নজিরবিহীন! দিল্লির এই লেখক-চাওয়ালার প্রায় ২৫টি বই পাওয়া যাচ্ছে অ্য়ামাজন-ফ্লিপকার্টেও
লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলা থেকে দিল্লিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে অন্য পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
দেশে বিভিন্ন রাজ্যে চাওয়ালাদের নজিরবিহীন কৃতিত্ব রয়েছে। ক্রেতা বাড়াতে তাই চায়ের স্বাদে বদল আনেন, নানারকম নাম দেন, আবার অনেকে সুরেলা কণ্ঠে গ্রাহকদের মন জয় করেন। সম্প্রতি, দিল্লির এক চাওয়ালার কাহিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে, যিনি নিজে বই লেখেন ও লেখার প্রতি তাঁর ভালবাসার জন্য খ্যাতিও অর্জন করেছেন। এখনও পর্যন্ত তাঁর লেখা ২৫টি বই প্রকাশ করেছেন তিনি।
লক্ষ্মণ রাও। গত তিন দশক ধরে দিল্লির হিন্দি ভবনের বাইরে আইচিও-র কাছে বিষ্ণু দিগম্বর মার্গের সামনে চায়ের একটি দোকান চালান। লেখক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে তিনি মহারাষ্ট্রের অমরাবতী জেলা থেকে দিল্লিতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে অন্য পেশাকে বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল সেই সময়। তবে তিনি হাল ছাড়ার পাত্র নন। চা বিক্রি করতে করতেই নিজের স্বপ্নকে আকাশের ওড়ার ইচ্ছে পূরণ করেন।
১৯৭৭সালে একটি পান দোকান দিয়ে যাত্রা শুরু তাঁর। পরে তা চা বিক্রির ব্যবসার দিকে চলে যায়। এই চা বিক্রি করার সময় থেকেই তিনি লেখা শুরু করেন। তারপর দ্রুত প্রকাশনা সমস্থার কাথে আসা শুরু করেন বই প্রকাশনের জন্য। কিন্তু একজন চা বিক্রেতার লেখা কে ছাপাবে? জুটতে থাকল প্রত্যাখ্যান। আর সেটাই একপ্রকার বন্ধুত্বের মতো হাত ধরাধরি করে চলতে শুরু করে। কিন্তু তাতেও তিনি থেমে থাকেননি। সকলেই যখন তাঁর লেখা প্রকাশ করতে নাকচ করে দেন, সেইসময় ঝুঁকি নিয়েই নিজের বই নিজেই ছাপাতে শুরু করেন। এখনও পর্যন্ত ১৬টি বই তিনি স্ব-প্রকাশ করেছেন। তার চায়ের স্টলে নিজের প্রকাশিত বই ছাড়াও ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজনের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মেও তাঁর বই পাওয়া যায়।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী নামে একটি বই প্রকাশ করেছিলেন। সেই নাটক লেখার পরই তিনি লাইমলাইটে চলে আসেন। কঠোর পরিশ্রমের নজিরবিহীন কৃতিত্বের জন্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও প্রেসিডেন্ট প্রতিভা পাটিলের নজরে আসেন তিনি। ২০১৮ সালে তাঁর শেষ লেখা ছিল ভারতীয় অর্থশাস্ত্র আয়েব মৌলিক সিদ্ধান্ত।
করোনা অতিমারির কারণে তাঁর ব্যবসায় কোনও প্রভাব পড়েছে কী? তাঁর কথায়, সকলের মতো আমি ব্যতিক্রমী নই। অতিমারির প্রভাব ব্যবসায় পড়েছে। কিন্তু আমার ছেলেরা পুরো ব্যাপারটা দারুণ ভাবে সামলে নিয়েছে। ফলে আমি খুব খুশি মনে পরবর্তী বই লেখার জন্য মনোনিবেশ করতে পেরেছি। এবার তাঁর বিষয় হল মহাভারতের একটি ঘটনা। হস্তিনাপুর নিয়ে লেখালেখি করছেন এই গোটা লকডাউনে।
বয়য় বেড়েছে। বই লেখার ইচ্ছেও তত বেড়ে চলেছে। কিন্তু চায়ের ব্যবসা বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা আপাতত তাঁর নেই। তিনি বলেছেন, চায়ের দোকান হল সেই দোকান যেখানে আড্ডা দিতে দিতেই সাহিত্য-সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। আর সেই পরিবেশটাই আমি চোখের সামনে আরও বাড়তে দেখতে চাই। ইচ্ছে থাকলে উপায় ঠিক বের হবেই। এই মূলমন্ত্রেই বিশ্বাসী লক্ষ্মণ রাও।
আরও পড়ুন: Ranna Pujo: রান্না পুজোয় খেসারির ডাল-কচু-নারকেল ভাজার সঙ্গে ইলিশ মাস্ট! রইল স্পেশাল একটি রেসিপি