়ে যাই চাকরির পাশাপাশি।” ২০০৯ সালে ইন্টারভিউ পর্যন্ত গিয়েছিলেন প্রবীর। সেখানে বাদ চলে যান। কিন্তু পড়াশোনা থামাননি। ২০১৬ সালে ফের এসএসসি পরীক্ষায় বসেন। চাকরিও পান। ২০১৮ সালে রানাঘাটের স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন। আজ ৬ বছর চাকরি করছেন সেখানেই।
হাইকোর্টের রায়ে রাতারাতি চাকরিহারা তিনিও। বলছেন, “খুবই বিপর্যস্ত। এখন অনেকেই বলছে, আগের চাকরি ছাড়লি কেন, ওটা তো সিকিওরড ছিল। আমি আদালতের রায় নিয়ে কিছু বলব না, আমাদের কোর কমিটি রয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি।”
প্রবীরের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মা, দশ দিন আগে স্ত্রীর একটি কঠিন অপারেশন হয়েছে, বাড়িতে আড়াই বছরের সন্তান। হঠাৎ আকাশ ভেঙে পড়েছে তাঁর মাথায়। বললেন, “আজ স্ত্রীর পাশে থাকার সময় আমার, কিন্তু আজ আমি ধর্মতলায়।” বলতেই কেঁদে ফেললেন তিনি।