করোনা ভাইরাস কি জৈব অস্ত্র?

ভারতের করোনার গ্রাফ আর আর-নটের অঙ্ক মেলালেই বেরিয়ে আসতে পারে উত্তর। তথ্য জোগাড় করে অঙ্ক কষলে সত্যি প্রমাণিত হতে পারে এই 'হাইপোথিসিস'।

করোনা ভাইরাস কি জৈব অস্ত্র?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 27, 2021 | 9:47 AM

বরুণ দাস: গবেষণার ক্ষেত্রে যখন কোনও নির্দিষ্ট কারণ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকে না, তখন হাইপোথিসিস(Hypothesis)-র সাহায্য নেওয়া হয়। অর্থাৎ হাতে প্রমাণ কম থাকলে অনুমানের উপর যে সম্ভাব্য ব্যাখ্যা করা হয়, তাকেই হাইপোথেসিস বলা যেতে পারে। বিশ্বের অন্যতম বড় মহামারির পাশাপাশি করোনাভাইরাস (Coronavirus) একটা বড় ধাঁধা। বিজ্ঞানীদের হাতে করোনার উৎস ও প্রকৃতি সম্পর্কে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য নেই। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, যদি এই ভাইরাস প্রাকৃতিক উপায়ে সৃষ্টি হয়ে থাকে, তাহলে এতদিনে তার সঙ্গে লড়াইয়ের পথ খুঁজে বার করা যেত। কিন্তু ভাইরাসের অভূতপূর্ব রূপ পরিবর্তন বিজ্ঞানীদের ধাঁধাঁয় ফেলেছে। কেউ জানেন না এই ভাইরাস কোত্থেকে এসেছে? কখন এসেছে? কখন শেষ হবে! এর ফলেই প্রশ্ন উঠছে, এই ভাইরাস কোনও ল্যাবে বিশেষভাবে তৈরি করা নয় তো! এর পেছনে কোনও বড় ষড়যন্ত্র লুকিয়ে নেই তো! স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না তো এই ভাইরাস?

ভারতে করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৯৮ হাজার। ১৬ সেপ্টেম্বর এই ৯৮ হাজারের অঙ্ক ছুঁয়েছিল করোনা। তারপর হঠাৎ করেই গ্রাফ নিম্নমুখী হতে থাকে। কার্যত এক ধাক্কায় নামে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কেন দৈনিক সংক্রমণ কমল, সে সময় তার কোনও ব্যাখ্যাই ছিল না। মনে করে দেখুন, ওই সময় কোনও লকডাউন(Lockdown)-ও চলছিল না। তখন যদি আমরা ওই নিম্নগামী সংক্রমণের ব্যাখ্যা খুঁজে পেতাম, তাহলে হয়ত দ্বিতীয় ঢেউয়ের লড়াইয়ে তার ব্যবহারিক প্রয়োগ করা যেত। তৃতীয় ঢেউয়েও সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগত।

আরও মনে করিয়ে দেওয়া যাক, প্রথম ঢেউয়ের শেষের দিকে একাধিক অনুষ্ঠান ও জমায়েত হয়েছিল। পরপর ছিল দুর্গা পূজা, ৩ দফার বিহার বিধানসভা নির্বাচন (Bihar Assembly Election), দীপাবলি, সবার শেষে বড়দিন। এত জমায়েত সত্ত্বেও গ্রাফ নীচের দিকে নামতে শুরু করল কী ভাবে? দ্বিতীয় ঢেউয়ের ক্ষেত্রেও একই ছবি। দৈনিক সংক্রমণ যেখানে মে মাসের ৬ তারিখে ৪ লক্ষ ১৪ হাজারে পৌঁছে গিয়েছিল, সেখানে এখন তরতর করে সংক্রমণের গতি কমতে শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে যদি কারণ হিসেবে ‘লকডাউন’কে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে প্রথম ঢেউয়ের ক্ষেত্রে সেই কারণ খাটে না। কারণ প্রথম ঢেউয়ের গ্রাফ যখন নীচের দিকে নামছিল, তখন লকডাউন ছিল না। হার্ড ইমিউনিটি(Herd Immunity)-র ব্যাখ্যাও এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কারণ হার্ড ইমিউনিটি পেতে গেলে অন্তত জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে করোনা আক্রান্ত হতে হবে। তারপরেও গ্রাফের নিম্নগমন এই গতিতে হওয়া সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় এই দ্রুত নিম্নগমনের ব্যাখ্যা শুধুমাত্র হাইপোথিসিসের মাধ্যমেই দেওয়া সম্ভব।

ক্রমে কমছে ক্ষমতা

আমার সীমাবদ্ধ অসংগঠিত গবেষণা বলছে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শুরুতে দেখা গিয়েছিল, যদি পরিবারের কোনও একজন সদস্য আক্রান্ত হন, তাহলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু সপ্তাহ কয়েক পরে এই ধরনটা বদলে যায়। দেখা যায়, পরিবাররে কোনও সদস্য আক্রান্ত হলেই যে বাকিরাও আক্রান্ত হবেন, এমন কোনও নির্দিষ্ট ঘটনা ঘটছে না। এক্ষেত্রে ‘হাইপোথিসিস’ বা অনুমান করা যেতে পারে প্রথম যে ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাঁর কাছ থেকে পরবর্তী ব্যক্তিতে করোনা সংক্রমিত হওয়ার সময় শক্তি হারাচ্ছে। এইভাবে চতুর্থ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পৌঁছনর সময় ভাইরাস প্রায় সম্পূর্ণ শক্তিই হারিয়ে ফেলছে।

যদি গোটা বিশ্ব থেকে নমুনা ও প্রমাণ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করা যেত, তাহলে হয়ত এই তত্ত্বই নিঃসন্দেহে সত্যি বলে প্রমাণিত হত। ভাইরাস একজনের শরীর থেকে অন্যজনের শরীরে ছড়িয়ে পড়ার সময় শক্তি হারাতে থাকে, এই তত্ত্ব সত্যি হলে নিম্নমুখী গ্রাফের ব্যাখ্যা পাওয়া সহজ হবে। অর্থাৎ একটা সময়ের পর ভাইরাস তার সংক্রমণের শক্তি হারাবে। যদি এই তত্ত্ব প্রমাণিত হয় আর তার সঙ্গে সংক্রমণের সংখ্যাতত্ত্ব ‘আর-নট'(R-naught)-এর হিসেব সামনে আনা যায়, তাহলে বুঝতে সমস্যা হবে না যে এই ভাইরাস আদতে জৈব আক্রমণ ছাড়া আর কিছুই নয়।

আর-নট: অঙ্ক কী কঠিন!

কোনও ভাইরাস নির্দিষ্ট কতজনকে সংক্রমিত করতে পারে, সেই হিসেবটাই আর-নট(R-naught)। বিশেষজ্ঞদের অনুমান করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে আর-নট হল ৫। অর্থাৎ এক জন করোনা আক্রান্ত ৫ জনকে সংক্রমিত করতে পারেন। সুতরাং যদি পাঁচ জন প্রথম আক্রান্ত হন, তাহলে মোট ২৫ জন করোনা আক্রান্ত হবেন। যদি আমরা ধরে নিই যে সংক্রমণ তার থেকে বেশি হয় অর্থাৎ চতুর্থ জনের পরও ভাইরাসের যথেষ্ট শক্তি থাকে তাহলে সর্বাধিক ৬২৫ জন আক্রান্ত হতে পারেন।

প্রশ্ন হল গ্রাফ নামার আগে ভারতে ১০ মিলিয়ন বা ১ কোটি মানুষ কী ভাবে আক্রান্ত হলেন? যদিই ধরে নেওয়া হয় যে চতুর্থ আক্রান্তের পর আর ভাইরাসের বিস্তারের ক্ষমতা নেই, তাহলে আর-নটের হিসেব অনুযায়ী ১ কোটি মানুষ আক্রান্ত হতে গেলে প্রথম আক্রান্তের সংখ্যা হওয়া উচিৎ অন্তত ১ লক্ষ। তাহলে মোট আক্রান্ত ১ কোটি হওয়া সম্ভব। সুতরাং অন্তত ১ লক্ষ মানুষ প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত না হলে এই বিপুল সংখ্যাক মানুষের আক্রান্ত হওয়া সম্ভব নয়।

কিন্তু একসঙ্গে এক লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হলেন কী ভাবে? বাইরে থেকে বিমানে আসা করোনা আক্রান্ত যাত্রীদের সংখ্যা অত্যন্ত কম। তাঁদের মাধ্যমে ১ লক্ষ প্রাথমিক করোনা আক্রান্তের এই বিপুল সংখ্যায় পৌঁছন সম্ভব নয়। তাহলে কি ভারতে এমন কোনও পণ্য এসেছে, যার সঙ্গে ঢুকে পড়েছে ভাইরাস? করোনার প্রথম ধাক্কায় যখন ইতালির মতো দেশের টালমাটাল অবস্থা হয়েছিল, তখন এমন প্রশ্নও উঠেছিল যে উহান (Wuhan) থেকে আসা চামড়ার জিনিসের সঙ্গে করোনা ভাইরাস আসেনি তো? শুধু ইতালি নয়, সংক্রমণে জর্জরিত অনেক দেশই এই প্রশ্ন তুলেছিল।

এটা ঠিক না ওটা ঠিক?

ভাইরাসের মিউটেশন (Virus Mutation)-র জন্য সময় প্রয়োজন। রাতারাতি ভাইরাস নিজের রূপ বদলে ফেলতে পারে না। সুতরাং আর-নটের হিসেব যদি সত্যি হয়, তাহলে এই ভাইরাস আর কিছুই না একটা জৈব অস্ত্র (Bio-Weapon)। আর এই অনুমান বা হাইপোথিসিস যদি মিথ্যা হয়, তাহলে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, কী ভাবে একধাক্কায় নীচে নামল করোনার গ্রাফ? এখন এটা বিজ্ঞানী, সরকার ও ভাইরলজিস্ট(Virologist)-দের ওপর যে এই হাইপোথিসিস আদৌ কোনও মানে দাঁড় করাতে পারছে কি না! উত্তর খুঁজতে গেলে মহারাষ্ট্র আর কেরলের পরিসংখ্যানের দিকে তাকাতে হবে। দ্বিতীয় ঢেউ যখন আচমকা ধাক্কা দিল, সেই সময়ে ফিরে গিয়ে দেখতে হবে, কোথা থেকে যাত্রীরা এসেছিলেন? কোথা থেকে আমদানি করা দ্রব্য ভারতে এসেছিল? তবেই এই ধাঁধার উত্তর পাওয়া যাবে।

তৃতীয় ঢেউ না আসতেই জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে। এই জল্পনা কি শুধুই জল্পনা, নাকি তৃতীয় ঢেউয়ের আবহ তৈরি করা হচ্ছে? এর আগের ঢেউগুলির আগেও একইভাবে জল্পনা দানা বেঁধে ছিল। এরপর যদি তৃতীয় ঢেউ (Third Wave of COVID-19) আসে তাহলে আমাদের মনে হবে এটাই তো হওয়ার কথা ছিল। ফলে সত্যিই যদি কোভিড ভাইরাস সাধারণ ভাইরাস না হয়ে অন্য কিছু হয় তাহলেও তা আমাদের প্রশ্নের বাইরেই থেকে যাবে। এটাই কোনও পক্ষ চাইছে না তো?