
বিজ্ঞানীরা জানান, একবার কোনও এক গ্রহাণু এসে আছড়ে পড়েছিল পৃথিবী পৃষ্ঠে। যার প্রভাবে পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিল ডাইনোসররা। তার পরে পেরিয়ে গিয়েছে হাজার হাজার বছর। এই যাবৎকালীন সময়ে, পৃথিবীর বুকে দু-এক টুকরো উলকাপিণ্ড খসে পড়েছে বটে, কিন্তু গ্রহাণু আর আসেনি।

তবে আবার সেই সংকটের মুখে ধরিত্রী। ফের পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে গ্রহাণু '2024 YR4'। চিন জানাচ্ছে, পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়তে এই গ্রহাণুর সময় লাগবে প্রায় ৭ বছর। যার পড়েই ফের প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীরা।

এর আগে যতবার এই বিশ্বের উপর কোনও বিপদের ঘন্টা বেজেছে তখন লড়াই করেছে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশের স্পেস এজেন্সি বা মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রগুলি। এই যেমন ভারতের ইসরো, অ্যামেরিকার নাসা, রাশিয়ার রসকসমস বা চিনের চায়না ন্যাশানাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন।

এইবার যেন উল্টো সুরে গান গাইছে লাল ফৌজের দেশ। পৃথিবীকে বাঁচাতে তাঁদের দেওয়া অদ্ভুত এক বিজ্ঞাপন চোখ কেড়েছে গোটা বিশ্ববাসীর। কী সেই বিজ্ঞাপন?

বড় কাজে সব সময় অভিজ্ঞদের এগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু সেই পথে একেবারেই হাঁটতে নারাজ চিন। অভিজ্ঞতা বাদ দিয়ে, পৃথিবীকে বাঁচাতে তরুণ প্রাণে ভরসা রাখতে চাইছে বেজিং। সেই মর্মেই দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন, 'বিজ্ঞানী চাই'!

'2024 YR4' আটকাতে নয়া বিজ্ঞানী নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে প্রাথমিকভাবে ১৬ জনকে চিহ্নিত করা হবে। তাঁদের মধ্যে থেকে আবার ৩ জনকে বেছে নেওয়া মূল কাজের জন্য। প্ল্যানেটারি ডিফেন্স ফোর্সের জন্য এই বিজ্ঞাপন দিয়েছে চিন। বেধে দিয়েছে যোগ্যতার মাপকাঠিও। কী কী যোগ্যতা থাকাটা বাঞ্চনীয়?

আবেদনকারীদের বয়স ৩৫ বছরের মধ্যে হতে হবে। আস্ট্রো ফিজিক্সে স্নাতক এবং মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে জ্ঞান থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, চিনা প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর দলের প্রতি থাকতে হবে অগাধ আস্থা। তবেই পাবেন বিশ্বকে বাঁচানোর সুযোগ।

এরপরেই উঠছে একাধিক প্রশ্ন। যে ৩ জন প্যানেটারি ফোর্সে সুযোগ পাবে তাঁদের কোন বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে চিন? যাতে তাঁরা মাত্র ৭ বছরে পৃথিবীকে বাঁচানোর জন্য যোগ্য হয়ে উঠবেন? মহাকাশী একটা ছোট্ট সূত্র খুঁজে বার করতে যেখানে বহু বছর লেগে যায়, সেখানে ৭ বছরে কোন ম্যাজিক করবে বেজিং?

যদিও চিনের এই বিজ্ঞাপনে আমল দিতে নারাজ বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, গ্রহাণুর গতিবিধির উপরে অনেক দিন আগে থেকেই নজর রয়েছে রাশিয়া এবং আমেরিকার। এটিকে স্রেফ ভাওতা বাজি বলেই মনে করছেন তাঁরা।

ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ বলছে, এইসব বলে, আড়ালে আড়ালে, মহাকাশ গবেষণা চালাতে চাইছে চিন। নিজেদের বেশিরভাগ প্রোগ্রামকে সেনার কাজে লাগায় বেজিং। প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে একটি অ্যান্টি মিসাইল টেস্ট করেছিল চিন। তারপরে মহাকাশে ছড়িয়ে পড়ে বহু বর্জ্য।

২০২২ সালে নাসা গ্রহাণুর কক্ষপথ বদলের একটি মিশন লঞ্চ করেছিল। বহু বছরের গবেষণার পরে তাঁরা সম্পন্ন করে DART মিশন। নাসার উপগ্রহ গিয়ে ধাক্কা মারে গ্রহাণুতে, ফলে বদলে যায় তার কক্ষপথ। চিনা নবীন বিজ্ঞানীরা কী ভাবে সেই জটিল কাজ সম্পন্ন করবে, তাও মাত্র ৭ বছরে? (সব ছবি - Getty Images)