শীতের শহরে নেই বইমেলা, করোনা-কাঁটায় ‘বিষাদী’ বইপ্রেমী থেকে বইবাজার
বইমেলা নানা মানুষের প্রাণের উৎসব। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকের পেশাও। তাই বইমেলার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ
অরুণাভ রাহারায় : ৪৫তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা (Kolkata International Book Fair) আপাতত স্থগিত। কিছুদিন আগেই গিল্ড কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বইমেলার তারিখ পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। অতিমারির কারণে মেলা পিছিয়ে যাচ্ছে। আগামী দিনে জানা যাবে ২০২১ সালের বইমেলার (Kolkata International Book Fair) তারিখ। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট সময় বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে না বলে মন ভার অনেকের।
পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের সভাপতি ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “২০২১ সাল শেষ হতে আরও ১১ মাস বাকি। বইমেলা পিছিয়ে গিয়েছে ঠিকই, তবে অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে আমি আশাবাদী। এবারের থিম কান্ট্রি বাংলাদেশ। শেখ মুজিবুর রহমানের শতবর্ষ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হবে। এ বছর মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসবেন বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতি সব বদলে দিয়েছে। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বইমেলার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় বিমর্ষ হয়ে আছেন।”
আরও পড়ুন : এ বছর কলকাতা বইমেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে
সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “এবার যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি, তা আগে কখনও আমাদের জীবনে আসেনি। তাই অন্য বারের সঙ্গে তুলনা করলে চলবে না। এবার নস্টালজিয়া করে লাভ নেই। পাঠকের ভিড় না হলে বইমেলা মানায় না। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষ না এলে, বই বিক্রি না হলে বিক্রেতারাই বা স্টল সাজাবেন কন? কাজেই বইমেলার তারিখ পরিবর্তন আমাদের মেনে নিতে হবে। সব মিলিয়ে এটা ঠিক সিদ্ধান্ত।”
বইমেলায় জমজমাট থাকে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন। মনখারাপ লিটল ম্যাগাজিন কর্মীদেরও। ‘আদম’ পত্রিকার সম্পাদক গৌতম মন্ডল বলেন, “বইমেলা আমাদের মিলনমেলা। বইমেলার তারিখ পরিবর্তন মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।” তিনি গিল্ড কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে অপছন্দ করে প্রশ্ন তোলেন, “চারদিকে অনেক অনুষ্ঠান হচ্ছে। ভোটের প্রচারও থেমে নেই। সেখানে জমায়েত হচ্ছে মানুষ। সবই যদি হতে পারে তাহলে বইমেলা নির্দিষ্ট সময় হবে না কেন?”
আরও পড়ুন : ‘ই-স্নানেই’ পুণ্য অর্জন, করোনা আবহেও অব্যাহত গঙ্গাসাগর মেলা
গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে বলেন, “সবার আগে মানুষের জীবন। বইমেলা হলেই ভিড় হবে। আর করোনা পরিস্থিতিতে ভিড় মানে বিপত্তি। সেজন্য আমরা বইমেলা পেছানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি জানি, এজন্য অনেক ছোট প্রকাশক, লিটল ম্যাগাজিন, ছাপাখানার কর্মীদের অসুবিধে হবে। ফি বছর বইমেলার দিকে তাকিয়ে থাকেন তাঁরা। আমার সমবেদনা তাঁদের জন্য। আশা করি দ্রুতই সুখবর আসবে।”
বইমেলা (Kolkata International Book Fair) নানা মানুষের প্রাণের উৎসব। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেকের পেশাও। তাই বইমেলার তারিখ পিছিয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ। চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নর মতে, “বইমেলা আমাদের মস্ত বড় পার্বণ। এই মেলার সঙ্গে বহু মানুষের পেশা জড়িয়ে আছে। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে আমাদের স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত। বইমেলা (Kolkata International Book Fair) পিছিয়ে গেল। যাঁরা মেলায় ছবি বিক্রি করেন কিংবা পোট্রেট আঁকেন তাঁদের অসুবিধে হবে ভেবে খারাপ লাগছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে বইমেলা হতে পারে না। তাই অনেক ক্ষতি স্বীকার করেই মারণ ভাইরাস থেকে দূরে থাকতে বইমেলা পিছিয়ে যাওয়ার কষ্ট মেনে নিতে হচ্ছে।”
আরও পড়ুন : ‘আগে পেটে ভাত, পরে চলচ্চিত্র উৎসব’, বন্ধু রাজের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে বিস্ফোরক রুদ্র
প্রতি বছর জানুয়ারির শেষে বইমেলা শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারির প্রথমে শেষ হয়। শীতকালে বইমেলায় যাওয়া অনেকের বাৎসরিক অভ্যেস। এবার সেই অভ্যেসে ছেদ পড়ল। পিছিয়ে গেল বইমেলার দিন। বিষাদ বইপ্রেমীদের মনে।