West Bengal Governors: ‘ঝড়’ উঠেছে বারবার, ফিরে দেখা রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের খণ্ডচিত্র

Governor vs Government: গোপালকৃষ্ণ গান্ধী যখন বাংলার রাজ্যপাল ছিলেন, তখনও সংঘাতের চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছিল। যদিও ধনখড় জমানায় এই সংঘাত তীব্র আকার নিয়েছিল।

West Bengal Governors: 'ঝড়' উঠেছে বারবার, ফিরে দেখা রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের খণ্ডচিত্র
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপালরা
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 27, 2023 | 6:06 PM

কলকাতা: জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar) যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ছিলেন, তখন রাজ্য-রাজভবন সংঘাতের বাতাবরণ চরমে পৌঁছেছিল। প্রায় নিত্যদিনের বিষয় হয়ে উঠেছিল। কোনও না কোনও ইস্যুতে রাজ্য-রাজ্যপাল ঠোকাঠুকি লেগেই থাকত। তবে সেসব এখন অতীত। লা গণেশন যখন সাময়িকভাবে বাংলার রাজ্যপাল হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন, তখনও বেশ সুন্দর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান ও প্রশাসনিক প্রধানের মধ্যে। পরবর্তীতে বাংলার নতুন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গেও মিষ্টি-মধুর সম্পর্ক রাজ্য সরকারের। সরস্বতী পুজোর বিকেলে রাজভবনে জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে রাজ্যপালের হাতখড়ির চিত্রটা অন্তত সেই ব্যাখ্যাই দিচ্ছে। সেই হাতেখড়ির অনুষ্ঠানের পরই গতরাতে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেন রাজ্যপাল। সেই নিয়েও বিস্তর গুঞ্জন ছড়িয়েছে।

তবে আপাতভাবে বাংলার নতুন রাজ্যপালের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক বেশ ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। তাহলে কি ধনখড়ের আমলের সেই রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের বাতাবরণ থেকে সরে এসে লম্বা দৌড়ে সাংবিধানিক প্রধানের সঙ্গে মানিয়ে চলার কৌশল নিচ্ছে রাজ্য সরকার? এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে। প্রসঙ্গত, রাজ্য – রাজ্যপাল সংঘাতের বাতাবরণ শুধু ধনখড় জমানাতেই নয়। তার আগেও একাধিকবার দেখা গিয়েছে। গোপালকৃষ্ণ গান্ধী যখন বাংলার রাজ্যপাল ছিলেন, তখনও সংঘাতের চিত্র প্রকট হয়ে উঠেছিল। যদিও ধনখড় জমানায় এই সংঘাত তীব্র আকার নিয়েছিল।

গোপালকৃষ্ণ গান্ধী – বুদ্ধদেব

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ যখন নন্দীগ্রামে গুলি চলেছিল, তখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নেতৃত্বাধীন বাম সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত গর্জে উঠেছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে ১৪ জনের মৃত্যুর খবরে গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী এক বিবৃতি প্রকাশ করে লিখেছিলেন, “আমার শরীরে রক্তের হিমস্রোত বয়ে গিয়েছে।” বাংলায় রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের কথা যতবার ঘুরেফিরে আসে, ততবার নন্দীগ্রাম নিয়ে তৎকালীন রাজ্যপালের এই বিবৃতিও উঠে আসে। পরবর্তীতে যখন ওই বছরেরই নভেম্বরে নন্দীগ্রাম পুনর্দখলের চেষ্টা চলছিল, তখনও বিরোধ বেধেছিল রাজ্য-রাজ্যপালের। গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী বলেছিলেন, “যে কায়দায় নন্দীগ্রাম পুনর্দখলের চেষ্টা চলছে, তা একেবারে বেআইনি। এটা মানা যায় না।”

শুধু তাই নয়, একটি পিছনের দিকে ফিরে গেলে, ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে ধর্মতলায় মমতার অনশন মঞ্চে গিয়ে বুদ্ধদেবের সরকারের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এবং মমতার সংঘাত মেটাতে মধ্যস্থতার ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল গোপাল কৃষ্ণ গান্ধীকে। রাজ্যপালের সেই ভূমিকাকেও কটাক্ষ করেছিল বামেরা। ২০০৮ সালের ভোট পরবর্তী হিংসার দৃশ্য দেখেও গোপালকৃষ্ণ গান্ধী মন্তব্য করেছিলেন, রাজনৈতিক হিংসার তাণ্ডব। পরবর্তীতে গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর রাজ্যপাল হিসেবে বিদায়ী সংবর্ধনার অনুষ্ঠানের সময় বুদ্ধদেব গেলেও মমতা সেই সময় যাননি। পরে একেবারে শেষ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গিয়ে আলাদা করে দেখা করে এসেছিলেন গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর সঙ্গে।

কেশরীনাথ ত্রিপাঠী – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

এরপর কেশরীনাথ ত্রিপাঠী রাজ্যপাল থাকাকালীনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সংঘাত মাঝে মাঝে প্রকাশ্যে এসেছিল। বাদুরিয়া-বসিরহাট এলাকায় একটি গোষ্ঠী সংঘাত নিয়ে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী মমতাকে ফোন করে বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী কী করছেন? তিনি সামলাতে পারছেন না কেন? সেই নিয়ে গর্জে উঠে মমতা সাংবাদিক বৈঠকও করেছিলেন। তারপর আবার পাল্টা বিবৃতি জারি করেছিলেন রাজ্যপাল। লিখেছিলেন, “সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর কথার ধরন এবং ভাষা দেখে আমি অবাক। টেলিফোনে রাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর কথা হলে তা পাঁচ কান করা উচিত নয়। রাজ্যে যা ঘটছে তা দেখে রাজ্যপাল চুপ করে বসে থাকতে পারে না।”

জগদীপ ধনখড় – মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

যদিও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের আমলে সেই সংঘাতের বাতাবরণ চরম পৌঁছে গিয়েছিল। কখনও পদস্থ আমলাদের তলব করা নিয়ে বিতর্ক, তো আবার কখনও জেলা সফরে গিয়ে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করা নিয়ে সংঘাত। সরকারের সঙ্গে আলোচনার বিবরণ কথায় কথায় টুইটারে প্রকাশ করে দেওয়া, তা নিয়েও সংঘাত তৈরি হয়েছিল। রেড রোডে দুর্গা কার্নিভালে তৎকলীন রাজ্যপাল ধনখড়কে ‘ব্ল্যাক আউট’ করা নিয়েও ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন রাজ্যের তৎকালীন সাংবিধানিক প্রধান।

বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণ লাইভ সম্প্রচার না করা নিয়ে সংঘাত তৈরি হয়েছিল। দূরবর্তী জেলা সফরে হেলিকপ্টার চাওয়া নিয়েও বিতর্কের জন্ম নিয়েছিল। আবার শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা দেওয়া নিয়েও সংঘাত হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে রাজ্যে শিল্প বান্ধব পরিবেশ গড়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন ধনখড়। বিধানসভার কাজে সরাসরি রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের অভিযোগেও রাজ্য-রাজ্যপাল সংঘাতের বাতাবরণ চরমে পৌঁছেছিল। শিল্প সম্মেলনে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের কত শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে, তার হিসেব চাওয়া নিয়েও বিতর্কের জল অনেক দূর গড়িয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বিনিয়োগের হিসেব প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছিলেন ধনখড়।

জগদীপ ধনখড় সরব হয়েছিলেন ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়েও। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে জেলা সফরও করেছিলেন। নির্বাচন পরবর্তী হিংসা দেখতে অসমের অস্থায়ী শিবিরেও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। দিল্লির মাটিতে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করা নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। এমনকী পরিস্থিতি এমন হয়েছিল, লোকসভার অন্দরে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, “মোদীজি রাজ্যপাল ধনখড়কে প্রত্যাহার করুন।”