Adi Ganga Restoration Work: আদি গঙ্গা সংস্কারে চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত
Adi Ganga: মোট ১১৪ কিলোমিটার এই নিকাশি লাইন মূল নিকাশি পাম্প স্টেশনগুলির সঙ্গে যুক্ত হবে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ আসার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেড় বছরের মধ্যে অন্তত সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং লিফটিং পাম্পিং স্টেশন গুলি তৈরি করতে হবে।
কলকাতা: এতদিন মৌখিক হুঁশিয়ারি দিত জাতীয় পরিবেশ আদালত বা ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইবুনাল। এবার রীতিমত বিজ্ঞপ্তি জারি করে আদি গঙ্গা (Adi Ganga) বা টালি নালা সংস্কারের কাজ শেষ করার জন্য চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। আর সেই গুঁতো খেয়ে তড়িঘড়ি ‘জলে নামল’ পুরকর্তৃপক্ষও। পরিবেশবিদরা বলছেন, যে সক্রিয়তা অনেকদিন আগেই দেখানো উচিত ছিল, তা জাতীয় পরিবেশ আদালতের কড়া নির্দেশের পর পুরকর্তৃপক্ষ দেখাচ্ছে। জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে নমামি গঙ্গে প্রকল্পের অধীনস্থ এই আদিগঙ্গা সংস্কারের কাজ শেষ করতে হবে। ২০২৫ সালের ১৫ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার যাবতীয় প্রকল্প রিপোর্ট জাতীয় পরিবেশ আদালতে জমা দিতে হবে। একইসঙ্গে আদালত নির্দেশ দিয়েছে, কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, কলকাতা পুরনিগম, রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পরিবেশ দফতর, ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা-সহ এই মামলার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি সংস্থাকে এই সংস্কারের কাজে সমন্বয় রেখে কাজ করতে হবে।
স্বাভাবিকভাবেই এই নির্দেশের পর ঘুম ছুটেছে কলকাতা পুরকর্তৃপক্ষ ও কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির। নির্দেশের পর হয়েছে একের পর এক বৈঠক। খোদ রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম আদিগঙ্গা সংস্কার কোন জায়গা থেকে শুরু হবে তা পরিদর্শনে বেরিয়েছেন। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিগঙ্গার সংস্কারের কাজ মাস চারেক হল শুরু করেছে। এর পাশাপাশি আদি গঙ্গার তীরের সৌন্দর্যায়নের কাজ চলবে। কলকাতা পুর এলাকার বাইরে কাজ করবে রাজ্যের সেচ দফতর।
প্রথম দফায় ৪.৭ কিলোমিটার পুর এলাকায় কাজ হবে। খরচ হবে ১১.১৬ কোটি টাকা। যদিও এই সামান্য অংশ কাজ করতে কেন এত দেরী হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন পরিবেশবিদরা। এই সামান্য অংশ করতে যদি এত সময় লাগে, তাহলে আদি গঙ্গার বিশাল অংশ সংস্কার করতে কত সময় লাগবে, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন পরিবেশবিদরা। কেন্দ্রীয় জলশক্তি মন্ত্রক সূত্রের খবর, আদিগঙ্গার পুনরুজ্জীবন প্রকল্পের জন্য প্রায় ৬৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
মন্ত্রকের অধীনস্থ ‘ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা’র (এনএমসিজি) সাম্প্রতিক বৈঠকে আদিগঙ্গার জন্য ৬৫৩.৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যদিও কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, আদি গঙ্গা সংস্কার এবং আনুষঙ্গিক পরিকাঠামো তৈরি করার জন্য মোট ৯৭৪ কোটি ৭৬ লক্ষ টাকার সুপারিশ তৈরি করে ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গার কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে যাবতীয় সুপারিশপত্র পাঠানো হয় রুরকির আইআইটির কাছে। সেখান থেকে যাবতীয় সুপারিশের মূল্যায়ণ করে। তারপরই ২৮১ কোটি টাকা কমিয়ে ন্যাশনাল মিশন ফর ক্লিন গঙ্গা আদি গঙ্গার জন্য প্রায় ৬৫৩.৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করে।
২০১৭ সাল থেকে টালিনালা বা আদিগঙ্গা সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের মধ্যে দড়ি টানাটানি চলছে। যার জেরে এখনও টালিনালার সম্পূর্ণ সংস্কার হয়নি। কলকাতার ৭৭টি বড় নিকাশি নালার জল এসে মিশেছে আদিগঙ্গায়। যে কারণে সেই জল আবর্জনায় ভরে থাকে। এলাকায় মশার ব্যাপক উপদ্রব। তিতিবিরক্ত এলাকার বাসিন্দারা।
কলকাতা পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে ‘হ্যাম’ পদ্ধতিতে টেন্ডার করার কথা বলেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতে কেউ অংশগ্রহণ করেনি। পরে ফিরহাদ হাকিম ব্যক্তিগতভাবে পুর ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রকের সচিব দুর্গাচরণ মিশ্রকে চিঠি দেন। তাতেই ‘বোট’ পদ্ধতিতে টেন্ডার করার অনুমতি মিলেছে। টালিনালায় একটাই টেন্ডার পড়েছে। গোটা বিষয়টি বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছে গিয়েছে অনুমোদনের জন্য যায়।
কলকাতা পুরনিগমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বৃজি, ওয়ারলেস পার্ক এবং গলফ গার্ডেন – এই তিনটি জায়গায় নতুন সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হবে। নতুন একটি লিফটিং পাম্পিং স্টেশন তৈরি করা হবে বৃজিতে। মোট তিনটি নিকাশি পরিশোধন প্লান্ট (সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বা এসটিপি) তৈরির জন্য ওই পরিমাণ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই তিনটি প্লান্টের পরিশোধন ক্ষমতা যথাক্রমে দৈনিক ১ কোটি, ১.১৬ কোটি ও ৩০ লক্ষ লিটার। ফলে বিপুল পরিমাণ তরল বর্জ্য প্রস্তাবিত প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করা যাবে।
টালিনালা দু’ধারে মান্ধাতার আমলের ১৬টি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট আছে। সেগুলি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। সেই প্ল্যান্টগুলির মেশিন বদল করা হবে। গড়িয়া থেকে আলিপুর হয়ে দইঘাট পর্যন্ত ১৫.৫০ কিমি বিস্তৃত রয়েছে টালিনালা। আশপাশের নিকাশি নোংরা জল যাতে আদিগঙ্গায় পড়ে দূষণ না ছড়াতে পারে তার জন্যই এই সিদ্ধান্ত। এছাড়াও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আশপাশের এলাকার যত নিকাশি লাইন সরাসরি আদিগঙ্গার সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে, সেগুলির মুখ আদিগঙ্গা থেকে ঘুরিয়ে সরাসরি নিকাশি পাম্প স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
মোট ১১৪ কিলোমিটার এই নিকাশি লাইন মূল নিকাশি পাম্প স্টেশনগুলির সঙ্গে যুক্ত হবে। জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ আসার পর সিদ্ধান্ত হয়েছে, দেড় বছরের মধ্যে অন্তত সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট এবং লিফটিং পাম্পিং স্টেশন গুলি তৈরি করতে হবে। গঙ্গার জলে জোয়ার এলে দেখা যায় সেই জল খুব একটা আদিগঙ্গা ভিতরে ঢুকে না। বিভিন্ন অংশে যেভাবে পাইলিংয়ের কাজ হয়েছে সেই কারণে গঙ্গার জল আদিগঙ্গা ভেতরে জোয়ারের সময় ঢুকে না। তাই যে সংস্থা এই আদিগঙ্গা সংস্কারের কাজ করবে তাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হবে এই জোয়ারের জল যাতে আদিগঙ্গা ঢুকতে পারে তার ব্যবস্থা নিতে।