Sarees of Bengal: রূপের বাহারে মহিলাদের ধন্দে ফেলে দেয় বালুচরী আর স্বর্ণচুরী, আপনি চিনবেন কীভাবে?
Traditional Bengal Silk: বিষ্ণুপুরের আর একটি জনপ্রিয় শাড়ি হল স্বর্ণচুরী। একেবারে বিষ্ণুপুরের ঘরানাতেই বোনা হয় এই শাড়ি। পৌরাণিক কাহিনি ছাড়াও এই শাড়িতে ফুটে ওঠে টেরাকোটার ডিজাইনও
শিল্প-সংস্কৃতি-পোশাক এবং খাবার সবতেই কিন্তু বাঙালি তাঁর নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখেছেন। বাঙালির যেমন নিজস্ব রয়েছে, রসগোল্লা নিয়ে যেমন বাঙালি লড়াই করে তেমনই কিন্তু শাড়ির ময়দানেও পিছিয়ে নেই। বাংলার ধনেখালি, শান্তিপুরী, তাঁত, মুর্শিদাবাদি সিল্ক, রেশম সিল্ক, বালুচরী, স্বর্ণচুরী- বিশ্বদরবারে সমান ভাবে জনপ্রিয়। বিশ্বজুড়েই কিন্তু চাহিদা রয়েছে এই কয়েকটি শাড়ির। সারা দেশের যে কটি ঐতিহ্যবাহী শাড়ি জিওগ্রাফিকাল আইডেন্টিফিকেশন (GI) এর অধীনে স্থান পেয়েছে তার মধ্যে কিন্তু আছে বাংলার তিন শাড়ি। বালুচরী, ধনেখালি এবং শান্তিপুরী। এই তিন শাড়ির জনপ্রিয়তা এখনও কিন্তু তুঙ্গে। যে কোনও মহিলার কাছেই শাড়ি একরকম সম্পদ।
প্রতিটা শাড়ির নেপথ্যে যেমন থাকে বিভিন্ন গল্প তেমনই মিশে থাকে নস্ট্যালজিয়াও। এমন অনেকেই আছেন যাঁরা শুধুমাত্র স্মৃতি আগলাতেই মা-ঠাকুমার শাড়ি থরে থরে সাজিয়ে রাখেন আলমারিতে। আলমারি ভরা থাক পছন্দ এবং ট্র্যাডিশন্যাল শাড়িতে তা চান সকলেই। তাই বালুচরী, স্বর্ণচুরী, ইক্কত, সম্বলপুরী, গাদোয়াল এসব থাকে সেই তালিকায়। এখনও বাড়ির যে কোনও অনুষ্ঠানে মেয়েদের নজর থাকে বালুচরী বা স্বর্ণচুরীর দিকে। এই সব শাড়িতে প্রত্যেক মেয়েকেই যেমন দেখতে ভাল লাগে তেমনই কিন্তু বজায় থাকে ঐতিহ্যও।
বালুচরী শাড়িটিতে রামায়ণ, মহাভারতের বিভিন্ন দৃশ্যের বর্ণনা থাকে। সুতোর কাজের সাহায্যে শাড়ি জুড়ে ফুটিয়ে তোলা হয় পৌরাণিক কাহিনি। অষ্টাদশ শতকে, বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খান এর সমৃদ্ধ বয়ন ঐতিহ্যের পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং এই শাড়ি তৈরির নৈপুণ্যকে ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদের বালুচর গ্রামে নিয়ে আসেন। পরবর্তী সময়ে শিল্পটি বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে চলে আসে। মল্ল রাজবংশের রাজত্বকালে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে শাড়ি শিল্পের উন্নতি ঘটে। বৃটিশশাসন কালে এই বালুচরী শিল্পে সাময়িক মন্দা দেখা গেলেও পরবর্তী সময়ে মহিলাদের মধ্যে চাহিদা বাড়ায় এই শিল্প প্রাণ ফিরে পায়। তাঁতিরা আবারও বয়নকাজ শুরু করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বালুচরী গায়ে দিয়ে সাজার জন্য মহিলারা মুখিয়ে থাকেন। পয়লা বৈশাখের দিন সন্ধ্যায় কোনও নিমন্ত্রণ থাকলে সেইদিনও কিন্তু অনেকেই বেছে নেন বালুচরী।
তেমনই বিষ্ণুপুরের আর একটি জনপ্রিয় শাড়ি হল স্বর্ণচুরী। একেবারে বিষ্ণুপুরের ঘরানাতেই বোনা হয় এই শাড়ি। পৌরাণিক কাহিনি ছাড়াও এই শাড়িতে ফুটে ওঠে টেরাকোটার ডিজাইনও। স্বর্ণচুরী শাড়িতে থাকে সোনালি জরির কাজ আর বালুচরীতে থাকে রূপোলি জরির কাজ। আর স্বর্ণচুরীর আঁচলে থাকে মিনাকারীর কাজ। দুই কাজের ফারাক দেখেই কিন্তু শাড়ি আলাদা করা যায়। দামের ফারাও বিশেষ থাকে না। তবে স্বর্ণচুরীর দাম বালুচরীর থেকে ১-২ হাজার টাকা বেশি হয়। সেই সঙ্গে দেখতেও একটু চকচকে হয়। অন্যদিকে বালুচরী শাড়িতে থাকে ম্যাট ফিনিশ। যে কোনও বড় দোকানেই পেয়ে যাবেন পছন্দের এই শাড়ি। তবে কেনার আগে যাচাই করে নেবেন।
আরও পড়ুন: Silk Sarees: আলমারি ঠাসা সিল্ক শাড়িতে, কী ভাবে নেবেন যত্ন?