Women’s day 2022: তিন বাঙালি মহিলার কার-অ্যাডভেঞ্চার
Women’s day 2022: বাইক নিয়ে একা পাড়ি দেন দুর্গম অঞ্চলে, এমন অনেক মহিলা বাইকার পাওয়া যায়, কিন্ত কার ব়্যালির ক্ষেত্রে খুব কম মেয়েই এগিয়ে আসেন। বা বলা যেতে পারে আসতে দেওয়া হয় না, বিপদে পড়ার ভয়ে।
মেয়েরা এখন সর্বত্র নিজেদের একটা জায়গা করে নিয়েছে, নিচ্ছে। খেলাধুলোর ক্ষেত্রেও তাঁরা পিছিয়ে নেই। কিন্তু কার ব়্যালির ক্ষেত্রে এই চিত্রটা একটু অন্যরকম। বিশেষ করে বাংলায়। এই বিভাগটিতে বাংলার মেয়েরা বেশ পিছিয়ে। বাইক নিয়ে একা পাড়ি দেন দুর্গম অঞ্চলে, এমন অনেক মহিলা বাইকার পাওয়া যায়, কিন্ত কার ব়্যালির ক্ষেত্রে খুব কম মেয়েই এগিয়ে আসেন। বা বলা যেতে পারে আসতে দেওয়া হয় না, বিপদে পড়ার ভয়ে। তবে নেই তা অবশ্য একেবারেই নয়। এমনই একজন হলেন দেবারতি চন্দ। কী বলছেন তিনি এই বিষয়ে? “আমাদের এখানে ছেলেরাই ব়্যালিতে অংশ নিতে গেলে বাড়ি থেকে নিষেদ্ধাজ্ঞা জারি হয়, সেখানে মেয়েদের এগিয়ে দেবে, এটা ভাবাই যায় না। তাছাড় ক্রিকেট, ফুটবলের আধিক্যর জন্যও এই স্পোর্টসের দিক থেকে সকলে দূরেই রাখতে চায় সন্তানদের। বিপদ কম, জাকজমক বেশি যে খেলায়, সেখানে মেয়েরা যেতে চাইলে, বাধা কম আসে। কিন্তু ব়্যালির মতো বিপদশঙ্কুল খেলায় উৎসাহ দেওয়ার মানুষ কমই,” বললেন দেবারতি। তাহলে তিনি কীভাবে এলেন?
দেবারতি চন্দ
আমার দুই পরিবারই এই খেলার সঙ্গে যুক্ত। বলতে পারেন বংশ পরম্পরায় পেয়েছি। তাই আমার ক্ষেত্রে কোনও বাধা ছিল না। ৯৮ সাল থেকে আমি ব়্যালিতে অংশ নিচ্ছি। ক্যালকাটা মটর ক্লাব থেকে আয়োজিত কলকাতা ব্ল্যাইন্ড ব়্যালিতে প্রথমবার অংশ নেওয়া। ব্ল্যাইন্ড ব়্যালি কি? অনেকের মনেই এই প্রশ্ন আসতে পারে। আসলে প্রত্যেক ব়্যালিতে একজন করে নেভিগেটর থাকেন। মানে আপনি কোথা দিয়ে যাবেন, কতটা স্পিড থাকবে, ফিনিসিং লাইনে পৌঁছানোর সময়-এমন যাবতীয় তথ্য দেওয়াই নেভিগেটরের কাজ। এর জন্য তাঁকে একটি গাইড বুক দেওয়া থাকে। সেই গাইড বুকের সাহায্যে তিনি চালককে পাশ থেকে গাইড করেন। আমার প্রথম ব়্যালিতে এই কাজটি যিনি করেন, তিনি চোখে দেখতে পান না। গাইড বুক ব্রেইল-এ লেখা থাকে, তার সাহায্যে তিনি চালককে গাইড করেন। এই ব়্যালির নিয়মই হচ্ছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেস জিততে হবে। প্রথমে একটু নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু এখন এই ব়্যালিই আমার সবচেয়ে প্রিয়। কারণ চোখে দেখে গাইড করা আর অনুভব করে গাইড করা-দুটোর মধ্যে বিস্তর ফারাক। দেখতে না পেয়েও আমি ভয় পাচ্ছি কি না, স্পিড কম-বেশি করছি কতটা, সব বুঝতে পারেন এঁরা। এমন অনেক সময়ই হয়েছে আমি টেনশনে আছি, বা কোনও কারণে নার্ভাস, চোখে না দেখেও পাশে বসে তাঁরা সেটা অনুভব করেছেন শুধু নয়, ভরসাও দিয়েছেন।
মারুতি ১০০০ (এখন বন্ধ হয়ে গিয়েছে) দিয়ে প্রথম ব়্যালিতে অংশ নেওয়া। যদি কোনও কোম্পানি ব়্যালির আয়োজন করে, তখন তাদের গাড়ি চালাই। কিন্তু নিজের পছন্দ জিপসি। এখনও পর্যন্ত অনেক ব়্যালিতে ভাগ নিয়েছি, পুরস্কারও পেয়েছি। তবে গত ৮ বছর ধরে ভিনটেজ কার ব়্যালিতে অংশ নিয়ে পুরস্কার পাওয়ার অন্য আনন্দ। লে-লাদাখ গাড়ি চালিয়ে গিয়েছি। কিন্তু ব়্যালিতে অংশ নেওয়া হয়নি। বরফ-মরুভূমির মধ্যে ব়্যালির এক অন্য এক্সাইটমেন্ট। মহামারির জন্য আপাতত বন্ধ এই কার ব়্যালি। এই স্বপ্নপূরণের আশায় রয়েছি।
মা ঈপ্সিতা দাস, মেয়ে নীলাসা দাস। মা নেভিগেটর, মেয়ে চালক। পূর্ব ভারত থেকে ইস্ট জোন হিমালয়ান রেঞ্জ ব়্যালির প্রথম দুই রাইন্ড জিতে এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফাইনাল রাউন্ডের জন্য। তাঁরা কীভাবে এই খেলার অংশীদার হলেন?
ঈপ্সিতা দাস
স্বামী নির্মাল্য দাস ব়্যালি করতেন। আমার ভাললাগা আর ভালবাসার জায়গা ছিল সেখান থেকেই। বিয়ের পর এক রকম তাঁর উৎসাহেই নেভিগেটর হওয়া। তাঁকে দেখতাম ব়্যালিতে অংশ নিতে, এবার তাঁর পাশে থেকে একসঙ্গে ব়্যালিতে অংশ নেব, এটা ভেবেই খুব আনন্দ হয়েছিল প্রথমবার। চিন্তাও ছিল। তিনি এই খেলার একজন অন্যতম চ্যাম্পিয়ান। এই খেলায় নেভিগেটরের বড় ভূমিকা। সেটা ঠিক মতো করতে না পারলে চালকের সমস্যা হয়। জামাই এই খেলায় পারদর্শী বলে বাবা-মা আপত্তি করেননি তেমন। ২০০৯ সালে প্রথম অংশ নিই। ব়্যালিতে যে নেভিগেশন বুক দেওয়া হয়, তাকে ‘টিউলিপ’ বলে। সেটা নিয়ে রীতিমতো পড়াশোনা করে, তারপর ময়দানে নামা। নির্মাল্য ছাড়াও অনেকের সঙ্গেই খেলায় অংশ নিয়েছি। তার মধ্যে অন্যতম দিপালী পোদ্দার। বাঙালি মহিলা যিনি কার ব়্যালিতে অংশ নিচ্ছেন অনেকদিন ধরে। তাঁর সঙ্গেও নেভিগেটর হিসেবে ব়্যালিতে ভাগ নিয়েছি। মেয়ে নীলাসা বড় হওয়ার পর এই খেলায় আসতে চায়। খুশি হই। আমাদের জার্নিটা ও এগিয়ে নিয়ে যাবে। ওকে দেখে যদি আরও মেয়েরা এই খেলায় অংশ নেয়, তাহলে অন্য প্রদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আমরা শক্তিশালী হব। এখন বাবা-র পাশাপাশি মেয়ের সঙ্গেও নেভিগেটর হয়ে অংশ নিচ্ছি কার রয্যালিতে।এ বছর মা-মেয়ে জুটি হিসেবে হিমালয়ান রেঞ্জের ফাইনাল রাউন্ড খেলতে যাচ্ছি চলতি মাসের ২৪ তারিখ।
নীলাসা দাস
বাবা-মাকে ছোট থেকে ব়্যালিতে অংশ নিতে দেখেছি। তখন থেকেই উৎসাহ ছিল। আমার বন্ধুরাও বাবা-মা, বিশেষ করে মাকে দেখে খুব উদ্বুদ্ধ হয়। অনেকেরই ইচ্ছে এই খেলায় অংশ নেওয়ার। কিন্তু সকলে প্রশংসা করলে কী হবে, কোনও বাড়ি থেকেই অনুমতি পাওয়া যায় না। অনেক বাড়িতে পরিবারের মানুষ এই খেলায় আছেন, কিন্তু সন্তানের ক্ষেত্রে থাকে বিধি নিষেধ। আমি ভাগ্যবান, আমার বাবা-মা তেমন নন। বরং মা পাশে থেকে গাইড করেন। অবশ্য তখন তিনি খুব পেশাদার। খেলা শুরুর আগে মা হিসেবে যা বোঝানোর বোঝান, ব়্যালিতে নেমে পরলে একদম অন্য মানুষ। ভুল করার জায়গা নেই। এখন প্রস্তুতি চলছে পাহাড়ে গাড়ি চালানোর। প্রথমবার আমি পাহাড়ের ব়্যালিতে অংশ নিতে যাচ্ছি।
গ্রাফিক্স ও অলংকরণ- অভিজিৎ বিশ্বাস
আরও পড়ুন- Women’s day 2022: টেলিভিশনের পুরুষ অভিনেতাদের জীবনের অনস্ক্রিন আর অফস্ক্রিনের নারী
আরও পড়ুন- West Bengal Nattya Mela: শুরু হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমির একবিংশ নাট্যমেলা