Phulkari: চাদর, কুশান কভার থেকে শুরু করে শাড়ি ফ্যাশনে এখন ইন ফুলকারি এমব্রয়ডারি, এই ঐতিহ্যবাহী হাতের কাজের উৎস জানেন?
Phulkari Embroidery Fabric: পঞ্জাবের কোনও পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে তা অত্যন্ত শুভ বলে ধরা হত। আর তখন থেকেই বাড়ির দিদা, ঠাকুমারা মেয়েটির জন্য ফুলকারি নকশায় কাঁথা, পোশাক এসব বানাতে শুরু করতেন
ফ্লোরাল প্রিন্ট বেশ কিছুদিন ধরেই ফ্যাশনে ইন। টেবিলের কভার থেকে শুরু করে, কুশান কভার, পর্দা, শাড়ি, বেডশিট, ওড়না সবেতেই এই ফুলকারি ডিজাইন বেশ চলছে। এছাড়া ব্যাগেও বেশ চলছে এই ফুলকারির কাজ। পঞ্জাবের ঐতিহ্যশালী এমব্রয়ডারি হল এই ফুলকারি। পঞ্জাবি ভাষায় ফুলকারির অর্থ হল ফুলের কাজ। সুচ সুতোয় সুন্দর করে তৈরি করা হয় ফুলের বাগান। পনেরো শতকে পঞ্জাবের গ্রামের মহিলারা প্রথম এই এমব্রয়ডারি শুরু করেন। শুধুই ফুল নয়, বিভিন্ন মোটিফ, জ্যামিতিক নকশাও সুচ সুতোয় ফুটিয়ে তোলা হয় কাপড়ে। ফুলকারির সব ডিজাইনও ভীষণ রকম উজ্জ্বল, রঙিন সুতোর আধিক্য থাকে এখানে। লাল-নীল-হলুদ-সবুজ-আকাশি-বেগুনি-কমলা এসব রঙই বেশি ব্যবহার করা হয়। সাদা, কালোর বিশেষ গুরুত্ব নেই এখানে। পঞ্জাবের লোককথার গল্পেও রয়েছে এই ফুলকারির উল্লেখ। এই সূচীকর্মের সঙ্গে পঞ্জাবের কিশোরী মেয়েদের একটা যোগসূত্র রয়েছে।
ফুলকারির উৎপত্তি বিষয়ে একাধিক তথ্য রয়েছে। বলা হয় ভারতের বিভিন্ন প্রদেশেই এই সূচিকর্ম জনপ্রিয় ছিল, যদিও এখন একমাত্র পঞ্জাবেই তার প্রচলন সবচেয়ে বেশি। আর পঞ্জাবের গ্রামীন মহিলারাই মূলত সুচ সুতোয় ফুলকারি কাজ করেন। ইরানেও এই শিল্পকর্মের প্রচল রয়েছে। সেখানে এই সুতোর কাজকে বলা হয় গুলকারি। এরকমও কেউ বলেন যে জাঠরা যখন ভারতের বিভিন্ন স্থানে অর্থাৎ হরিয়ানা, পঞ্জাব, গুজরাতে বসতি স্থাপন করে তখনই তারা সঙ্গে করে এই কাজ নিয়ে এসেছিল। পঞ্জাবীদের বিয়ের পোশাকেও ট্র্যাডিশন্যাল ফুলকারির কাজ করা থাকে।
পঞ্জাবের কোনও পরিবারে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে তা অত্যন্ত শুভ বলে ধরা হত। আর তখন থেকেই বাড়ির দিদা, ঠাকুমারা মেয়েটির জন্য ফুলকারি নকশায় কাঁথা, পোশাক এসব বানাতে শুরু করতেন। তাঁদের বিশ্বাস এভাবেই তাঁদের শিল্পকর্ম বংশ পরম্পরায় চালু থাকবে। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবেও ফুলকারির তৈরি পোশাক, চাদর দেওয়ার রীতি রয়েছে। আর্থিক ক্ষমতা অনুসারে ১০-১১ ব্যাগ ফুলকারির পোশাক, ব্যবহারসামগ্রী দেওয়া হয় পঞ্জাবি মেয়েদের বিয়েতে।
ফ্যাশনেও কয়েক বছর ধরে জনপ্রিয় এই ফুলকারির কাজ। ফুলকারি কাজের দোপাট্টার দাম শুরু হয় ২ হাজার টাকা থেকে, তা হতে পারে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। ট্র্যাডিশন্যাল ফুলকারির কাজ থাকে ভেলভেটের উপরে। ফুলকারি কাজের শাড়ির দাম শুরু ৬ হাজার টাকা থেকে আর কুশান কভার, চেয়ারের কভারের দামও হয় দেড় হাজার থেকে শুরু। ফুলকারির কাজের মধ্যে মিরর ওয়ার্কও থাকে। পুরো হাতের কাজ বলে ফুলকারির স্কার্ফ, দোপাট্টার দাম সাধারণ প্রিন্টের তুলনায় অনেকটাই বেশি।